×

অর্থনীতি

‘জমির দাম অনেক বেশি, মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে আবাসন খাত’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৩:৩৩ পিএম

‘জমির দাম অনেক বেশি, মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে আবাসন খাত’

এবারের মেলা সম্পর্কে বলুন? আলমগীর শামসুল আলামিন : আবাসন খাতের সবচেয়ে বড় আয়োজন এবারের শীতকালীন রিহ্যাব ফেয়ারে মোট ২৩০টি স্টল থাকছে। এ বছর ৩০টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৪ অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছে রিহ্যাব। প্রতি বছরই রিহ্যাব মেলা থেকে রিহ্যাব সদস্যদের পাশাপাশি ক্রেতারাও উপকৃত হন। আশা করি এ বছরও মেলার প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে এ সেক্টরের আস্থা বাড়ার পাশাপাশি ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাবো। এবারের মেলায় প্রতি স্কয়ার ফিট ফ্ল্যাট সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ছোট বড় বিভিন্ন ফ্ল্যাট পাবেন। আবার প্রতি স্কয়ার ফিট ফ্ল্যাট ১২ হাজার টাকা থেকে শুরু ১৫ হাজার এমনকি ২০ হাজার টাকার বেশি দামেও ফ্ল্যাট পাবেন। এককথায় এবারের মেলায় ক্রেতাসাধারণের দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন দামে ফ্ল্যাট পাওয়া যাবে।

মধ্যবিত্তের নাগালে আসছে না ফ্ল্যাট। এ বিষয়ে আপনাদের উদ্যোগ কী? আলমগীর শামসুল আলামিন : গত বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারকে আমরা এ বিষয়টা বলে আসছি। দেশে এখনো প্রায় ২০ লাখ আবাসনের প্রয়োজন আছে। আর এ ক্রয়ক্ষমতা রয়েছে তাদের, যাদের ক্রয়ক্ষমতা ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে। অথচ আমরা এ টাকার মধ্যে ফ্ল্যাট দিতে পারছি না। কারণ জমির দাম অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে রাজউক এবং ন্যাশনাল হাউজিংকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। আমি অনুরোধ করি, তারা আমাদের রিহ্যাবের সদস্যের সঙ্গে যৌথভাবে প্রোডাক্ট ডেভেলপ করে সেই প্রোডাক্টটিই একমাত্র এই দামের মধ্যে দেয়া সম্ভব হবে।

আবার অনেক অভিযোগ আসে, রিহ্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠান পারে না অথচ সদস্য না এমন প্রতিষ্ঠান কম দামে কীভাবে ফ্ল্যাট বিক্রি করে। তবে রিহ্যাবের সদস্য হওয়া কিন্তু একটা বড় প্রসিডিউর। রিহ্যাব সদস্য হলেই অনেক ব্যয় মেইনটেইন করতে হয়। যেমন, আমি ১২০০ স্কয়ার ফিটের একটা ফ্ল্যাট বানাতে পারব সেটাই আইন, সেখানে যদি আমি রাজউকের আইন না মেনে ১৬০০ স্কয়ার ফিট ফ্ল্যাট তৈরি করি তাহলে তো আমরা কস্ট কমাতে পারব না। কিন্তু তারা ঠিকই কম দামে দিতে পারবে। কিন্তু সেসব প্রজেক্ট আদৌ রাজউক দ্বারা নিবন্ধিত কিনা সেটাও দেখার ব্যাপার আছে। কাজেই রিহ্যাব সদস্যরা কিন্তু আইন মেনে চলে। আর তাই তারা অন্যদের মতো ঐ ধরনের মূল্য করতে পারে না।

অবশ্য কর্মজীবীদের দিক বিবেচনা করে স্বল্প দামের মধ্যে আমাদের রিহ্যাব সদস্যদের ফ্ল্যাট রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের সামর্থ্য কম কিন্তু শখ বেশি। যখনই একটা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার কথা চিন্তা করে তখনই মনে করে মিনিমাম ৩টা বেড হতে হবে। ফ্যামিলি বড় হওয়ার কারণে চাহিদা থাকলেও কিন্তু সাধ্য নাই।

