×

জাতীয়

আ.লীগে নেতৃত্বে পরিবর্তনের হাওয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৪৬ এএম

আ.লীগে নেতৃত্বে পরিবর্তনের হাওয়া

সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মিত হয়েছে আওয়ামী লীগের সুরম্য সম্মেলন মঞ্চ। পদ্মা সেতুর আবহে দলীয় প্রতীক নৌকার উপর নেতৃবৃন্দের বসার আসন। ছবিটি তুলেছে ১৯ ডিসেম্বর। -ভোরের কাগজ

আ.লীগে নেতৃত্বে পরিবর্তনের হাওয়া
আ.লীগে নেতৃত্বে পরিবর্তনের হাওয়া

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আজ শুক্রবার। বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন উদ্বোধন করবেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকাল নির্বাচন করা হবে পরবর্তী ৩ বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব। এরইমধ্যে সম্মেলনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দলটি। সম্মেলনের জন্য গঠিত ১১টি উপকমিটি তাদের কাজ গুছিয়ে এনেছে। সম্মেলনে অংশ নিতে সারাদেশের সাংগঠনিক ৭৮টি জেলা ইউনিটসহ উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন নেতারা এসেছেন ঢাকায়।

আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে সবার কৌতূহল- কারা আসছেন নতুন নেতৃত্বে। বাদ যাচ্ছেন কারা। দলের সভাপতি শেখ হাসিনাই থাকছেন এটা নিশ্চিত। কারণ তৃণমূলের দাবি, যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন, দলের নেতৃত্ব দেবেন। তাই এ নিয়ে কারো আগ্রহ না থাকলেও, কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক- তা জানতে উন্মুখ সবাই। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন, নাকি নতুন কেউ আসছেন? এ নিয়েই আলোচনা এখন সবার মধ্যে। কারণ রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষে দলের জন্য সময় দেয়া কঠিন। তবে তার নির্দেশেই সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের যে কোনো সমস্যা সাধারণ সম্পাদককেই দেখভাল করতে হয়। ফলে এই পদটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেই নয়, কৌত‚হল আছে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও। কারণ আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছে।

উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে গতকাল কথা বলে জানা গেছে, দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার বিকল্প তারা কাউকেই ভাবতে পারেন না। শেখ হাসিনা যতদিন বাঁচবেন, দলের নেতৃত্ব তাকেই দিতে হবে। তারা এও বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন, এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কৌত‚হল আছে, থাকবেই। বিভিন্ন জেলা-উপজেলার কর্মীরা আমাদের কাছে জানতে চান, কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক। আমাদের একটাই উত্তর, প্রধানমন্ত্রী যাকে ভালো মনে করে দায়িত্ব দেবেন, আমরা তার সঙ্গেই কাজ করব।

এদিকে এবার রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা আছে সরকার ও দলকে আলাদা করতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সে লক্ষ্যে গত মন্ত্রিসভায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন তিনি। এবারো কেন্দ্রীয় কমিটির যারা মন্ত্রিসভায় আছেন, তাদের কেউ কেউ বাদ যাচ্ছেন না থাকছেন, তা নিয়েও নানা আলোচনা চলছে। তবে তরুণ অনেক নেতা মন্ত্রিসভার সদস্য, তারা মন্ত্রিসভায়ও থাকবেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও থাকতে পারেন। এ ছাড়া নতুন নেতৃত্বে আসতে পারেন সাবেক ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ। যাদের সাংগঠনিক দক্ষতার পাশাপাশি স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে।

সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্যসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটির বর্তমান কমিটির প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন নেতা এবার কমিটি থেকে বাদ যেতে পারেন। যারা সাংগঠনিকভাবে অদক্ষ, প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত ছিলেন। নিজ এলাকায় স্থানীয় এমপি ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আলাদা গ্রুপিং তৈরি করে দলের মধ্যে ভাঙন ধরিয়েছেন। এমন ব্যক্তিরাই বাদ যাবেন। কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানেই নতুন-পুরাতনের সমন্বয়। পুরাতন অনেকই বাদ যাবেন, নতুন অনেকেই জায়গা পাবেন। প্রতিটি সম্মেলনেই এরকমটা হয়ে আসছে। এবারো তাই হবে। তবে সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আমাদের নেত্রী ভালো জানেন। তিনি ছাড়া কেউই জানেন না। তৃণমূলের নেতাদের মনোভাব তিনি বুঝতে পারেন। তৃণমূলের নেতারাও সব সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেত্রীর হাতে অর্পণ করেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের প্রস্তুতি দেখতে এসে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, তা আল্লাহপাক জানেন আর নেত্রী জানেন। আমি কিছু জানি না। এদিকে কারা বাদ যাচ্ছেন? আর কারা নতুন যুক্ত হচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। তা নিয়েও কৌ তূহলী অনেকে। তবে বর্তমান কমিটির সিনিয়র অনেকেই এবার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হচ্ছেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। কারণ বুধবার গণভবনে দলটির সর্বশেষ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের বৈঠকে উপদেষ্টার আকার ৪১ থেকে বাড়িয়ে ৫১ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক ছাত্রনেতা, তৃণমূলের অনেক জেলা-উপজেলা নেতা, শহীদ পরিবারের অনেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন।

বরাবরের মতো এবারো জোরালো আলোচনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিকেও দেখা যেতে পারে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। যদিও ২০তম জাতীয় সম্মেলনে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে আসার বিষয়টি অনেকাংশেই চ‚ড়ান্ত ছিল। তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জয়কে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় এই মুহূর্তে নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। তিনি বলেছিলেন- বিদেশে থেকে আমার পক্ষে আপাতত দলে পদ নেয়া ঠিক হবে না। ফলে তখন থেমে যায় সেই আলোচনা। এরপর রাষ্ট্রীয় ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সক্রিয় দেখা গেছে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও রাদওয়ান সিদ্দিক ববিকে। ফলে জয়কে নেতৃত্বে দেখা না গেলেও পুতুল ও ববির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও সবকিছু নির্ভর করছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপরই। তবে তৃণমূল নেতারা চান শেখ হাসিনার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি ঠিক করতে তার পরিবারের কাউকে এখনই নেতৃত্বে আনা প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App