×

সাহিত্য

গান-কবিতায় অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৩১ পিএম

গান-কবিতায় অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয়
গান-কবিতায় অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয়
গান-কবিতায় অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয়
গান-কবিতায় অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয়
গান-কবিতায় অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয়
যুদ্ধাপরাধীদের বর্জনের অঙ্গিকার এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কথামালা, গান, স্বরচিত কবিতা পাঠ, আর্ট ক্যাম্পের মধ্য দিয়ে বিজয়ের ৪৮বছর পূর্তি উদযাপন করলো বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এদিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের ছোট বড় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। যেখানে গানে, কবিতায়, নৃত্যে বারবার উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত হয়ে জঙ্গিবাদ ও রাজাকার মুক্ত অসাম্প্রদায়িক এক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার। বাংলা একাডেমির একক বক্তৃতা জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করেছে বাংলা একাডেমি। বিকেলে একাডেমির নজরুল মঞ্চে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাচিকশিল্পী রূপা চক্রবর্তীর কণ্ঠে কবি হাসান হাফিজুর রহমানের তোমার আপন পতাকা শীর্ষক কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। ‘বিজয় : ইতিহাস ও মর্মার্থ’ শীর্ষক একক বক্তৃতা দেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। একক বক্তা সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস একাত্তরের বহু পূর্বেই সূচিত হয়েছে। কারণ এই জাতি কখনও স্থায়ীভাবে কিংবা দীর্ঘদিন বিদেশি বশ্যতা স্বীকার করেনি। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই নানান আঙ্গিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করেছেন। ৬-দফা এই স্বাধীনতা-ভাবনারই এক বলিষ্ঠ প্রকাশ; মূলত যা ছিল এক দফা অর্থাৎ স্বাধীনতা-কামনার নামান্তর। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি কিন্তু মুক্তির যুদ্ধ এখনও চলমান। তিনি বলেন, একাত্তর সালে সেক্টর ছিল ১১টি কিন্তু এখন সেক্টর এদেশের প্রতিটি ইঞ্চি। মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধা ছিল নির্দিষ্ট কিন্তু এখন সারাদেশের মানুষই মুক্তির যুদ্ধে নিবেদিত যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের চ্যালেঞ্জ ছিল কঠিন, এখন মুক্তির যুদ্ধে বিজয় অর্জনে চ্যালেঞ্জ কঠিনতর। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই কঠিনতর চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হয়ে লাখো শহিদের স্বপ্নকে সার্থক করতে হবে।সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, আমরা রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ করলেও সর্বক্ষেত্রে এখনও বিজয়ী হতে পারিনি। উন্নয়নের পাশাপাশি যেমন বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি জাতীয় জীবনের মৌলিক বিষয়গুলোতে আমরা পুরোপুরি ঐক্যমত্যে পৌঁছুতে পারিনি। এবারের বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক, সকলে মিলে এ দেশকে সার্বিক বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী তিমির নন্দী, সন্দীপন দাস, চম্পা বণিক এবং ফারহানা শিরিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক সায়েরা হাবীব। ছায়ানট ছায়ানট এবারো বিজয়-দিবস উদ্যাপন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে বিকেল পৌনে চারটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। এবারে ছিল ৮টি সম্মেলক গান, সাথে সম্মেলক নৃত্য। একক গান পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস ও সেঁজুতি বড়ুয়া এবং আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠান শেষ হয় সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সকালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা করেছে। এর উদ্বোধন করেন বিশ্ব আইটিআই-এর সাম্মানিক সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য দেন জোট সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ। মুক্তিযুদ্ধের কবিতা পাঠ করেন কবি তারিক সুজাত। এরপর বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ, রায়েরবাজার শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ মঞ্চে এক যোগে চারটি মঞ্চে শুরু হয় বিজয় উৎসবের অনুষ্ঠানমালা। শহীদ মিনারে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগেষ্ঠী, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, আনন্দন, সুরতাল। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সঞ্জয় কবিরাজ, অলোক দাশগুপ্ত, শ্রাবণী গুহরায়, সুরাইয়া পারভীন, সানজিদা মঞ্জুরুল হ্যাপী। দলীয় আবৃত্তিতে অংশ নেয় ঢাকা স্বরকল্পন, কণ্ঠশীলন। একক আবৃত্তি- ফয়জুল আলম পাপ্পু, অলোক বসু, ঝর্ণা সরকার, বেলায়েত হোসেন। শিশু সংগঠন পরিবেশনায় মৈত্রী শিশুদল, সপ্তকলির আসর। দলীয় নৃত্য-নৃত্যাক্ষ, বহ্নিশিখা, ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র। পথনাটক- রঙ্গপীঠ নাট্যদল, মৈত্রী থিয়েটার। রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী, ওস্তাদ মমতাজ আলী খান সঙ্গীত একাডেমি, সুর বিহার, সড়ক। একক সঙ্গীত- ফেরদৌসী কাকলী, মাহবুব রিয়াজ, শিমুল সাহা, মেজবাউদ্দীন, আসিফ ইকবাল সৌরভ, অনিমা রায়। দলীয় আবৃত্তি- স্বনন, স্বরচিত্র, প্রজন্মকণ্ঠ, মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি- রফিকুল ইসলাম, শিমুল মুস্তাফা, লায়লা আফরোজ, মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল। দলীয় নৃত্য- নান্দনিক নৃত্য সংসদ, নৃত্যজন। পথনাটক- পদাতিক নাট্যসংসদ বাংলাদেশ, অনুস্বর। শিশু সংগঠন পরিবেশনা- মন্দিরা সাংস্কৃতিক পাঠশালা।