×

পুরনো খবর

ক্রীড়াঙ্গনে সোনায় মোড়ানো বছর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:৩৫ পিএম

ক্রীড়াঙ্গনে সোনায় মোড়ানো বছর

২০১৯ সালে ভালোমন্দে মিলানো ছিল টাইগারদের সাফল্য। এসএ গেমসে ছেলে এবং মেয়েদের ইভেন্টে স্বর্ণ জয় করেছে  শান্ত-সালমারা।

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে সব ভালো তার শেষ ভালো যার। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা বছরজুড়ে সাফল্য না পেলেও ডিসেম্বরে ১৯ স্বর্ণ জয় করে সব ব্যর্থতা মুছে দিয়েছে। নেপালের কাঠমান্ডু এবং পোখরায় অনুষ্ঠিত ১৩তম এসএ গেমসে বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা ইতিহাস গড়েছে। ২৫ ডিসিপ্লিনে অংশ নিয়ে ১৯টি স্বর্ণ, ৩৩টি রৌপ্য ও ৯০টি ব্রোঞ্জসহ জিতেছে ১৪২টি পদক। তবে এসএ গেমসে এতদিন সেরা সাফল্য ছিল ২০১০ সালে ঢাকায় আয়োজিত আসরে। যেখানে প্রাপ্তি ছিল ১৮ স্বর্ণ, ২৩ রৌপ্য, ৫৬ ব্রোঞ্জসহ ৯৭ পদক। বিদেশের মাটিতে ১৯৯৫ সালে ৭টি স্বর্ণ জিতে বাংলাদেশ। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এবার ১৩তম এসএ গেমসে ১৯টি স্বর্ণ জয়ের পেছনে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেছে আরচারি। এ ইভেন্টে দশে দশ পেয়েছেন রোমান-ইতিরা।

২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক সাফল্যর দিক থেকে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে নারীরা। ১৯ স্বর্ণপদকের মধ্যে ১১টি জয়ে নারীদের ভ‚মিকা ছিল। যার ৬টিতে ছিল মেয়েদের একক কৃতিত্ব। মেয়েরা দলগতভাবে জিতেছে ৫টি স্বর্ণপদক। এছাড়া মিশ্র দ্বৈত ইভেন্টে দুটি স্বর্ণজয়ে ছেলেদের পাশাপাশি অবদান রাখেন নারীরা। ছেলেরা একক ইভেন্টে ৫ ও দলগত ইভেন্টে জিতেছেন ৩টি স্বর্ণপদক। সেরা সাফল্যর কীর্তি গড়ায় আরচারির পর বেশি অবদান ছিল কারাতের। এ ডিসিপ্লিন থেকে ৩টি স্বর্ণপদক আসে আল আমীন, মারজান আক্তার প্রিয়া ও হুমায়রা অন্তরা শিফার হাত ধরে। তার বাইরে ২টি করে স্বর্ণপদক আসে ভারোত্তোলন ও ক্রিকেট থেকে। ভারোত্তোলনে মাবিয়া আক্তার সীমান্তকে নিয়ে আগে থেকেই প্রত্যাশা ছিল। ২০১৬ সালের পর এবারো স্বর্ণ জিতেছেন এ ভারোত্তোলক। জিয়ারুল ইসলামের স্বর্ণপদক আসে অনেকটা প্রত্যাশার বাইরে। এছাড়া ফেন্সিংয়ে ফাতেমা মুজিবের স্বর্ণপদক জয় করা ছিল বড় চমক।

এসএ গেমস ছাড়াও চলতি বছরে সাফল্যর আলো ছড়িয়েছেন হুমায়রা অন্তরা শিফা ও মারজান আক্তার প্রিয়া। প্রথম জন কম্বোডিয়ায় কামুতসুমা ওকোকাই ইন্টারন্যাশনাল কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে দুটি স্বর্ণ ছাড়াও একটি রৌপ্য জয় করেন। এছাড়া ভারতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ওপেন কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে স্বর্ণপদক জয় করেন হুমায়রা অন্তরা শিফা।

