×

জাতীয়

দূষিত বাতাসে ভাসছে ঢাকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৪২ এএম

দূষিত বাতাসে ভাসছে ঢাকা
দূষিত বাতাসে ভাসছে ঢাকা

পৌষের বৃষ্টিতে শীতের মারকাটারি ব্যাটিং চলছে। এর ফলে তাপমাত্রাও কমছে। রাজধানীর চারপাশের ইটভাটাগুলো চালু থাকার পাশাপাশি নির্মাণকাজও বহাল। আর এতেই রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের শহরগুলোতে বাতাসের দূষণ বেড়েই চলেছে। বিশে^র দুটি বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার মতে, রাজধানী ঢাকার বাতাস গত ৩ দিন ধরে মারাত্মক দূষিত হয়ে বইছে। তবে রাজধানীর চেয়েও খারাপ অবস্থা মানিকগঞ্জ জেলার। সেখানকার বাতাসে দূষিত বস্তুকণার পরিমাণ ঢাকার চেয়েও বেশি।

বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়াল এবং এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, গতকাল ঢাকায় বাতাসে দূষণের মাত্রা ছিল ২৫৯। ৩১৬ মানমাত্রা নিয়ে এ দিন দিল্লির বাতাস বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল। সংস্থা দুটোর মতে, বিশে^র প্রধান শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার বায়ুতে দূষণের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। গতকাল শনিবার বিকেলেও বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। তালিকার শীর্ষস্থানে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি রয়েছে। লাহোর আর ঢাকার বাতাসে দূষণের খুব বেশি হেরফের নেই।

ঢাকায় বাতাসের গড় মান আগের দিন শুক্রবার ছিল ২৬৬ এবং ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ছিল ৩৩০। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় বাতাসের মানমাত্রার সূচক গিয়ে পৌঁছায় ৪০০। গতকাল ঢাকায় আজিমপুরে বাতাসের মানমাত্রার সূচক ছিল ১৭৩, ইকবাল রোডে ১৭৩, বারিধারায় ২৫৪ এবং ধানমন্ডিতে ২৭৮, মানিকগঞ্জে ২৯২, সাভার ও টঙ্গী এলাকায় ২৫৮ এবং কেরানীগঞ্জ এলাকায় ১৭১।

কয়েক দিনের মধ্যে শহরে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে আবহাওয়ার পরিবর্তনকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালের ১০টি স্বাস্থ্যঝুঁকি চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে এক নম্বর ঝুঁকি হলো বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন। বায়ুদূষণের তালিকায় পুরো বছরজুড়ে প্রথম তিনের মধ্যেই ছিল ঢাকা। সরকার ঢাকার বায়ুদূষণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

জানতে চাইলে বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেছেন, তাপমাত্রা কমার পাশাপাশি কুয়াশাও বেড়ে অত্যন্ত নিচে নেমে এসেছে। ঘন কুয়াশার ভেতরে ধুলাবালি ঢুকে জমে থাকছে। কুয়াশা না থাকলে এই ধুলাবালি চলে যেত। কিন্তু ধুলাবালি কুয়াশার ভেতরে ঢুকে জমে থাকায় ভারী হয়ে উঠছে। এই ভারী হয়ে ওঠার পর থেকেই বাতাসের দূষণ শুরু হয়। এছাড়া গত কয়েক দিনে ধূলিকণার মাত্রাও স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়েছে। এর ফলে বেড়েছে দূষণের মাত্রাও। গত বৃৃহস্পতিবার থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দূষণের মাত্রা বেড়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এই দূষণের ফলে বাইরে হাঁটলে কষ্ট হবে। ধুলাবালি নাক-মুখ দিয়ে শরীরের ভেতরে ঢুকবে। তখন বমিবমি ভাব হবে। মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানা উপসর্গে ভুগবে। গতকালও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুধু ধুলাবালি। সকাল থেকে বিকেল বা রাত-কোনো সময়ই এই দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্তি নেই। আবহাওয়া শুষ্ক হওয়া এবং শীত জেঁকে বসায় ধুলার দূষণও বাড়ছে। এয়ার ইনডেক্স কোয়ালিটির সূচকে গতকালও ঢাকার বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ ছিল পিএম ২ দশমিক ৫। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। এই মান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিক্ষারক।

ঢাকার বায়ুদূষণের এই চিত্র সরকারি সংস্থা পরিবেশ অধিদপ্তরের নিজেদের পর্যবেক্ষণেও উঠে এসেছে। এছাড়া বিশে^র প্রায় বেশির ভাগ শহরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দূতাবাস ও কার্যালয়ে বায়ুমান পর্যবেক্ষণ যন্ত্র রয়েছে। ওই যন্ত্রে শহরগুলোর বায়ুমান প্রতি ঘণ্টায় হালনাগাদ করা হয়। ওই তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে বিশে^ সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ঢাকা ছিল এক নম্বরে। ওই সময় ঢাকার বাতাসে দূষণের মানমাত্রা ছিল ৪০০। ২৭ ডিসেম্বরে ২৬৬ এবং গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ২৫৯।

তবে ঢাকায় দূষণে এবার আরেক বিপদ নতুন মাত্রা পেয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজ, তীব্র যানজট, মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযান ও শিল্পকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ভারী ধাতু ধুলার সঙ্গে যোগ হচ্ছে। ঘরের বাইরে তো বটেই, বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ ও খেলার মাঠেও ভর করছে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে নগরবাসী, বিশেষ করে শিশুরা। শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে শরীরে বাসা বাঁধছে ক্যানসারসহ রোগবালাই।

গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার রাস্তার ধুলায় সর্বোচ্চ মাত্রায় সিসা, ক্যাডমিয়াম, দস্তা, ক্রোমিয়াম, নিকেল, আর্সেনিক, ম্যাঙ্গানিজ ও কপারের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মাটিতে যে মাত্রায় ক্যাডমিয়াম থাকার কথা, ধুলায় তার চেয়ে প্রায় ২০০ গুণ বেশি পাওয়া গেছে। আর নিকেল ও সিসার মাত্রা দ্বিগুণের বেশি। দেশের বিভিন্ন স্থানে মাটি ও পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের ঝুঁকি আগেই ছিল, এবার ঢাকার রাস্তার ধুলার মধ্যেও নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক শনাক্ত করেছে গবেষক দল। এসব ভারী ধাতু কণার আকার এতটাই সূ² যে তা মানুষের চুলের চেয়ে ২৫-১০০ গুণের বেশি ছোট। ফলে খুব সহজেই এসব সূ²াতিসূ² বস্তুকণা ত্বকের সংস্পর্শে আসছে, শ্বাস-প্রশ্বাস, খাদ্য ও পানীয়র মাধ্যমে মানুষের শরীরেও প্রবেশ করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App