×

জাতীয়

তাপস কি প্রার্থী হচ্ছেন?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৪৬ এএম

তাপস কি প্রার্থী হচ্ছেন?
৩০ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। ইভিএম পদ্ধতিতে এবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। গতকাল থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে উত্তর ও দক্ষিণের মোট ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। দক্ষিণে ৪ জন, উত্তরে ৪ জন। ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম তোলা ও জমা দেয়া যাবে। ২৮ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দুই সিটিতে মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ। উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম পুনরায় মনোনয়ন নিলেও, দক্ষিণের সাঈদ খোকন এখনো নেননি। তবে গতকাল ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ও শেখ পরিবারের আত্মীয় ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দক্ষিণ সিটিতে মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। তার পক্ষে একটি প্রতিনিধিদল ধানমন্ডি কার্যালয় থেকে ফরম নেন। এদিকে ঢাকা দক্ষিণে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করায় গতকাল বিকেল থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সূত্রপাত ঘটতে শুরু করে। সবার মধ্যে কৌত‚হল, তাহলে কি দক্ষিণে মেয়র পদে প্রার্থী পরিবর্তন করবে আওয়ামী লীগ? হানিফপুত্র বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন কি এবার দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন? যদি তাকে মনোনয়ন না দেয়া হয়, তাহলে এর কারণ কি? আর সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে মেয়র পদে তাপস কেনইবা প্রার্থী হচ্ছেন? এদিকে গতকাল প্রথম দিন সাঈদ খোকন মনোনয়ন ফরম না তোলায় অনেকের মধ্যেই এও গুঞ্জন রয়েছে, দলের হাইকমান্ডের সিগন্যাল তার বিপক্ষে? আর সিগন্যাল পেয়েই কি ব্যারিস্টার তাপস ফরম নিয়েছেন। সাঈদ খোকন জানান, আজ বৃহস্পতিবার সশরীরে ধানমন্ডির কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন আর ব্যারিস্টার তাপসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যক্তিগত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার ঘনিষ্ঠ একাধিকসূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সিগন্যাল পেয়েই প্রার্থী হচ্ছেন তাপস। গতকাল মনোনয়ন ফরম তোলার আগে ধানমন্ডি, কলাবাগান ও হাজারীবাগানের দলীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা ছাড়াও দক্ষিণের কয়েকজন কাউন্সিলদের সঙ্গে পরামর্শ করেন তাপস। এরপর তার পক্ষে মনোনয়ন ফরম নেন তাপসের মামা মাসুদ সেরনিয়াবাত। এ খবর গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সবার মধ্যে নানা কৌত‚হল শুরু হয়। তাদের ধারণা, দলের সিগন্যাল ছাড়া ব্যারিস্টার তাপস মনোনয়ন ফরম তোলার মতো ব্যক্তি নন। সুতরাং দলের সিগন্যালেই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ধানমন্ডি থানার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ কামাল ভোরের কাগজকে বলেন, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সৎ ও স্বচ্ছ ইমেজের মানুষ। তিনি যোগ্য। সর্বসাধারণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা আছে। আমরা তার পক্ষে দক্ষিণের মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম নিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দেবেন। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আমরা সবাই নেত্রীর নির্দেশ মেনে তার পক্ষে কাজ করব এবং বিপুল ব্যবধানে নৌকাকে বিজয়ী করব। এদিকে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা পৃথক পৃথকভাবে সম্প্রতি ব্যারিস্টার তাপসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। জানতে চেয়েছেন তার মনোভাব। কেউ কেউ তাকে প্রার্থী হওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরান ঢাকার এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ভোরের কাগজকে জানান, আমি ব্যক্তিগভাবে ব্যারিস্টার তাপসের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। তার প্রার্থিতার বিষয়ে তিনি আমাদেরকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিনি প্রার্থী হবেন, না চাইলে হবেন না। তবে নির্বাচন করার বিষয়ে তার মানসিক প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান এই কাউন্সিলর। অন্যদিকে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের সমর্থনেই খোকন পুনরায় প্রার্থী হচ্ছেন। তাদের বিশ্বাস, দল থেকে তিনি মনোনয়নও পাবেন। সম্প্রতি সবুজবাগের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে মেয়র খোকন ফের নিজের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। নিজেকে সফল দাবি করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটির উন্নয়নে আমি ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। এসব কাজ শেষ করতে চাই। ইনশাল্লাহ নেত্রী আমাকে আবার মনোনয়ন দেবেন। আমি ঢাকাবাসীর সহযোগিতা চাই।’ গত সোমবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ঢাকা মহানগরীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয় দুই সিটি। