×

সারাদেশ

রংপুর অঞ্চলে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্তের আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৩৭ এএম

রংপুর অঞ্চলে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্তের আশঙ্কা

দেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ায় চলতি শীত মৌসুমে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েক দিন ধরে এ জেলায় সূর্যের লুকোচুরির পাশাপাশি উত্তরের হিমালয় থেকে বয়ে আসা পাহাড়ি হিমেল হাওয়ায় তাপমাত্রা অনেকটাই ওঠানামা করছে। এ ছাড়া দিনাজপুরের তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ৩ দিনে তাপমাত্রা আরো কমে যেতে পারে। এ ছাড়া শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চলগুলোর মধ্যে নীলফামারীর ডিমলায় ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি, রংপুরে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি, সৈয়দপুরে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে টানা কুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডায় রংপুর অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা। বহু বীজতলার চারা হলুদ ও লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। এ অবস্থা আরো কয়েক দিন চললে বীজতলা নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। নিচে এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) : তেঁতুলিয়ায় গতকাল বুধবার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েক দিন ধরে এ জেলায় সূর্যের লুকোচুরির পাশাপাশি উত্তরের হিমালয় থেকে বয়ে আসা পাহাড়ি হিমেল হাওয়ায় তাপমাত্রা অনেকটাই ওঠানামা করছে। আর এতে করে ব্যাহত হচ্ছে জনজীবন। পৌষের এ তীব্র শীত বিশেষ করে ছিন্নমূল মানুষকে কর্মহীন করে ফেলেছে। দিনমজুর অভাবী মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পারায় একেবারে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। শীতবস্ত্রের পাশাপাশি এসব অভাবী মানুষের জন্য এ মুহূর্তে খাদ্য সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে সচেতন মহল।

আবহাওয়া অফিস বলছে, গত বছর (২০১৮) ডিসেম্বরের এই দিনে তেঁতুলিয়ায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে চলতি বছর ও চলতি মৌসুমে ৬ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৬ থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে হালকা বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে এবং আগামী বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের দিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস রয়েছে। সরেজমিন গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একটু গরম উষ্ণতা পেতে রোদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন সাধারণ ও নি¤œ আয়ের মানুষ। সূর্যের মুখ দেখা যাওয়ায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে লোকজনের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে সন্ধ্যার পর থেকে সকাল ৮- ৯টা পর্যন্ত কুয়াশার পরিমাণ একটু বেশি থাকছে। তবে দিনের বেলা কুয়াশা তেমন না থাকলেও উত্তর থেকে বয়ে আসা শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছেন মানুষ। অব্যাহত ঠাণ্ডায় শীত ও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশুসহ বয়স্করা। তবে বিকেল ৩টায় আর্দ্রতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মমকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, বুধবার সকাল ৯টায় দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দুপুর ১২টা রেকর্ড করা হয় ১৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। তিনি আরো জানান, গত

কয়েক দিন আকাশে মেঘ ছিল। আকাশে মেঘ থাকলে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। এখন মেঘ কেটে যাওয়ায় দিনে রোদের দেখা মিলছে আর রাতের তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। পঞ্চগড় জেলা হিমালয়ের একদম কাছে হওয়ায় এখানে শীত প্রতি বছর একটু আগে আসে এবং পরে যায় বলে এই কর্মকর্তা জানান।

রংপুর : কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন নি¤œ আয়ের মানুষ। শীতজনিতে রোগে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর আগে দেশের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। আগামী ৩ দিনে তাপমাত্রা আরো কমে যেতে পারে। তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে জনদুর্ভোগও।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রংপুরে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও শীতের তীব্রতা কমেনি। কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। তীব্র শীতের কারণে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, এ বিভাগের ৮ জেলায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ নিউমোনিয়া-শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৯ হাজারেও বেশি যার অধিকাংশই শিশু। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন বলে জানান তিনি।

রংপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে আরো একটি শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রংপুরে টানা কুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা। বহু বীজতলার চারা হলুদ ও লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। এ অবস্থা আরো কয়েক দিন চললে বীজতলা নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই অঞ্চলের রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামরী ও গাইবান্ধা জেলায় ২৩ হাজার ২০১ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বীজতলা করা হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে তীব্র ঠাণ্ডার কারণে অনেক স্থানের বীজতলার চারা হলুদ বর্ণ হয়ে শুকিয়ে যেতে বসেছে।

কৃষকরা বলছেন, বীজতলা রক্ষায় প্রতিষেধক দিয়েও কাজ হচ্ছে না। কিছুতেই বীজতলা সজিব করা যাচ্ছে না। বীজতলা নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় বীজতলা করা অনেকের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে বলে কৃষকরা জানান। তাই তারা বীজতলা রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, তারা বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা ও সালফারযুক্ত ওষুধ ছিটানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ছাড়া বীজতলায় জিপসাম ও ইউরিয়া দিতে বলা হচ্ছে।

দিনাজপুর : জেলায় শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে। গতকাল বুধবার ভোর ৬টায় দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলিসিয়াস রেকর্ড করেছে।

দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জুর রহমান জানান, ভোর ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা ব্যাপক ছিল। দিনের বেলা দুপুর ১২টায় সূর্যের আলো দেখা গেছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত সূর্যের আলো থাকলেও এরপর আবার কুয়াশায় আচ্ছন্ন হওয়ায় শীতের তীব্রতা আবার বেড়ে যায়। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলিসিয়াস।

এদিকে শীতের কারণে শীতার্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ শীতের কারণে কাজ করতে পারছেন না। জেলার সব কয়েকটি রুটে ঘন কুয়াশা থাকার কারণে যানবাহনগুলো দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। শীতার্ত জনসাধারণের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলার বিভিন্ন সংগঠন, ব্যবসায়ী সমাজ, বেসরকারি ব্যাংক-বিমা ও সরকারি দপ্তর। গত ৭ দিনে জেলায় বেসরকারিভাবে ২৫ হাজার পিস কম্বল এবং ২০ হাজার পিস বিভিন্ন শিশু পোশাক দরিদ্র জনসাধারণের জন্য বিতরণ করা হয়েছে।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম জানান, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ৬১ হাজার ৬০০ পিস এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ২২ হাজার ১২০ পিস কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নতুন করে ১ লাখ পিস শীতবস্ত্রের চাহিদায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে ফ্যাক্স বার্তা পাঠানো হয়েছে।

রাজশাহী : পিছু ছাড়ছে না শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল বুধবার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে টানা ৫ দিন ধরে রাজশাহীর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। ফলে মানুষের পাশাপাশি এখন পশুপাখিরাও শীতে কাবু হয়ে পড়েছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহীতে গতকাল সূর্যের দেখা মিলেছে।

২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। আগামী দুদিন তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও পরের ৫ দিন হালকা বৃষ্টির সঙ্গে মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহীতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২১ ডিসেম্বর তাপমাত্রা ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে সর্বশেষ গতকাল বুধবার সকালে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন পর্যন্ত এটিই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

টানা শৈত্যপ্রবাহের ও ঘন কুয়াশার কারণে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের তাপ থাকছে না। তাই হাড় কাঁপানো শীতে কাবু হয়ে পড়ছেন শহরের পথেঘাটে থাকা ছিন্নমূল মানুষ। দিন-রাত সমানতালে বইছে হিমালয় ছুঁয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাস। এতে রাতে খোলা জায়গায় থাকা মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসন কম্বল বিতরণ শুরু করলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন শীতার্ত মানুষ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App