×

আন্তর্জাতিক

বিক্ষোভে উত্তাল ভারত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৩৯ এএম

সংশোধিত নাগরিক আইনের প্রতিবাদে উত্তাল ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর পাশাপাশি এবার দিল্লিসহ পশ্চিমবঙ্গেও ব্যাপক বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মণিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট সেবা ও মোবাইল যোগাযোগ। আসামে বাংলাদেশের যুগ্ম কমিশনারের গাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর ভারত সফর বাতিলে ক‚টনৈতিক অস্বস্তির ইঙ্গিত দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। এর মধ্যে দিল্লিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা। ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীদের পাশাপাশি নাগরিক আইনের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। হুঁশিয়ারি দিয়ে কড়া ভাষায় তিনি জানিয়েছেন, কোনো পরিস্থিতিতেই এ আইন পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর হতে দেবেন না। এ সপ্তাহের সোম, মঙ্গল ও বুধবার পরপর তিনদিন প্রতিবাদ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তিনি। এদিকে মোদি-শাহ সরকারের বিরুদ্ধে গতকাল দিল্লির রামলীলা ময়দানে ‘ভারত বাঁচাও’ সমাবেশ করেছে বিরোধী দল কংগ্রেস। এ সমাবেশে নাগরিকত্ব আইনসহ অর্থনীতি ও নারী রক্ষা ইস্যুতে সরকারের কড়া সমালোচনা করেন দলের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী ও সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এতে সোনিয়া গান্ধী বলেন, নাগরিকত্ব বিল ভারতের হৃদয় ছিন্ন-ভিন্ন করবে। অথচ তা নিয়ে মোদি-শাহের কিছু যায় আসে না। অবস্থা এখন এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তারা চাইলেই একটি ধারা জারি করতে পারে, চাইলেই একটি ধারা বাতিল করতে পারে এবং চাইলেই রাজ্যের প্রকৃতি পাল্টে দিতে পারে। যেখানে ইচ্ছে সেখানেই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করছে। বিল পাস করছে কোনো বিতর্ক ছাড়াই। রাহুল গান্ধী বলেন, নাগরিকত্ব আইনের আগুনে মোদি উত্তর-পূর্ব ভারত জ্বালিয়ে দিয়েছেন। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, দেশের চলমান অবিচারের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করবে না তারা ভীতু। আমরা যদি আতঙ্ক ও মিথ্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার না হই তাহলে সংবিধান ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সব বাস-স্টপ, সব পত্রিকায় দেখা যায়, মোদি থাকলে সব সম্ভব। বাস্তবতা হলো বিজেপি থাকলে পেঁয়াজের কেজি ১০০ রুপি সম্ভব, বিজেপি থাকলে ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকারত্ব সম্ভব, বিজেপি থাকলে ৪ কোটি মানুষের চাকরি চলে যাওয়া সম্ভব। এদিকে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ। গত শুক্রবার মুর্শিদাবাদ, বেলডাঙ্গা, উলুবেড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গাড়ি, বাস ভাঙচুরের পাশাপাশি রেল স্টেশনে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে নাগরিকত্ব আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র। উলফাপ্রধান পরেশ বড়–য়া ছাত্র সমাজের উদ্দেশে বলেছেন, আন্দোলন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, শান্তিপূর্ণভাবে করা উচিত। হিং¯্র পথ নিলে সরকারেরই সুবিধা হবে। তবে আসামে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর নিয়ে প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রঞ্জিত দাস বলেন, হাঁস-মুরগি বেচতে বাইরে থেকে আসা মানুষ আন্দোলনের নামে গুয়াহাটিতে ভাঙচুর চালিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের নাগরিকত্ব আইন মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক হিসেবে অভিহিত করে উদ্বেগ জানিয়ে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। আনন্দবাজার জানায়, শনিবারও (১৪ ডিসেম্বর) রাজ্যটির বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ, রেল-সড়ক অবরোধ চলে। বেশিরভাগ এলাকায় ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে আছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরকারি বাস ভাঙচুর ও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকটি স্টেশনে আগুনও ধরিয়ে দেয়া হয়। প্রতিবাদকারীদের দমাতে কোনো কোনো এলাকায় পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। এদিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে সৃষ্ট অস্থিরতায় ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স। প্রয়োজন ছাড়া ওইসব এলাকায় না যেতে নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে দেশগুলো। ভারতে অবস্থানরত নাগরিকদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা এবং গণমাধ্যমের খবর অনুসরণেরও পরামর্শ দিয়েছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের আসাম ভ্রমণে স্থগিতাদেশ দেয়ার কথা বলা হয়। কানাডা এবং ফ্রান্সও উত্তর-পূর্ব ভারত ভ্রমণে নাগরিকদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে বলে জানায় বার্তা সংস্থা এএনআই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App