×

সারাদেশ

পেয়ারের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৩৩ পিএম

পেয়ারের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড

উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পেয়ার আহমেদ

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে ৮ বছর ধরে অবস্থান করায় উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পেয়ার আহমেদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সরকারের গৃহীত ঋণদান কর্মসূচি থেকে শুরু করে কোন প্রকল্পই আলোর মুখ দেখছে না। ৮ বছরেরও অধিক সময় কাজ করার সুবাদে স্থানীয় মধ্যস্বত্বভোগীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে কিছুসংখ্যক যুব মহিলা ও যুবকদের মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে আর্থিক সুযোগ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পেয়ার আহমদের বিরুদ্ধে। একই সাথে রয়েছে নিজ কর্মস্থলে মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ। কিন্তু হাজিরা খাতাই ঠিকই একদিন উপস্থিত হয়ে পুরো মাসের হাজিরা দিয়ে চলে যান। অভিযোগ রয়েছে, যুব উন্নয়ন অফিসের মো. শাহিনুর রহমান নামে এক কমিউনিটি সুপারভাইজার দীর্ঘদিন যাবৎ বিদেশে অবস্থান করা সত্ত্বেও ২০১৮ সালের জুন মাসের বেতন মোহাম্মদ পেয়ার আহমেদ আত্মসাৎ করেছেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের সাবেক ক্রেডিট সুপারভাইজার মো. শওকতুজ্জামান স্থানীয় সাংসদ ও সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী (বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী) বরাবরে ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবরে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এই অভিযোগ পত্র স্থানীয় সাংসদ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপির হাতে পৌঁছালে তাৎক্ষনিক মন্ত্রী ঐ অভিযোগ পত্রে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে বিহিত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। ইতিপূর্বেও পরিকল্পনা মন্ত্রী আলহাজ এম এ মান্নান উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ পেয়ার আহমদের ঋণ বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। উল্লেখিত অভিযোগ করার পরেই ঐ অভিযোগকারী ক্রেডিট সুপারভাইজারকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়। তবে এখনও অভিযুক্ত কর্মকর্তা রয়ে গেছেন বহাল তবিয়তে। উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ পেয়ার আহমেদ গত ৩০ অক্টোবর দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেন। এর আগে এই উপজেলার যুব উন্নয়ন কার্যক্রম সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সাথে যুক্ত ছিল। প্রথম অফিসার হিসাবে এই উপজেলায় যোগদান করেন তিনি। এর পর থেকেই দীর্ঘ ৮ বছর ধরে উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস পরিচালনা করে যাচ্ছেন নিজের ইচ্ছেমত। এলাকাবাসীর অভিযোগ, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পেয়ার আহমেদ র্দীঘদিন যাবৎ অফিস না করে নিজের বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। মাসের পর মাস অফিসে অনুপস্থিত থাকেন তিনি। অফিসে এসে প্রায় সময় এলাকার লোকজন ঐ কর্মকর্তাকে পান না। ফোন দিলে বলেন, নানা অজুহাতে অফিসে না আসার কারণ জানান তিনি। আরও অভিযোগ রয়েছে, সরকারি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওয়াতায় বাস্তবায়ন হলেও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার কোন ইউনিয়নের গত ৪ বছরেও একটি বাস্তবায়ন হয়নি। সেই সাথে প্রশিক্ষণার্থীদের সহজ শর্তে ঋণ বিতরণ করার কথা থাকলেও বঞ্চিত হচ্ছেন এই এলাকার যুব সমাজরা ও যুব মহিলারা। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনির উদ্দিন জানান, আমার ইউনিয়নের যুব উন্নয়ন অফিস থেকে গত চার বছরে কোন প্রশিক্ষণ হয়নি সেই সাথে কাউকে ঋণ প্রদান করা হয়নি। অনেক বার উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পেয়ার আহমদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে অফিসে পাওয়া যায় নি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রায় সময় বলেন আমি ঢাকা। আমি অসুস্থ্, আমার স্ত্রী অসুস্থ্ ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনি বলেন, আমাদের বেকার যুব মহিলারা ও যুবকরা কম্পিউটার, সেলাই প্রশিক্ষণ সহ যুব উন্নয়ন অফিসের প্রশিক্ষণ হলে বেকারত্ব কিছুটা হলেও দুর করা যেত। কিন্তু সরকারের এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুর কালাম জানান, আমার ইউনিয়নের আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কোন প্রশিক্ষণ বা কোন কার্যক্রম হয় নি। কয়েক বার আমার কাছে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এসেছিলেন উনার বিভিন্ন কাগজে আমার স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য আমি কোন কাগজে স্বাক্ষর করি নি। কিন্তু কোন মানুষকে কোথায় ঋণ বা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন আমি অবগত নই। পাথারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ আমিন জানান, আমার ইউনিয়নের দুই বছর আগে একটি প্রশিক্ষণ হয়েছিল। এর পর থেকে আর কোন প্রশিক্ষণ বা ঋণ কার্যক্রম হয়নি। হয়ে থাকলেও আমার জানা নাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক কর্মকর্তা জানান, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পেয়ার আহমদকে কোন সময় অফিসে পাওয়া যায় না। মাসের পর মাস তিনি অনুপস্থিত থাকেন। আমরা প্রায় সময় দেখতে পাই উনার অফিস তালা বদ্ধ থাকে। এলাকার অনেক ছেলে মেয়েরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কোন প্রকার প্রশিক্ষণ বা ঋণ কার্যক্রম হচ্ছে বলে মনে হয় না। আর হয়ে থাকলে সেটা উনাদের একেবারেই ইচ্ছানুযায়ী হচ্ছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ পেয়ার আহমদের অফিসে যোগাযোগ করে অফিস বন্ধ পাওয়ায় তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি কি করছি না করেছি সেটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানেন, আমার জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক জানেন। আপনি আমার অফিসে আসেন বলেই ফোনের লাইন কেটে দেন। এর পরে একাদিক বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভড করেননি। সুনামগঞ্জ জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক (চ.দা.) মো. হারুন অর রশীদ খান জানান, অভিযোগের সত্যাতা স্বীকার করে জানান, যেহেতু এটা মাননীয় পরিকল্পামন্ত্রী স্যারের এলাকা সেই সুবাদে আমরাও চাই এখানে ভাল ভাবে আমাদের যুব উন্নয়নের কার্যক্রম পরিচালিত হোক। এই অভিযোগের কপিতে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় সুপারিশ করেছেন তদন্ত কওে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এটা হয়তো উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App