বিশ্বব্যাপি শরণার্থীদের ঘরে ফেরানোর চেষ্টা
nakib
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:৫৬ পিএম
২০১৯ সাল বছরটি কেটেছে শরনার্থী ও অভিবাসিদের ঘরে ফেরানোর চেষ্টার মধ্য দিয়ে। এ সময় তুরস্ক থেকে সিরিয়দেরকে এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের আর ইউরোপে বিভিন্ন দেশ থেকে পাড়ি জমানো অভিবাসিদের নিজ নিজ দেশে ফেরানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। পাকিস্তান দেশটি থেকে আফগান আশ্রয়প্রর্থীদের দেশে ফিরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন দায়ি দেশগুলো তাদের দেশের অভ্যন্তরে সহিংতা না কমানোয় পরিবেশ আগের চেয়ে কোন পরিবর্তন হয়নি।
এ বছর তুরস্ক বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। ৩০ লাখ ৭০ হাজার সিরিয়ানকে সামলে নিয়ে রিতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে দেশটিকে। এ সময়ে কয়েকবার দেশটি সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে নিরাপদ একালা গড়ে তাদেরকে পুর্নবাসনের কথা জানালেও এখনো তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
গত জুলাই মাসে বাংলাদেশের কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বিশাল শরনার্থী ক্যাম্পে আসে মিয়ানমার কর্মকর্তারা তরে দেশটিতে এখনো রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতা বন্ধ না হওয়ায় প্রত্যাবাসন কার্যক্রম এখনো শুরু করা যায়নি। তবে ডিসেম্বরে হ্যাগের আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানির পর দেশটি চাপে পড়ে। ফলে অধিকার হারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার দাবি আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিধ্বনিত হয়। তবে মিয়ানমার থেকে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আবাসনের ব্যবস্থা করে প্রাকৃতিক ক্ষতিসহ আর্থিক ও নিরপত্তা নিয়ে শংকায় আছে বাংলাদেশ। তবে এখনো তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়রি দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি না হওয়ায় এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন বন্ধ না হওয়ায় প্রত্যাবাসন নিয়ে খুব বেশি আনশাবাদিও হওয়া যাচ্ছে না। অন্য দিকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বিকার করা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে এখনো কোন সমাধা হয়নি।
পাকিস্তান তাদের দেশে আশ্রয় নেয়া অফগানিস্তানের প্রায় ১৪ লাখ আশ্রয়প্রার্থীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিভিন্ন পথ খুঁজতেছে। তবে তাদের অনেকে পাকিস্তানে বসতি গেড়েছেন যরা আর নিজ দেশে ফিরতে চায় না। দেশটির অনেক নাগরিক ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও স্থায়িভাবে বসবাসের চেষ্টা করে যাচ্ছে। ২০০৯ সাল জাতিসংঘ সহায়তা মিশনের পর থেকে দেশটিতে অসংখ্য বেসামরিক লোকজন নিহত হয়।
লিবিয়াতে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অবস্থা আরো সুচনীয়। সেখানে নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা, খদ্যভাব ও অবস্থান পরিবর্তনে অসহযোগিতাসহ নানারকম অভিযোগ পাওয়া যায়। যারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় তাদেরকে আবার কোস্ট্গার্ডের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হতো ইউরোপিয় ইউনিয়নের মাধ্যমে।
২০১৯ সালে প্রায় ১,২৪৬ জন অভিবাসী সমুদ্র পথে পালানোর সময় মৃত্যুবরণ করে যেখানে এআগের ৫ বছরে মৃতের সংখ্যা ছিল ১ হাজার জন। ফলে লিবিয়া থেকে ইউরোপে পাড়ি দেয়া সমুদ্র পথকে মৃত্যু উপত্যাকা আখ্যা দেয়া হয়।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থনা করা আইনগতভাবে বৈধ হলেও ট্রাম্ট প্রশাসন কাগজপত্র ও ডিএনএ সংগ্রহ করার নামে মেক্সিকান অভিবাসিদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সারা বিশ্বব্যাপি আশ্রয়প্রার্থীদের তাদের নিজে দেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা চালানোর মাধ্যমে অনিশ্চয়তার একটি বছর কেটে গেলেও অগ্রগতি না হওয়ায় এ সমস্যা আরো ঘনিভূত হতে পারে সামনের বছরে।