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে সাঈদ খোকন নিজের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে ফের তার আত্মবিশ্বাসের কথা তুলে ধরেন। একই আশাবাদ ব্যক্ত করেন উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামও। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে বলেন, দলীয় মনোনয়ন ফরম আমরা ছেড়েছি। দলের সবার ফরম তোলার অধিকার আছে। ২৭ তারিখ পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেয়া যাবে। ২৮ তারিখ সন্ধ্যায় গণভবনে মনোনয়ন বোর্ডের সভা হবে। সেখানেই আমরা প্রার্থী চূড়ান্ত করব। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস দলের কোনো সিগন্যাল পেয়েছেন কিনা, জবাবে তিনি বলেন, এখানে সিগন্যালের কোনো বিষয় নেই। বোর্ডের সভাতেই প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। সভায় কাউন্সিলর পদে কীভাবে প্রার্থী নির্ধারণ করা যায়, সে ব্যাপারেও আলোচনা হবে বলে জানান ফারুক খান। দক্ষিণে ৪, উত্তরে ৪ প্রার্থীর মনোনয়ন সংগ্রহ : এদিকে গতকাল প্রথম দিন ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে লড়তে মোট ৮ জন প্রার্থী দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দক্ষিণের ৪ জন ও উত্তরের ৪ জন ফরম নেন। ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ছাড়াও দক্ষিণে আরো যারা ফরম নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম। বঙ্গবন্ধু একাডেমির সভাপতি নাজমুল হক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব এম এ রশীদ। আর উত্তরে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম ছাড়াও মনোনয়ন নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ ওসমানী, ভাসানটেক থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেজর (অব.) ইয়াদ আলী ফকির ও শহীদ পরিবারের সন্তান অধ্যাপক জামান ভুঁইয়া। এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে মোট ১২৯টি ওয়ার্ড। নির্বাচনের আরো দুই মাস আগে থেকেই এসব ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলরসহ অন্যান্য প্রার্থী তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন। তারা বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় যাচ্ছেন। জনসংযোগ বাড়াচ্ছেন। ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। কেউ কেউ পৌনে ৫ বছরে কী কী উন্নয়ন করেছেন, তার ফিরিস্তি তুলে ধরছেন। আর যারা নতুন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারাও অল্প সময়ে যেসব উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে তা সম্পন্ন করতে পুনরায় ভোটারদের সমর্থন ও সহযোগিতা চাচ্ছেন। থেমে নেই সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলররাও। মাঠে আছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। এদিকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এবার দল থেকে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন ছেড়েছেন গতকাল থেকেই। আর আওয়ামী লীগ ১২৯টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৪৩টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দলের সমর্থন প্রত্যাশীদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের আহ্বান জানিয়েছেন। ধানমন্ডি কার্যালয়ে আজ সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে ফরম সংগ্রহ চলবে আগামীকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ২৮ তারিখ স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কাউন্সিলর পদে বিএনপির মনোনয়ন নিয়েছে ১৩৪ জন : এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে গতকাল বিএনপির ১৩৪ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। ঢাকা উত্তরে ৭৪ আর উত্তরে ৬০ জন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর দপ্তর সম্পাদক এবিএম রাজ্জাক ও দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক সাইদুর রহমান মিন্টু এসব তথ্য জানান। তবে গতকাল মেয়র পদে দুই সিটির কোনো প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। যদিও সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা শেষে দলটির পক্ষ থেকে উত্তরে তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণে ইশরাক হোসেনকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। মনোনয়ন বিতরণ শুরু করেছে জাপা : এদিকে দুই সিটির জন্য নিজ দলের প্রার্থীদের কাছে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করেছে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। বুধবার সকাল ১০টা থেকে জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে এ মনোনয়ন বিতরণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রায় অর্ধশতাধিক কাউন্সিলর মনোনয়ন ফরম নিলেও শুধু উত্তরে মেয়র পদে জাপা প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করেছেন। সংগঠনটির চেয়ারম্যান ইতোমধ্যেই উত্তরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) কামরুল ইসলামকে তাদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে দক্ষিণে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি দলটি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App