×

ফিচার

রশীদ মৃধার খোয়াব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:০৮ পিএম

রশীদ মৃধার খোয়াব
রশীদ মৃধার খোয়াব

যুদ্ধে পা হারিয়ে সেই থেকে হুইল চেয়ারই রশীদ মৃধার একান্ত সঙ্গী। পিতৃপুরুষের সম্পদ ছিল অঢেল। কোনো কিছুর অভাব ছিল না। একটা ঘটনা সবকিছু তছনছ করে দিয়েছিল। সেগুলো নিয়ে আক্ষেপ নেই তার। সম্পদ দিয়ে কী হবে? জীবনটাই তো বাজি রেখেছিলেন দেশের জন্য। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছেন। সতীর্থরা অনেকেই শহীদ হয়েছেন। যারা বেঁচে গিয়েছেন অনেকেই রাষ্ট্রীয় সম্মান পেয়েছেন। রশীদ মৃধা ওসবের ধার ধারেন না। দেশটা তো মা। মাকে রক্ষা করা নৈতিক দায়িত্ব। সে জন্যই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। বর্তমানে সরকারি তালিকায় নামটা থাকায় নিয়মিত মুক্তিযুদ্ধ ভাতাটা পান। এই দুর্মূল্যের বাজারে যা অতি নগণ্য। কোনো মতে জীবন পার করা। একাত্তরের ভয়াবহতা এখনো কুরে কুরে খায় রশীদ মৃধাকে। ঘুমের ভেতর খোয়াব দেখে প্রায় রাতেই চিৎকার দিয়ে ওঠেন। আগুন আগুন বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন তিনি। সদ্য বিয়ে করেছিলেন। মাস পার না হতেই যুদ্ধে যেতে হয়েছিল। স্ত্রীর হাতের মেহেদির রং তখনো মোছেনি। বাড়ি ছেড়ে বেশ কয়েক মাইল দূরে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হানাদার বাহিনীর জলপাই রংয়ের গাড়িবহর ইতোমধ্যেই গ্রামে ঢুকে পড়েছে। হাইওয়ের সঙ্গে গ্রামের রাস্তাটার সরাসরি সংযোগ থাকায় খুব সহজেই ওরা গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়েছিল। রশীদ মৃধারাও প্রস্তুত ছিলেন। টার্গেট করে গোলা ছুড়ে দুটো গাড়ি উড়িয়ে দিতে পারলেও বাকি গাড়ি ঢুকে পড়েছিল গ্রামের ভেতরে। যুদ্ধ করতে করতে আচমকা স্ত্রীর কথা মনে পড়ে রশীদ মৃধার। বউকে বানু বলে ডাকতেন। বানু ঠিক আছে তো? এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে খোঁজ নেয়ারও উপায় নেই। এরই মধ্যে হানাদারদের দিক থেকে ছুটে আসা একটা গুলি এসে লাগল রশীদ মিয়ার হাঁটুতে। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। সতীর্থরা হাতে হাতে তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেল। রশীদ মিয়ার প্রচ- কান্না পেয়েছিল সতীর্থদের সঙ্গে সমান সামর্থ্য নিয়ে আর যুদ্ধ করতে পারবেন না বলে। সবাই তাকে সান্ত¡না দিয়ে বলেছিল, ভাবতে হবে না, আমরা আছি তো। যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ লড়ে যাব। এক পর্যায়ে রশীদ মিয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। চিকিৎসা শেষে প্রাণে বেঁচে গেলেও রশীদ মিয়ার পা রক্ষা করা যায়নি। সম্বিত ফিরে পেয়ে বানুর কথা জানতে চাইলেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে তখনো যুদ্ধ চলছে। কোথাও কোথাও মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীদের হটিয়ে দখল নিয়ে নিয়েছিল। এক সহযোদ্ধা জানালো, রশীদ ভাই, তোমার বাড়িঘর সব পুড়িয়ে দিয়েছে হানাদাররা। গোপনে খোঁজ নিয়ে জানলাম সবাই পুড়ে মারা গেছে, কেউ বেঁচে নেই। রশীদ মিয়া বানু বলে একটা চিৎকার দিয়ে আবার জ্ঞান হারিয়েছিলেন। ফের সম্বিত ফিরে পাওয়ার পর রশীদ মিয়া নিজেকে নিজে ধিক্কার দিয়েছিলেন। ধিক্কার দিয়েছিলেন এই বলে- না পারলাম দেশের জন্য জীবন দিতে, না পারলাম নিজের পরিবারকে বাঁচাতে। যুদ্ধ শেষে যেদিন লাল-সবুজের পতাকা পত পত করে উড়েছিল বাংলার আকাশে। বেঁচে যাওয়া এক সহযোদ্ধা বলেছিল, দেখ, দেখ রশীদ ভাই, তোমার রক্তঝরা পায়ের বিনিময়ে ফিরে এসেছে স্বাধীনতা। তোমার বানুর জীবনের বিনিময়ে পেয়েছি এই লাল-সবুজের পতাকা।

  • মোহাম্মদপুর, ঢাকা

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App