×

পুরনো খবর

কিন্ডারগার্টেন ও শিশুশিক্ষা ব্যবস্থা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:৩৭ পিএম

কিন্ডারগার্টেন ও শিশুশিক্ষা ব্যবস্থা

কিন্ডারগার্টেন তথা শিশুস্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা ও পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্ডারগার্টেনের মালিকরা কেন বুঝতে চেষ্টা করছে না যে, কিন্ডারগার্টেনের আরেক নাম ইনফ্যান্ট স্কুল তথা শিশুস্কুল। কিন্ডারগার্টেনের কাজ শিশুকে ক্লাসে প্রথম করা নয়, তাকে সহজভাবে মানুষ হয়ে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা ও অন্য সব দিক হতে এগিয়ে নেয়া।

দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থানুযায়ী নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসজুড়ে দেশব্যাপী চলে নতুন শ্রেণিতে ও স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম। সচেতন অভিভাবকদের অনেকেই তখন ছুটে চলেন নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পিছে। ধাবমান শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নানামুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যার মধ্য থেকে যুগোপযোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক স্তরের প্রথম ধাপের নাম প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। যা ১৯৭৪ সালের কুদরাত-ই-খুদা এবং ১৯৮৮ সালের মফিজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন শিক্ষা কমিশন থেকে সর্বশেষ শিক্ষানীতি-২০০৯সহ প্রায় সব কমিশন ও শিক্ষানীতির আলোকে বর্তমানে ৫ বছর বয়সী ও তার কম বয়সী শিশুদের জন্য ২ বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়। যা মূলত কিন্ডারগার্টেন তথা কেজি স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থার আদলে পরিচালিত। তবে এই বিষয়ে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সরকার কতটা পারদর্শী ও সফল সেই বিষয়ে বিশ্লেষণ করে দেখার দায়িত্ব আপনাদের। অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন তথা শিশুস্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা ও পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যেহেতু এই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ধারণা কিন্ডারগার্টেন তথা কেজি স্কুলের ধারণা থেকে পায়, সুতরাং আমাদের সবার জানতে হবে, কিন্ডারগার্টেন কী এবং কেমন হওয়া উচিত। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, তাদের হিসাবে সারাদেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সংখ্যা ৭০ হাজার। এর বেশিও হতে পারে। প্রায় ২৬ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল তাদের সংগঠনেরই সদস্য। এর বাইরে যারা আছে তারা কোনো নীতিমালা মানে না, তারা ছোট ঘুপচি ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পাঠদান করে। অধিকাংশ স্কুলে নেই কোনো খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা। প্রতিটি বাজারে কিংবা প্রতি একশটি ভবনের মধ্যে একটিতে কিন্ডারগার্টেন গড়ে উঠেছে। ভবনের নিচতলায়, দোতলায়, তিনতলায় এমনকি চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় পর্যন্ত এই কিন্ডারগার্টেন স্থাপিত হচ্ছে। যারা কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করছে তাদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক পরিচালক কিংবা মালিকই শিক্ষার এই ধারাটি সম্পর্কে অবগত আছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারি নিয়মনীতির ঢিলেঢালামির কারণে অনায়াসে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা। জানা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনের নিবন্ধন বিধিমালা-২০১১ প্রণয়ন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের আগস্টে ওই নীতিমালা হতে নিবন্ধন ফি ও ভ‚মির পরিমাণ কমানোসহ ৯টি বিধি সংশোধন করা হয়। এরপরও সরকারের নিবন্ধনের আওতায় আসেনি কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। এ ছাড়াও সরকারি তরফ থেকে বহুবার নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও তা মানছে না কেজি স্কুলের মালিকরা। এমতাবস্থায় আমার মনে প্রশ্ন আসে, বাণিজ্যিক কিন্ডারগার্টেনের মালিকরা কেন বুঝতে চেষ্টা করছে না যে, কিন্ডারগার্টেনের আরেক নাম ইনফ্যান্ট স্কুল তথা শিশুস্কুল। কিন্ডারগার্টেনের কাজ শিশুকে ক্লাসে প্রথম করা নয়, তাকে সহজভাবে মানুষ হয়ে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা ও অন্য সব দিক হতে এগিয়ে নেয়া। সুতরাং তারা যদি এটা মেনে নিয়ে সেই পরিবেশে ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে কিন্ডারগার্টেন পরিচালনা করতে না পারে, তাদের উচিত হবে অন্তত এই পথ ভিন্ন অন্য পথে টাকা উপার্জন করা। এত কথার পরও আরেকটি কথা সামনে আসে সেটি হলো, কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী? যে কারণে তারা সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এলোপাতাড়ি কিন্ডারগার্টেন স্থাপন করে চলেছে। আশা করি জাতি গঠনের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠান তথা কিন্ডারগার্টেন শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়নে সরকার ও সুধীমহল সোচ্চার হবে।

লেখক, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App