×

পুরনো খবর

মিস ইউনিভার্স এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:১৮ পিএম

মিস ইউনিভার্স এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম আলোচিত একটি ঘটনা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণ সুন্দরী জোজিবিনি তুনজির মিস ইউনিভার্স খেতাব পাওয়া। চলছে তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনেকের কাছে বিষয়টি স্বাভাবিক হলেও বিশেষ একটি অংশের কাছে তা অস্বাভাবিক। কারণ এখনো আমরা শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি অবজ্ঞার চিত্র প্রতিনিয়ত খবরে দেখতে পাই। স্পষ্টত যার দায় আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর বর্তায়। আমরা সবাই সৌন্দর্যের পূজারি কিন্তু বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বের মানুষ সৌন্দর্যের প্রকৃত সংজ্ঞা না জানার কারণে আমরা প্রকৃত সৌন্দর্যের উপলব্ধি এবং বিচার করতে পারি না। সম্প্রতি মিস ইউনিভার্স ২০১৯ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে মিস ইউনিভার্স খেতাব পান দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণ সুন্দরী জোজিবিনি তুনজি। বিশ্বের ৯০টি দেশের শীর্ষ সুন্দরীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে মিস ইউনিভার্স ২০১৯ খেতাব অর্জন করেন তিনি। আর তার আগে নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় সুন্দরীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে মিস ইউনিভার্স আফ্রিকা খেতাব পান ২৬ বছর বয়সী জোজিবিনি তুনজি। মিস ইউনিভার্স ২০১৯-এর মুকুট পরার আগে জোজিবিনি তুনজি বলেছিলেন, আমি এমন এক পৃথিবীতে বড় হয়েছি যেখানে আমার ত্বকের মতো নারীরা বা আমার চুলের মতো দেখতে নারীরা সুন্দর বলে বিবেচিত হয় না। আমি মনে করি এটি আজ বন্ধ হয়ে যাবে। আমি চাই বাচ্চারা আমার দিকে তাকাবে এবং আমার মুখটি দেখতে পাবে, তারপরে তাদের মুখগুলো আমার মধ্যে দেখা যাক। মিস ইউনিভার্স খেতাবটিও এমনি এমনি পাননি ২৬ বছর বয়সী তুনজি। এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাকে লড়াই করতে হয়েছে এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে বেশ সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করেন। লিঙ্গভিত্তিক ছকবাঁধা চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তনে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গর্বিত প্রচারক এবং নিজেদের মতো করে বাঁচা ও নিজেদের ভালোবাসার জন্য নারীদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছেন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ এবং নারীদের উৎসাহ জাগানো সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমাদের সমাজেও সুন্দরের ব্যাখ্যাটা একটু ভিন্ন। এখানে সুন্দরকে বিচার করা হয় গায়ের রং দিয়ে। আমাদের সমাজের ধারণা হচ্ছে, গায়ের রং সাদা হলে সে সুন্দরী অন্যথায় সে সুন্দরী নয়! একজন কৃষ্ণ রংয়ের মেয়েকে তার গায়ের রংয়ের জন্য শুনতে হয় নানা কথা। এসব শুনতে শুনতে একসময় তা বিভীষিকায় রূপ নেয়। আর তা থেকে শুরু হয় মারাত্মক মানসিক যন্ত্রণা। আস্তে আস্তে নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলা, বিয়ে ভেঙে যাওয়া, সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটা, এমনকি এসবের হতাশায় আত্মহত্যা পর্যন্ত ঘটে যায় এমন নজির অনেক। তা ছাড়া দৈনন্দিন জীবন পরিচালনায় এবং চাকরি ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে তাদের। সাংবিধানিকভাবেও আমাদের দেশের অবস্থান বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে। নাগরিকদের প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপের জন্য ২০১৪ সালে বৈষম্য বিলোপ আইন ২০১৪ খসড়া তৈরি করা হয়েছিল, যা এখনো চ‚ড়ান্তভাবে আইন আকারে অনুমোদিত হয়নি। এটি কার্যকর হলে বৈষম্যের শিকার ব্যক্তি মামলা করতে পারবেন। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলিত মানুষগুলো উপকৃত হবে। খসড়া আইনে বলা আছে- ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, শারীরিক, মানসিক ও লিঙ্গীয় প্রতিবন্ধকতা এবং কথিত অস্পৃশ্যতার অজুহাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বৈষম্যমূলক কাজ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। প্রস্তাবিত খসড়ায় অবহেলিত জনগোষ্ঠীর লোকদের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা লাভের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলে প্রথমবার ২ বছরের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড দেয়া যাবে এমনটি উল্লেখ রয়েছে। বিশ্বের সব দেশের প্রতিটি মানুষের কোনো প্রকার বৈষম্য ছাড়া মৌলিক মানবাধিকার ভোগ করার অধিকার আছে। বর্ণবৈষম্যের এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও আমাদের বের হতে হবে, আমাদের সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে সৌন্দর্যের বিচার করতে হবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। সবাইকে সমান চোখে দেখতে হবে। নারীদেরও এ ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রাখতে হবে। তাদের হতাশ হলে চলবে না, লড়াই করতে হবে এবং সব মানুষ সমান এ দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে বুকে সাহস রেখে পথ চলতে হবে। বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করতে না পারলে কখনো মানবিক রাষ্ট্র গড়ে উঠবে না এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যত কোনো কাজে আসবে না। তাই আসুন কাঁধে কাঁধ রেখে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলি এবং বর্ণবৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলি।

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App