×

সাহিত্য

নজর কাড়ছে অসংখ্য বইয়ের ‘বুকশপ’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:০৮ পিএম

নজর কাড়ছে অসংখ্য বইয়ের ‘বুকশপ’

কোলাহলমুখর এই ব্যস্ত শহরে অন্যরকম এক জগতে ঢুকে পরলাম। চোখ ধাঁধিয়ে গেল। মাটি থেকে শুরু করে মাথার উপর পর্যন্ত বিশাল জায়গাজুড়ে অসংখ্য বই সারি সারি করে সাজানো। যেখানে বই কেনা ও দেখার ফাঁকে কফির পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে আড্ডা দেয়া যায়। গান শোনা যায়। ডুব দেয়া যায় সিনেমায়ও। পাঠক সৃষ্টির লক্ষ্যে সেখানে প্রতিদিনই থাকে বইমেলা। শুধু তাই নয়, পাঠকরা সারাদিন বই পড়ছেন, বই কিনছেন, বই নিয়ে আলোচনা করছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে কোনো বয়সের পাঠকই নিরাশ হবে না এখানে এসে। বেছে নিতে পারবে নিজের খেয়াল-খুশিমতো বই।

২০১০ সালের ১২ মার্চ দেশের প্রথম চেইন বুকশপ হিসেবে যাত্রা শুরু হয় পিবিএসের।  চার হাজার বর্গফুটের বিশাল পরিসরে দুই লাখ বই পড়ার আয়োজন রয়েছে; পিবিএসের পর একে একে এসেছে পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র, পূর্ব-পশ্চিম, দীপনপুর এবং সবশেষে বেঙ্গল বই। এরপর যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রামের বাতিঘর। দীপনপুর, কবিতা ক্যাফে আর বেঙ্গল বই আসার পর তরুণ-তরুণীদের মাঝে জনপ্রিয়তা পায়।

পিবিএস : শান্তিনগর মোড়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সড়কের ৪৩ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় এ বুক সেন্টার। জানা যায়, পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স লিমিটেডের তিন পরিচালক কামরুল হাসান শায়ক, আবদুল্লাহ আল বাকী ও কাওসার হাসানের পরিকল্পনায় গড়ে ওঠে এ প্রতিষ্ঠান। যেখানে দেশের সব স্বনামধন্য প্রকাশনীর গুরুত্বপূর্ণ বই তো রয়েছেই, তেমনি রয়েছে বিদেশের খ্যাতিমান প্রকাশনীর বইও। রয়েছে ছোটদের বিশাল বইয়ের সমাহার। পাশেই রয়েছে শিশুদের খেলার জায়গা, ছবি আঁকার জন্য রঙিন ভুবন। ধানমন্ডি ও উত্তরা শাখায়ও বেশ বড় পরিসরে চেইন বুকশপের মাধ্যমে বইয়ের বিক্রি শুরু করে পিবিএস। সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। বইপ্রেমীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে পিবিএস। এ ছাড়া প্রতিটি শাখায় রয়েছে বইয়ের পাশাপাশি গিফট আইটেমের বিপুল সমারোহ।

পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র :  শাহবাগে আজিজ  সুপার মার্কেটের উল্টো পাশেই এর অবস্থান। ২০১৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র। পাঠক সমাবেশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হিসেবেও বেশ নাম করা। ১৯৮৭ সালে যাত্রা শুরু করে প্রকাশনা সংস্থা পাঠক সমাবেশ। দীর্ঘ পথচলায় রুচিশীল নানা বিষয়ের বই প্রকাশ করে পাঠকদের দৃষ্টি আর্কষণ করা এ প্রকাশনা সংস্থটি থেকে ২০১৪ সালে একটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠান হিসেবে চালু করে পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র। যা ঢাকা শহরের দ্বিতীয় বইঘর। শাহবাগের পাশাপাশি গুলশান লিংক রোডেও পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রের আরেকটি শাখা রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম বিজু।এখানে প্রায় লক্ষাধিক বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। এখানে বই বসে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

পূর্ব-পশ্চিম : শুক্রাবাদের মেট্রো শপিংমলের ঠিক বিপরীতে পূর্ব-পশ্চিমের অবস্থান। ২০১৬ সালের ১৬ জুন যাত্রা শুরু করে ঢাকার শহরের এ জনপ্রিয় বইঘর- পূর্ব-পশ্চিম। দেশের স্বনামধন্য চারটি প্রকাশনা সংস্থা আগামী প্রকাশনী, পাঞ্জেরি পাবলিকেশনস, জ্যার্নিম্যান বুকস এবং অন্যপ্রকাশ যৌথভাবে পূর্ব-পশ্চিম বইঘরটি চালু করেছে। চার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে একটি পরিচালনা পর্ষদ। যার প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গনি।

দীপনপুর : ২০১৭ সালের ১২ জুলাই দীপনের ৪৫তম জন্মদিনে চালু করা হয় বইঘর ‘দীপনপুর’। পুরো বইঘরটিতেই ছড়িয়ে রয়েছে ফয়সাল আরেফিন দীপনের স্মৃতি। জঙ্গি হামলায় নিহত জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্যই দীপনপুর গড়ে তুলেছেন তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি।