দেশের টাকা দিয়ে যারা বিদেশে পাচার করে ফ্ল্যাট কিনে এদের উদ্দেশে কিছু বলুন? আলমগীর শামসুল আলামিন : দেশের অর্থ বিদেশে চলে যাবে এবং সে অর্থ দিয়ে বিদেশে ফ্ল্যাট বা জমি কেনা হবে সেটা আমরা কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারি না। রিয়েল স্টেট এর সঙ্গে অনেক সেক্টর জড়িত সেই সঙ্গে ২৫ লাখ শ্রমিকও রয়েছে। সুতরাং দেশের টাকা বিদেশে চলে গেলে তো নেতিবাচক একটা প্রভাব রয়েছেই। আমরা চাই দেশের টাকা দেশে থাকলে দেশের মানুষের উপকার হবে এবং অর্থনীতি আরো চলমান হবে।

আবাসন খাতে সেকেন্ডারি মার্কেট সম্পর্কে কিছু বলেন? আলমগীর শামসুল আলামিন : সেকেন্ডারি মার্কেট আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এবং এঁরা আস্তে আস্তে ইমপ্রুভ করছে। সেকেন্ডারি মার্কেট ইমপ্রুভ করলে আমাদের জন্য ভালো হবে। সেকেন্ডারি মার্কেট বলতে আমরা বুঝি সেকেন্ড হ্যান্ড বা পুরনো ফ্ল্যাট কেনা-বেচা। এতে করে মানুষ স্বল্পমূল্যে একটি ফ্ল্যাট কিনতে পারে। পাশাপাশি নতুন আবাসনের মার্কেট ক্রিয়েট হয়। বেশ কিছু মার্কেট ইতোমধ্যে সেকেন্ডারি মার্কেট নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে অন্যতম বিপ্রপার্টি।

আবাসন খাতের স্বচ্ছতা নিয়ে মাঝে মাঝে প্রশ্ন আসে। এমনকি প্রতারণার অভিযোগও আসে। গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছেন? আলমগীর শামসুল আলামিন : রিহ্যােেবর মেডিয়েশন সেল বলে একটি সেল আছে। সেই সেল প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে কাজ করছে। কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসলে সেই সেল অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে এবং সমাধান করে। গত পাঁচ বছরে প্রায় এক হাজারের উপরে কেস সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। এটা রিহ্যাবের অনেক বড় একটি এচিভমেন্ট। প্রতিটি কেসই কিন্তু সঠিক এবং সুন্দর একটা সমাধান দিতে সক্ষম হয়েছি।

ঢাকাকে একটি পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে রিহ্যাবের কী ধরনের উদ্যোগ রয়েছে। আলমগীর শামসুল আলামিন : স্যাটেলাইট সিটি হওয়া এখন সময়ের দাবি। কিন্তু স্যাটেলাইট সিটি হতে পারছে না কারণ আমাদের এখনো ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপ হয়নি। রুট কমিউনিকেশন না হলে স্যাটেলাইট সিটি হওয়া সম্ভব না। বিশে^র অন্যান্য যেসব জায়গায় স্যাটেলাইট সিটি হয়েছে, সেখানে কিন্তু সরকার প্রথমে রোড কানেক্টিভিটি তৈরি করেছে। এরপরেই ডেভেলপাররা তাদের নতুন নতুন নগরী তৈরি করেছে। আমরাও সেটাই প্রত্যাশা করি। সরকার দ্রুত রোড কানেকটিভিটি বাড়াবে। আমার বিশ্বাস মেট্রোরেল, হাইওয়ে ইত্যাদি চালু হলে আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে পারব।

রিহ্যাবের সদস্য প্রায় ১ হাজার। অথচ মেলায় অংশগ্রহণ করছে মাত্র ২৩০টি স্টল। বাকিরা অংশ নিচ্ছে না কেন? আলমগীর শামসুল আলামিন : আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জায়গার অভাব। অনেকেই মেলায় অংশগ্রহণ করার আগ্রহ পোষণ করে থাকেন কিন্তু জায়গা না থাকার কারণে লটারি করে দিতে হয়। সুতরাং চাহিদা অনুযায়ী জায়গার সংকুলান না হওয়ায় প্রতি বছর আমরা সবাইকে একই ছাতার নিচে আনতে পারছি না।

রিহ্যাবের সদস্য না, এমন কোনো প্রতিষ্ঠান কী এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে? আলমগীর শামসুল আলামিন : আমি সভাপতি আছি বিগত পাঁচ বছর। এ পাঁচ বছরের মধ্যে রিহ্যাব মেলায় সদস্যদের বাইরে কাউকে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App