×

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চে ওরা কারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৩৮ এএম

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চে ওরা কারা

ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত বুলবুল ও মামুনের নেতৃত্বেমঞ্চের একাংশ ভিপি নুরের ওপর হামলায় জড়িত

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাইরে একের পর এক ঘটনায় জড়িয়ে আলোচনার শীর্ষে আছে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠনের নাম। যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত সংগ্রাম পত্রিকায় ভাঙচুরসহ ঢাবি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংগঠনটির ব্যানারে নানা কর্মসূচি এবং ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার মতো কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে এই মঞ্চের ব্যানারে। সর্বশেষ গত রবিবার নুর ও তার সঙ্গে থাকা কর্মীদের ওপর ফের হামলা করে আলোচনায় আসে সংগঠনটি। তাদের হামলায় নুরসহ প্রায় ২৪ জন আহত হয়েছে। ৪ জনের অবস্থা গুরুতর।

এ ঘটনার পর থেকেই ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। সংগঠনটির সঙ্গে কারা জড়িত, কী তাদের উদ্দেশ্য, কেনইবা হঠাৎ তৎপর, একের পর এক ঘটনা ঘটালেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? আর তাদের শক্তির উৎসই বা কোথায়? এসব প্রশ্ন এখন সবার মুখে।

এ প্রসঙ্গে গতকাল সচিবালয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের সংগঠনটি আমাদের দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয়। হামলার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চেরও কেউ কেউ জড়িত। এ সংগঠনটির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি তাকে বলেছি, যেই হোক, অপকর্মকারীকে অপকর্মকারী হিসেবেই দেখব, কোনো ছাড় দেয়ার প্রশ্ন ওঠে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর মন্ত্রিপরিষদের এক বৈঠকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৯ থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে, যেখানে কোনো কোটা থাকবে না। সে দিন রাতেই এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের সমন্বয়ে গঠিত কয়েকটি সংগঠন। সে বছরের ৪ অক্টোবর আন্দোলনকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামকরণ করে মুখপাত্র নির্বাচন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিনকে। আর সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর নবনির্বাচিত সদস্য শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খানকে করা হয় সদস্য সচিব।

চলতি বছরের মার্চে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতা আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে সভাপতি ও আল মামুনকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি গঠন করেন জামাল উদ্দিন। বুলবুলের বাড়ি গোপালগঞ্জ। তার আচরণ উগ্র প্রকৃতির। তার বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জে একটি খুনের মামলাও আছে বলে জানা গেছে। এ কারণে (সোহাগ-জাকির) কমিটিতে তাকে কোনো পদ দেয়া হয়নি। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগ সম্পর্কে নানা কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দেন বুলবুল। ফলে ওই সময় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির সবাই তাকে এড়িয়ে চলতেন। আল মামুন ছিলেন ছাত্রলীগের গত কমিটির উপমুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক।

চলতি বছর জুলাইয়ে শোভন-রাব্বানীর কমিটিতে পদোন্নতি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো নির্দেশনা মানতেন না বুলবুল ও মামুন। এ সংগঠনের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন তারা। ফলে ১০ অক্টোবর গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও আল মামুনকে সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেন মঞ্চের আহ্বায়ক ও মুখপাত্র জামাল উদ্দিন।

এই ঘটনার পর জামাল উদ্দিন ও আসিব ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চে’র কেউ নন এমন দাবি করে বক্তব্য দেন বুলবুল ও আল মামুন। নতুন করে তারা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন। যাতে সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন। এরপর থেকেই তারা দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি দেয়া শুরু করেন। এরইমধ্যে ঢাকা মহানগরীসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কমিটি দেন।

মূলত মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের জন্য গঠিত হলেও তা বাদ দিয়ে অন্য সব কাজে তৎপর দেখা গেছে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে’। সংগঠনটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আল্টিমেটাম দিয়ে থাকে। দাহ করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ বিভিন্ন জনের কুশপুত্তলিকা। এদের কাজ মূলত আল্টিমেটাম ও কুশপুত্তলিকা দাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনেকেই মজা করে এদের ডাকেন আল্টিমেটাম ও কুশপুত্তলিকা দাহ পার্টি। তবে বিভিন্ন মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে মূলত আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অংশটি। রবিবার ভিপি নুরের ওপর হামলাও করেছে তারা। এই অংশটিকে দুর্নীতির অভিযোগে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ হারানো গোলাম রাব্বানী মদত দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, রাব্বানী ছাত্রলীগের কেউ নয়। তার অপকর্ম ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ছাত্রলীগ থেকে তাকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ মূলধারার আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, মার্চ-এপ্রিলে আমরা এ সংগঠনের কাজ শুরু করি। ডাকসু নির্বাচনের পর এই কার্যক্রম জোরালো হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করাই আমাদের সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য। আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও আল মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্বে ছিলেন। কিন্তু তাদের নানা অপকর্ম ও বেপরোয়া আচরণের কারণে অক্টোবর মাসে আমরা এই দুজনকে অব্যাহতি দেই। তার অভিযোগ ছাত্রলীগ থেকে যারা বহিষ্কার হয়েছে তাদের মদতে এরা নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ভোরের কাগজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ টিএসসিভিত্তিক কোনো সংগঠন নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড কোনো সংগঠনও নয়। আগে এবং এখন যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলোর তদন্ত চলছে। যারাই এসব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App