×

মুক্তচিন্তা

বিজয় দিবসের প্রত্যাশা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:১১ পিএম

বিজয়ের এ মাসে জাতি নানা উৎসবের পাশাপাশি গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় স্মরণ করছে মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদকে। স্মরণ করবে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী তার সহকর্মী জাতীয় নেতাদের। এ দেশের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য কেবল এটাই ছিল না যে, শুধু ভৌগোলিকভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বা ভূখণ্ডের অধিকারী হওয়া বরং পাকিস্তানের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে দেশে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে- এই প্রত্যাশাই ছিল সবার। স্বাধীনতার পর দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলেও তা হোঁচট খেয়েছে বারবার। বজায় থাকেনি এর ধারাবাহিকতা। রাজনীতিতে ঐকমত্যের অভাব ও অসহিষ্ণুতাও এর বড় কারণ। খুবই কষ্ট হয়, যখন দেখি স্বাধীনতার এতটি বছর অতিক্রম হওয়ার পরও রাজাকারদের ‘শহীদ’ আখ্যায়িত করে পত্রিকার হেড লাইন করা হয়। সমগ্র জাতির এখন একটাই প্রত্যাশা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলার মাটিতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস তথা যুদ্ধাপরাধীদের আর প্রকাশ্যে দেখতে চায় না। বাংলার মাটি ও মানুষ দেখতে চায় না মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠনকারী ওই নরপিশাচদের বংশধরদেরও। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার আর এ জন্যই তিনি ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির ব্যাখ্যা প্রদান করেন। ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’র ব্যাখ্যা প্রদান করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। তাতে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্ম-কর্ম করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা আইন করে ধর্মকে নিষিদ্ধ করতে চাই না এবং করব না। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে। তাদের বাধা দেবার মতো ক্ষমতা রাষ্ট্রের কারো নেই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের কেউ বাধা দিতে পারবে না। আমাদের শুধু আপত্তি হলো, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। ২৫ বছর আমরা দেখেছি ধর্মের নামে জুয়াচুরি, ধর্মের নামে বেইমানি, ধর্মের নামে অত্যাচার, খুন, ব্যভিচার বাংলাদেশের মাটিতে চলেছে। ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না। যদি কেউ বলে যে, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আমি বলব, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়নি। সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মীয় অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা করেছি।’ বিজয়ের এ মাসে আমাদের প্রত্যাশা বঙ্গবন্ধু ধর্ম নিরপেক্ষতার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার যেন পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়। নাইজেরিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান অথবা পাকিস্তানে যা হচ্ছে আমাদের এখানে তা হবে না। কেননা আমাদের দেশ তাদের কাছ থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। আমরা নিরাপদ থাকব। এটি আত্মপ্রসাদ বলে আখ্যায়িত হতে পারে ঠিকই কিন্তু একে আত্মঘাতী আত্মপ্রসাদ বলতে হবে। কেননা তালেবানিত্ব এবং সাম্প্রদায়িকতা কোনো জাতীয়তা বা কোনো বিশেষ দেশের নাগরিকের নাম নয়। এটি একটি বিকৃত মানসিকতার নাম। তা যে কোনো দেশে, যে কোনো সময় মাথাচাড়া দিতে পারে। তাই সময় থাকতেই এদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, এ দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি ও ধর্মান্ধদের কোনো স্থান নেই। সাংবাদিক ও লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App