×

সারাদেশ

তালিকায় নেই, তাই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিটুকুই সম্বল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৫১ পিএম

তালিকায় নেই, তাই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিটুকুই সম্বল

আব্দুল জলিল মোল্যার বয়স এখন আশি। একাত্তরে শ্রমিকের চাকরি করতেন অভয়নগরের বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে উজ্জীবিত হন দেশে প্রেমে। স্বাধীনতা যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে ওঠে মন। চাকরি ফেলে চলে আসেন নিজ গ্রাম পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর ফতে মোহাম্মদপুর গ্রামে।

একাত্তরের ২৯ মার্চ যোগ দেন মুক্তিবাহিনীতে। দেশেই প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন ৭নং সেক্টরে কাজী নূরুজ্জামান বীর উত্তম কমান্ডারের অধীনে। আব্দুল জলিল মোল্যা ঈশ্বরদীর শ্রীরামগাড়ি, মাঝগ্রাম, দাশুলিয়া বিমানবন্দরে সম্মুখযুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।

আব্দুল জলিল স্মৃতিচারণ করে বলেন, বিমান বন্দর এলাকা মুক্ত করতে এক ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়। ওই যুদ্ধে অনেক পাকসেনা নিহত হয়। শত্রুরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য আগে থেকেই সড়ক সেতু মাইন বিস্ফোরণে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। পরাজয় নিশ্চিত ভেবে শত্রুরা পালাতে থাকে। এ সময়ে পাক সেনারা তাদের পথ চেনানোর জন্য একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়। ওই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আত্মঘাতি হয়ে পাক সেনাদের সেই ভাঙা সেতুর রাস্তা ধরে দ্রুত গাড়ি চালাতে বলেন। দ্রুতগামী গাড়ি ভাঙা সেতুর নিচে জলাশয়ে পড়ে ডুবে সবাই নিহত হয়।

এদিকে, আব্দুল জলিলের সাহসিকতা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পাক সেনাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনী ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। রাজাকার বাহিনী যুদ্ধের মাঝে এক দিন প্রবেশ করে তার বসতবাড়িতে। সেদিন বাড়িতে তার বাবা-মা বোন ও বোনের সন্তানসহ ছয় জন উপস্থিত ছিলেন। রাজাকার বাহিনী তাদের বেঁধে রেখে ছোরা দিয়ে কুপিয়ে একে একে নৃশংস ভাবে খুন করে তার জন্মদাতা হোসেন আলী মোল্যা, মা মহরজান বিবি, বোন সুরাতন বিবি, বোনের মেয়ে আয়শা খাতুন, হাসিনা খাতুন ও একজন দুধের শিশুকে। ঘাতকেরা হত্যা করে লাশগুলো ফেলে রেখে বাড়িঘরের সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৮ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম ওঠেনি আব্দুল জলিলের। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে কোনো সম্মাননাও পাননি তিনি। বর্তমানে তিনি যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার নওয়াপাড়া গ্রামে বসবাস করছেন। দুবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। একাত্তরের রণাঙ্গন আর বিজয় দিনের স্মৃতিই তার একমাত্র সম্বল। তবে জীনবদশায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না পেলেও তার একটাই আকুতি, তার লাশ যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App