×

অর্থনীতি

কৃষকের স্বার্থে ৪ মাস পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:০৬ পিএম

কৃষকের স্বার্থে ৪ মাস পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ

১৬ থেকে ১৭ লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি ৮ থেকে ৯ লাখ টন আমদানি করা হয়

পেঁয়াজের দাম দুর্বিষহ করে তুলেছে ক্রেতাদের। সরকার নানা পদক্ষেপ সত্তে¡ও কমছে না পেঁয়াজের দাম। জরুরিভিত্তিতে কয়েকটি দেশ থেকে উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আমদানি করা হলেও ক্রেতাদের নাগালের বাইরে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যটি। দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। ১৬ থেকে ১৭ লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি ৮ থেকে ৯ লাখ টন আমদানি করা হয়। তবে কৃষকরা পেঁয়াজের দাম পেলে বাকি ৮ থেকে ৯ লাখ টন পেঁয়াজ বাড়তি উৎপাদন করা সম্ভব। মূলত পেঁয়াজ হার্ভেস্টিং সময় (পেঁয়াজ উত্তোলনকালীন) কৃষকেরা দাম পান না। তাই পেঁয়াজ উত্তোলনকালীন চার মাস বিশেষ করে এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই মাসে সব ধরনের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকবে। যাতে করে কৃষকরা পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পান এবং পেঁয়াজ চাষে উৎসাহী হন। চার মাস পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং দেশে পেঁয়াজের সংকট থাকবে না বলে মনে করে কৃষি মন্ত্রণালয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের ব্যাপারে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি। চার মাস পেঁয়াজ বন্ধের বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেছেন। আগামী বছরেই এ বিষয়ে আইন পাস হবে। এবং নতুন বছরের এপ্রিল থেকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে বলে নিশ্চিত করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কৃষক বাঁচাতেই পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এটা একটা বড় সিদ্ধান্ত।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ বছর পেঁয়াজ অনেক অস্থিরতা তৈরি করেছে। পেঁয়াজ নিয়ে নতুন করে সংকট চায় না। আমরা পেঁয়াজের স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করব। বর্তমানে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। আমরা বিশ্বাস কৃষক দাম পেলে ৩০ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন সম্ভব। তাই হার্ভেস্টিং সময়ে আর পেঁয়াজ আমদানি নয়। বাণিজ্যমন্ত্রীকে এ বিষয়ে বলেছি তিনিও নীতিগত সমর্থন দিয়েছেন। আশা করছি নতুন বছর থেকে চার মাস পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকবে। এতে কৃষকও বাঁচবে দেশের মানুষও বাঁচবে। পেঁয়াজের দাম কৃষক কিছুটা বেশি পাবে তবে আমাদের কখনো ২৫০ টাকায় পেঁয়াজ খেতে হবে না। আমরা পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো। কোনো দেশের প্রতি চেয়ে থাকব না।

পেঁয়াজ আমদানির ৯৫ শতাংশের বেশি আসে ভারত থেকে। যেমন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট আমদানির ৯৫ শতাংশ পেঁয়াজ ভারত থেকে এসেছে। এরপরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০০ শতাংশ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ পেঁয়াজ ভারত থেকে এসেছে। এর পাশাপাশি চীন, মিসর, পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে সামান্য পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। চলতি বছরের গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত প্রতি টন পেঁয়াজের দাম ৮৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। চলতি বছরে দেশের বাজারে ৩০০ টাকায় পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বাড়ে।

সারা পৃথিবীর ২৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ পেঁয়াজ চীনে উৎপাদিত হয়। এর পরিমাণ ২৩৯ লাখ ৮ হাজার টন। এর পরেই ভারতে ১৯৪ লাখ ১৫ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। যা বিশ্বে মোট উৎপাদনের ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এরপরেই রয়েছে মিসর, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, তুরস্ক, রাশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ব্রাজিল। বিশ্বে পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবদান মাত্র ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। উৎপাদন বাড়লেও দ্রুত জনসংখ্যা বাড়ায় মূলত বেশি পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। অধিকাংশ পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করে বাংলাদেশ।

বিশ্বে পেঁয়াজ রপ্তানিতে শীর্ষে ভারত। এরপরেই রয়েছে মিয়ানমার, আফগানিস্তান, মিসর, তুরস্ক, চীন, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তান। বাংলাদেশে ১৩ লাখ পরিবার পেঁয়াজ চাষের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশের প্রায় সব জেলাতেই পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ হয়। দাম পাওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের মানসম্মত বীজ ও সহজ শর্তে ঋণ দিলে আমদানি নির্ভরতা কমবে। চলতি বছরে দাম পাওয়ার কারণে কৃষকরা এক জমিতে দুইবার পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। অনেক জেলাতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের জমিতে নতুন করে পেঁয়াজ চাষ করছেন। এ উৎসাহ অব্যাহত থাকলে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কৃষি গবেষকরা। শুধু শীতকাল নয়, পেঁয়াজের দাম পেলে কৃষকরা গ্রীষ্মেও চাষ করবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App