রোমান সানার ২০১৯ সালের সাফল্যর পথে যাত্রা শুরু ইসলামিক সলিডারিটি আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে। আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং প্রতিযোগিতায় রিকার্ভ একক ইভেন্টে রৌপ্য জয় করেন এ তীরন্দাজ। পরবর্তী সময়ে নেদারল্যান্ডসে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জেতেন। এ আসর দিয়েই টোকিও অলিম্পিকের টিকেট পান। এরপর সেপ্টেম্বরে ফিলিপাইনে এশিয়া কাপ ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিং (স্টজ-৩) আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপে রোমানের হাত ধরে রিকার্ভ এককে স্বর্ণপদকের পাশাপাশি দলগত বিভাগে রৌপ্য এবং মিশ্র দ্বৈতে ব্রোঞ্জপদক জিতে বাংলাদেশ।

এসএ গেমসে আরচাররা দশ ইভেন্টে দশ স্বর্ণ জয় করে যে রেকর্ড গড়েছে, তা আরো সমৃদ্ধ হতো যদি সাঁতার, অ্যাথলেটিক এবং শুটিং ইভেন্টে লাল-সবুজের ক্রীড়াবিদরা স্বর্ণ জয় করতে পারত। ফুটবলে সারা বছরজুড়ে ব্যর্থ ছিল জেমি ডের শিষ্যরা। এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারেনি জামাল ভূঁইয়ারা।

২০১৯ সালে ভালোমন্দে মিলানো ছিল টাইগারদের সাফল্য। এসএ গেমসে ছেলে এবং মেয়েদের ইভেন্টে স্বর্ণ জয় করেছে শান্ত-সালমারা। ফেব্রুয়ারি-মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরে বড় ধরনের বিপদ থেকে বেঁচে যায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। ১৫ মার্চ শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের একটি মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর বন্দুকধারীর হামলায় ৪৯ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত ৪৮ জন।

হামলার সময় ঘটনাস্থলের ৫০ গজের মধ্যে ছিল তামিম-সৌম্যরা। এরপর তারা সে স্থান থেকে নিরাপদে হোটেলে পৌঁছালেও ঘটনার পর থেকে প্রচণ্ড ট্রমার মধ্যে সময় কাটাতে থাকেন ক্রিকেটাররা। এরপর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ বাতিল করে বাংলাদেশ দলকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। মে মাসে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে যায় মাশরাফি বাহিনী। স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশের মধ্যকার ৩ জাতির এই টুর্নামেন্ট জিতে প্রথমবারের মতো কোনো বহুজাতিক সিরিজে শিরোপা জেতে টাইগাররা। ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষ হতেই বেজে ওঠে বিশ্বকাপের দামামা। জুন-জুলাইয়ে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে অনুষ্ঠিত ২২ গজের এই বিশ্বযুদ্ধে ৮ ম্যাচে মাত্র ৩ জয়ে ১০ দলের মধ্যে পয়েন্ট টেবিলে আটে থেকে বৈশ্বিক আসর শেষ করে টাইগাররা। বিশ্বকাপে শিষ্যদের দৈন্য পারফরম্যান্সের কারণে চাকরি হারান হেড কোচ স্টিভ রোডস। পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ, স্পিন বোলিং কোচ সুনিল যোশি ও ফিজিও তিহান চন্দ্রমোহনের সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তির মেয়াদও তখনই শেষ হয়।

অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ১৩ দফা দাবিতে ক্রিকেটারদের ডাকা ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট। অবশ্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে খুব বেশি সময় নেয়নি। দুদিন পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেটারদের দাবি-দাওয়া মেনে নিলে অচলাবস্থার নিরসন ঘটে।

ক্রিকেটারদের ধর্মঘট শেষের সপ্তাহ না পেরুতেই অনাকাক্সিক্ষত এক সংবাদ পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নাড়িয়ে দেয়। জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তব পাওয়ার পর তা গোপন করায় বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি। তবে দোষ স্বীকার করায় এর মধ্যে এক বছরের শাস্তি স্থগিত থাকবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App