কাঁটাবন মোড় থেকে খানিকটা এগুলেই অটবির শোরুমের দোতলায় দীপনপুরের অবস্থান। প্রায় ২০ হাজার বইয়ের সমারোহ দীপনপুরজুড়ে। সেখানে যেকোনো বয়সের পাঠক এসে বই পড়তে পারবেন। এ ছাড়াও যেকোনো বইয়ের অর্ডার দিলে দীপনপুরের কর্মীরা আপনার ঘরে পৌঁছে দেবে বইটি। শিশুদের জন্য রয়েছে ‘দীপান্তর’। এর পুরোটাই শিশুতোষ বই দিয়ে সাজানো। রয়েছে কিছু খেলনাও। তবে সেগুলোও শিক্ষামূলক। তেপান্তরের মাঠের মতো সবুজ ঘাসের আদলে সাজানো এ জায়গাটি বড় পছন্দের শিশুদের কাছে।

বইপড়া, গল্প-আড্ডার সঙ্গে এখানে রয়েছে চা-কফি, জুস কিংবা হালকা খাবার। রয়েছে ক্যাটারিং সার্ভিসও। এ ছাড়াও বয়স্ক পাঠকদের নিরিবিলিতে বই পড়ার জন্য রয়েছে ‘সিনিয়র সিটিজেন কর্নার’। এ ছাড়াও সেখানে রয়েছে প্রার্থনা কক্ষ।

বেঙ্গল বই : শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রাজধানীর লালমাটিয়ার ডি-ব্লকের ১/৩ নম্বর বাড়িতে বেঙ্গল বইয়ের অবস্থান। ১২ হাজার বর্গফুটের জায়গা নিয়ে বেঙ্গল বই। যেখানে প্রদর্শন করা হচ্ছে প্রায় লাখখানেক বই। ‘বইয়ের মাঝে ডুব’- এ প্রতিপাদ্যে শুরু হওয়া এই বইঘরটিতে আসলেই বইয়ের মাঝে ডুব দেয়ার সব ব্যবস্থা রয়েছে। ধানমন্ডির সাবেক ২৭ নম্বরের মুখে মীনা বাজারের গলির মুখে দাঁড়াতেই নজরে আসে বেঙ্গল বই। নিচতলার একপাশে বেশ এলোমেলো সাজানো হয়েছে অনেকগুলো বই। নিচের তলায় সম্পূর্ণ আয়োজনটির শিরোনাম- ‘বৈঠকখানা’। যেখানে পুরনো বইয়ের সঙ্গে রয়েছে চা-সিঙ্গারার মতো হালকা নাস্তার ব্যবস্থা। আর প্রতি শুক্র ও শনিবার সকালে এখানে রয়েছে লুচি আর খিচুড়ি খাওয়ার ব্যবস্থা। নিচতলাতেই রয়েছে খোলা লন।

দ্বিতীয় তলা থেকেই মূলত বইয়ের আয়োজন শুরু। ‘বইয়ের হাট’ শিরোনামের এ আয়োজনে দেশ-বিদেশের অসংখ্য বইয়ের সংগ্রহ। বাংলাদেশের ২৫টি ও ভারতে ১৫টি প্রকাশনার বই পাওয়া যাবে এখানে। গল্প, উপন্যাস থেকে শুরু করে মিলবে শিল্পকলা, সাহিত্য, স্থাপত্যবিষয়ক বইও। বাংলাদেশের প্রকাশিত যেকোনো বই ২০ শতাংশ ছাড়ে কিনতে পারবেন।

তৃতীয় তলার আয়োজন শিশুদের জন্য। ‘আকাশকুসুম’ নামের এ আয়োজনের চারপাশে রয়েছে শিশুতোষ সজ্জা। যার মাঝে হেসেখেলে শিশুরা পড়তে পারবে নিজেদের প্রিয় বইগুলো। তাদের বসার আয়োজনটিও দারুণ। কোথাও চারকোনা কিংবা কোথাও গোল করে বসার ব্যবস্থা রয়েছে শিশুদের। আর সে সঙ্গে রয়েছে ছোট্ট একটি মঞ্চও। যেখানে শিশুদের জন্য গল্পবলার আয়োজনও রয়েছে নিয়মিত। আকাশকুসুমের একপ্রান্তে রয়েছে শিশুদের একাডেমিক বই ও নানা স্টেশনারি পণ্যের আয়োজন। ‘ইসকুলের বই’ ও ‘খাতাকলম’ শিরোনামের এ আয়োজনে শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি চিত্রকর ও স্থপতিদের জন্য রয়েছে নানা স্টেশনারি পণ্য।

বাতিঘর : ২০০৫ সালে চট্টগ্রামের চেরাগিপাহাড় মোড়ে ছোট্ট পরিসরে শুরু হয় বাতিঘর। এরপর ২০১২ সালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ভবনে প্রায় তিন হাজার বর্গফুটের বিস্তৃত পরিসরে পুরনো জাহাজের আদলে সম্প্রসারিত হয় ‘বাতিঘর’। যেন পুরো চট্টগ্রামকেই পাল্টে দিল বাতিঘর। চট্টগ্রামে সফলতার পর ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার বাংলামোটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনের অষ্টম তলায় যাত্রা শুরু করে ঢাকা শাখা। দেশি-বিদেশি এক হাজার প্রকাশনা সংস্থা, ১০ হাজার লেখক এবং এক লাখের উপরে বই নিয়ে মুঘল স্থাপত্য লালবাগ কেল্লার আদলে নির্মিত হয়েছে ‘বাতিঘর’। চালুর পর থেকেই বইপ্রেমীদের অন্যতম আড্ডাস্থল হয়েছে বাতিঘর।

শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা শাখার বিষয়াবলির পাশাপাশি খেলাধুলা, রাজনীতি ও সমকালীন বিজ্ঞান, দর্শন আর লোকসংস্কৃতির ওপর রচিত লক্ষাধিক বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে ‘বাতিঘর’-এ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App