রায়েরবাজার শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ মঞ্চে দলীয় সঙ্গীত- সমস্বর, গীতশতদল। একক সঙ্গীত- মারুফ হোসেন, বাউল দেলোয়ার ও সোনিয়া। দলীয় আবৃত্তি- দৃষ্টি, চারুকণ্ঠ। একক আবৃত্তি- আমিরুল বাশার, সুবর্ণা আফরিন, অনন্যা সাহা। দলীয় নৃত্য- স্কেচ একাডেমি অব ফাইন আর্টস। পথনাটক পরিবেশন করে থিয়েটার আর্ট ইউনিট, বাঙলা নাট্যদল। শিল্পকলা একাডেমি নাচ, গান, স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, আর্ট ক্যাম্প, বাউল গানের আসর, অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী ও সংগীতায়োজনের মধ্য দিয়ে করা হয় বিজয় দিবস উদযাপন করেছে। সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধের হ্যালিপ্যাড সংলগ্ন সবুজ চত্বরে বরেণ্য ও প্রতিশ্রুতিশীল ৫০০জন শিল্পীর অংশগ্রহনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  কবিতা পাঠ করেন কবি শাহজাদী আঞ্জুমান আরা, আসাদ মান্নান, হাসান হাফিজ এবং নুরুল হুদা। আবৃত্তি করেন শিল্পী মাহিদুল ইসলাম মাহি, আশরাফুল আলম, ইকবাল খোরশেদ, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, লায়লা আফরোজ, সৈয়দ হাসান ইমাম, রুপা চক্রবর্তী, মীর বরকত, কাজী মাহতাব সুমন, গোলাম সারোয়ার, বেলায়েত হোসেন, এস এম মহসিন, ঝর্ণা সরকার এবং আহসানউল্লাহ তমাল। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী আরমিনা আক্তার মিতু, মাইনুল আহসান, হৈমন্তী রক্ষিত, স্মরণ ও মফিজুর রহমান। আর্ট ক্যাম্পে তরুন ঘোষ, কামাল পাশা চৌধুরী, জাহিদ মোস্তফা, সনজিব দাস অপু, সাইফুর রহমান, রিফাত জাহান কান্তা, মুক্তি ভৌমিক, রতেশ্বর সুত্রধর, আরিফুল ইসলাম এবং তরিকুল ইসলাম হীরক।এছাড়াও ৬০জন বাউল শিল্পীর অংশগ্রহণে বাউল গানের আসর, শিল্পকলার অ্যাক্রোবেটিক দলের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী এবং লিয়াকত আলী লাকী’র রচনা ও নির্দেশায় নাট্যানুষ্ঠান ‘মুজিব মানে মুক্তি’ পরিবেশিত হয়।সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা এবং বরেণ্য ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনা পর্বে শিল্পকলার মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। সাংস্কৃতিক পর্বে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে ‘গঙ্গা ঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ’ গানের কথায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা, ফারহানা চৌধুরী বেবীর পরিচালনায় ও আমার বাংলা মা তোর এবং আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে, সৈয়দা শায়লা আহেমেদ লীমা’র পরিচালনায় জ্বলে উঠো বাংলাদেশ, ইভান শাহরিয়ারের পরিচালনায় ও আমার জন্মভূমি ও আমার মাতৃভূমি, অন্তর দেওয়ানের পরিচালনায় রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়াল। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাজেদ আকবর, বুলবুল মহলানবীশ, মামুন জাহিদ খান, ইউসুফ, সালমা চৌধুরী, শিবু রায়, আমজাদ দেওয়ান, রীনা আমিন, আলম দেওয়ান, নবীন কিশোর গৌতম ও নিশ্চুপ বৃষ্টি। আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম এবং ঝর্ণা সরকার। চ্যানেল আই বরাবরের মতো এবারও লাল সবুজের বর্ণিল রঙে ভরে উঠেছিল চ্যানেল আই প্রাঙ্গণ। বিজয়ের ৪৮ বছর পূর্তিতে ‘আমি বাংলাদেশ’ স্লোগানে গ্রামীণফোন ও চ্যানেল আই-এর যৌথ উদ্যোগে বর্ণাঢ্য ‘বিজয় মেলা ২০১৯’। এদিন সকালে জাঁকজমকপূর্ণ ওই মেলা’র উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্যশিল্পী আজাদ রহমান, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের তিমির নন্দী, কাদেরী কিবরিয়া, ফকীর আলমগীর, শাহীন সামাদ, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য সাইদুর রহমান প্যাটেল, খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশী পর্যটক, চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, ইমপ্রেস গ্রুপ ও চ্যানেল আই পরিচালনা পর্ষদ সদস্য মুকিত মজুমদার বাবু, জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন, গ্রামীণফোনের হেড অব অপারেশন্স সাজ্জাদ হাসিব ও হেড অব কমিউনিকেশন্স খায়রুল বাশার, আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারোয়ার, ঐক্য স্টোরের জান্নাতুল ফেরদৌসী তিথিসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। এরপর লাল-সবুজের বেলুন উড়িয়ে ‘আমি বাংলাদেশ’ শিরোনামের এই মেলার উদ্বোধন করেন অতিথিরা। এ সময় রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা সুরের ধারার শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে দেশাত্মবোধক গানের একটি কোরাস পরিবেশন করেন। মেলায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ কম মোজাম্মেল হকের হাতে চিত্রশিল্পী কামাল উদ্দিনের অংকিত একটি ছবি তুলে দেওয়া হয়। এ সময় মন্ত্রী শিশুদের হাত থেকে তাদের অংকিত চিত্র গ্রহণ করেন এবং শিশুদের হাতে চ্যানেল আই প্রদানকৃত সার্টিফিকেট ও গিফট সামগ্রী তুলে দেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App