×

অর্থনীতি

বিজেএমসির অব্যবস্থাপনার মাশুল দিচ্ছেন শ্রমিকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৪৭ এএম

বিজেএমসির অব্যবস্থাপনার মাশুল দিচ্ছেন শ্রমিকরা

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) নানা অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার মাশুল দিচ্ছেন সাধারণ পাটকল শ্রমিকরা। ২০১৩ সাল থেকে অবসরের পর পিএফ ফান্ডের টাকাও পাচ্ছেন না তারা। অথচ পাটকলগুলোর আয় থেকে ৫ শতাংশ কেটে রেখে নিজেদের বেতন ঠিকই পরিশোধ করছে বিজেএমসি। দফায় দফায় সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পরও তাদের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন না হওয়ায় এবার আমরণ অনশনে খুলনার ৮ জুট মিলের শ্রমিকরা। ইতোমধ্যে আবদুর সাত্তার নামের এক শ্রমিক মারা গেছেন। অসুস্থ হয়েছেন প্রায় শতাধিক শ্রমিক। শ্রমিকদের প্রধান দাবি মজুরি কমিশন-২০১৫ বাস্তবায়ন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতি বছর লোকসান গুনছে সরকারি পাটকলগুলো। সাধারণত পাট কেনায় অদক্ষতা, অবহেলা এবং দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে। পাট কেনার কমিটিতে শ্রমিকদের থাকার সুযোগ নেই। আর পাটকলগুলোর লোকসানের কারণ অনুসন্ধানে কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের। অথচ লোকসানের খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ শ্রমিকরা। এ নিয়ে বারবার আন্দোলন করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না তারা। চলতি বছরের এপ্রিলে পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন থামাতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে গত মে মাসে মজুরি কমিশন-২০১৫ বাস্তবায়নের কথা থাকলেও আজো তা হয়নি। কিন্তু পাটকলগুলোর আয়ের ৫ শতাংশ কেটে রেখে বিজেএমসি ঠিকমতো নিজেদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে।

বিভিন্ন পাটকল শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের সময় না কেনে কয়েকদিন পরে বাকিতে কেনা হয় পাট। যার কারণে মৌসুমে যে পাট ১২শ টাকায় কেনা যায়, তা কেনা হয় ১৬শ টাকায়। এই প্রক্রিয়ায় প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা লোকসান হয় পাটকলগুলোতে। মূলত বিজেএমসির অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, সঠিক পরিকল্পনা না থাকার কারণে সরকার প্রতি বছর শত কোটি টাকা লোকসান গুনে। এ জন্য পারচেজ ম্যানেজার, প্রকল্প পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই দায়ী। এ বিষয়ে সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সর্দার আবদুল হামিদ ভোরের কাগজকে বলেন, মাথামোটা প্রশাসনের কারণে

প্রতি বছর লোকসান গুনছে পাটকলগুলো। বিজেএমসির অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা লোকসান হয়। কিন্তু এই বিষয়ে কোনো তদন্ত না করে দায়ী করা হয় শ্রমিকদের। তিনি আরো বলেন, আমরা ৬টি করপোরেশন মিলে আন্দোলন করলাম। আমরা ছাড়া সবারই মজুরি বাস্তবায়ন হলো। কিন্তু দুঃখজনক আমাদের মজুরিই বাস্তবায়ন হলো না। তাই আমরা ১১ দফা দাবিতে আমরণ অনশনে নেমেছি। জানা গেছে, পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে আমরণ অনশন কর্মসূচি চলছে। কর্মসূচির তৃতীয় দিন গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে অসুস্থ শ্রমিকের সংখ্যা। এর আগে মঙ্গলবার থেকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের শ্রমিকরা। আন্দোলনে থাকা পাটকলগুলো হচ্ছেÑ ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল, স্টার জুট মিল, আলিম জুট মিল ও ইস্টার্ন জুট মিল, কার্পেটিং জুট মিল ও জেজেআই জুট মিল।

এদিকে, রাজশাহী জুট মিলের আরো ৭ শ্রমিক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জুট মিলের সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জিল্লুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের উৎপাদিত পাটপণ্য বিদেশে বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। কিন্তু আমরা অতি কষ্টে জীবনযাপন করি, ঠিক মতো মজুরি পাই না। অথচ পাটকলের লোকসানের জন্য দায়ী বিজেএমসির কর্মকর্তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। আর শ্রমিকদের সঞ্চয়ের টাকাও ইতোমধ্যে খরচ করে ফেলছে বিজেএমসি। গত ৬ বছর যারা অবসরে গেছেন তারা পিএফ ফান্ডের টাকাও পাচ্ছেন না। এসব বিষয়ে দফায় দফায় বিজেএমসির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রউফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার ব্যক্তিগত ফোন রিসিভ করেন তারই সহকারী। কিন্তু এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। সেই সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলার অথরিটি তিনি নন বলে নামও প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি। পরবর্তীতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিজেএমসির চেয়ারম্যানের সেল ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App