×

সারাদেশ

ঝিনাইদহের কমলা ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৫:০৯ পিএম

ঝিনাইদহের কমলা ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে
ঝিনাইদহের কমলা ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে
ঝিনাইদহের কমলা ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে
ঝিনাইদহের কমলা ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে
ঝিনাইদহের কমলা ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে কমলা চাষে সফলতা পেয়েছে রফিকুল ইসলাম নামের এক কৃষক। এবছরই প্রথম তার বাগানে এ কমলা লেবু ধরেছে। চাষ হওয়া এই লেবুটি দার্জিলিং এর কমলা বলে স্থানীয় কৃষি অফিস জানিয়েছে। দেশের সমতল ভুমির মধ্যে এবারই প্রথম এই কমলা চাষের সু-সংবাদ পাওয়া গেল বলেও জানায় কৃষি অফিস। গাছে ঝুলে থাকা দৃষ্টিনন্দন এই কমলা খেতেও বেশ সুস্বাদু। বাজারের কিনতে পাওয়া লেবুর থেকে সাইজ ও স্বাদ অপেক্ষকৃত ভালো। ইতিমধ্যে তার বাগান পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তর সহ প্রশাসনের নানা পর্যায়ের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে সম্ভাবনাময় এ ফলের চাষ সারাদেশে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তর। বাগানটির অবস্থান ঝিনাইদহ শহর থেকে ৬৪ কিলোমিটার দূরে মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী স্বরুপপুর ইউনিয়নের চাপাতলা গ্রামে। রফিকুলের এই কমলা বাগান থেকে ভারতীয় সীমান্ত মাত্র ৪০০ গজ দূরে। এই মাঠ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদীই মূলত ভারত-বাংলাদেশর মধ্যে বিভক্তির রেখা টেনে দিয়ে গেছে। রফিকুল ইসলাম ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার স্বরুপপুর ইউনিয়নের চাপাতলা গ্রামের আইনুদ্দীন মন্ডলের ছেলে। তিন ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে মেজ রফিকুল ইসলাম। রফিকুল ইসলাম বেশ আগে থেকে নার্সারী ব্যবসার সাথে জড়িত। তার মাঠে চাষযোগ্য কোন জমি না থাকলেও সম্প্রতি কমলা বিক্রির টাকায় ১০ কাঠা মাঠান জমি কিনেছেন। রফিকুল ইসলামের বর্গা নিয়ে চাষ করা চার বিঘা জমিতে দার্জিলিং জাতের কমলার গাছ রয়েছে ১২০ টি, ৩০টি চায়না জাতের কমলা ও ৫০০ টি মাল্টা লেবুর গাছ রয়েছে। কমলা চাষে আশাতীত সফলতা পেয়ে চলতি বছর আরো ৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে এই দার্জিলিং জাতের কমলা চাষ করেছেন। তার এই কমলা চাষের সফলতা দেখে এলাকার অনেক চাষী তার কাছ থেকে চারা কিনে চাষ শুরু করছেন। এছাড়া প্রতিদিনই শত শত দর্শনার্থীরা রফিকুলের বাগানে কমলা দেখতে ভিড় জমাচ্ছে। সরেজমিনে রফিকুল ইসলামের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, দার্জিলিং জাতের কমলার গাছে দৃষ্টিনন্দন শত শত ফল ধরে আছে। হাত বাড়ালেই তা ধরা যাচ্ছে। হালকা হলুদ ও গাড় হলুদ রঙের কমলা সবুজ পাতার মধ্যে ঝুলে থাকায় তা ছবির মতো দেখা যাচ্ছে। সব থেকে বেশি ধরেছে চায়না কমলার গাছে। গাছে ধারণ ক্ষমতার বেশি কমলা ঝুলে থাকায় তা ধরে রাখতে বাশের ঠেকনা দেওয়া হয়েছে। বাগানে আসা দর্শনার্থীরা এদেশের মানুষ আগে কখনোই দেখিনি বলেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন। কমলা বাগানের মালিক রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, যে জমিতে সে দার্জিলিং ও চায়না জাতের কমলা এবং মাল্টার চাষ করেছেন, সেখানে আগে পেয়ারার চাষ ছিল। তিন বছর আগের কথা, ভারত থেকে ২০০ টাকা করে কমলা ও ১৪০ টাকা দরে মাল্টা লেবুর চারা কিনে রোপন করেন। গত তিন বছরে চারা ক্রয়, রোপন এবং বেড়া তৈরিসহ পরিচর্যায় প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এবছরই প্রথম ফল আসার পর তা বিক্রি করেছেন। দার্জিলিং এর কমলা কেজি প্রতি ১২০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এ পর্যন্ত সাড়ে সাত লাখ টাকার কমলা ও মাল্টা লেবু বিক্রি করেছেন। এখনো প্রায় দুই লাখ টাকার কমলা গাছে ধরে আছে। এছাড়া এখান থেকে কলম পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা বিক্রি করেছেন প্রায় ৫ লাখ টাকা। ব্যপারীরা বাগান থেকে কমলা কিনে নিয়ে গেছে। ব্যপারী আগামির এক বছরের জন্য ২০ লাখ টাকায় বাগান কিনে নিতে চাচ্ছে কিন্তু আমি রাজি হয়নি, বলছিলেন কৃষক রফিকুল ইসলাম। কমলা বাগান পরিচর্যা নিয়ে রফিকুল ইসলাম জানান, কমলার বাগান করতে তেমন কোন কষ্ট করতে হয় না। তবে জমির চারপাশে ভালো করে বেড়া তৈরি করতে হয়। ৫ বছর পর একটি গাছ ফল ধরার জন্য পরিপূর্ণতা লাভ করে। প্রতিটি গাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত ভালোভাবে ফল পাওয়া যাবে। এছাড়া অনাবৃষ্টির সময়ে গাছে সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। আগাছা পরিস্কার রাখতে হয়। গাছে ফল আসলে ভোমরা ও মাছিসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে গেলে বাড়তি নজরদারি করতে হয়। মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসান আলী ও কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার অমিত বাগচী রফিকুলের চাষ করা কমলার স্বাদ ভালো উল্লেখ করে জানান, আমরা চেষ্টা করছি সাম্ভাবনময় এ চাষকে সম্প্রসারণ করতে। ইতিমধ্যে অনেক কৃষক এই কমলা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমরা তাদের সাধ্যমত সহযোগীতার চেষ্টা করছি। নিয়মিত সরেজমিন তাদের সাথে যোগাযোগ করছি। সম্প্রতি রফিকল ইসলামের এই কমলা বাগান পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ উইং এর পরিচালক ড. আলহাজ উদ্দীন আহাম্মেদ। প্রশিক্ষণ উইং এর এ কর্মকর্তা জানালেন, আমাদের দেশের পাহাড়ী কিছু এলাকায় কমলা উৎপাদন হয় বলে জানা যায়। কিন্তু সমতল ভুমিতে বানিজ্যিকভাবে দার্জিলিং জাতের কমলার চাষ এবারই প্রথম। তিনি বলেন, রফিকুলের বাগানে উৎপাদিত কমলা খেতে বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। ফলের আকারও তুলনামুলক বড়। তাছাজা প্রতিটি গাছে ধরেছে অনেক। সাম্ভাবনাময় এ কমলার চাষ বানিজ্যিকভাবে দেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশের কৃষক, অন্যদিকে পুষ্টি চাহিদা পুরনে বিরাট ভুমিকা রাখবে বলে যোগ করেন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App