×

বিনোদন

গানই যখন প্রেরণার হাতিয়ার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০২:৪৮ পিএম

গানই যখন প্রেরণার হাতিয়ার

গান মানুষের হৃদয়ানুভূতির চালক। আনন্দ-বেদনার ভাষা যেমন গান, তেমনই প্রতিবাদের ভাষাও গান। আন্দোলন, প্রতিবাদ-প্রতিরোধে যুগ যুগ ধরে মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে হাজারো গান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও তেমনই রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও অনুপ্রেরণার উৎস ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত গান। কখনোবা এ দেশের বীর সন্তানেরাই যুদ্ধক্ষেত্রে রচনা করেছেন বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান। যেসব গান গণসঙ্গীত হিসেবে পরিচিত।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা যুগাতে ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চের প্রভাতী অধিবেশনে প্রথম বার শাহনাজ বেগম রহমতুল্লাহর গাওয়া ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি বাজানো হয়। গানটির গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং সুর করেছিলেন আনোয়ার পারভেজ। সেদিন দুপুরেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় চট্টগ্রামের কালুরঘাটের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। এর পর থেকে ভারতের আগরতলা ও কলকাতার বালিগঞ্জ রোড থেকে সম্প্রচারিত হয় স্বাধীন বাংলা বেতার। সেখানে যুদ্ধের খবরের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাসী শক্তির প্রেরণা যুগাতে প্রচার করা হতো বিভিন্ন কালজয়ী গান।

যুদ্ধকালীন সময়ে বাজানো গানগুলোর মধ্যে ‘একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’, ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’, ‘নোঙর তোল তোল’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’, ‘আমার সোনার বাংলা’ শিরোনামের গানগুলো উল্লেখযোগ্য। সে সময় দেশের সাত কোটি মানুষকে উজ্জীবিত রাখতে গানগুলো যারা গেয়েছিলেন তারা কণ্ঠযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে কামাল লোহানী, মঞ্জুশ্রী নিয়োগী, মাহমুদুর রহমান বেনু, শহীদ হাসান, আব্দুল জব্বার, রথীন্দ্র নাথ রায়, শাহীন সামাদ প্রমুখ কণ্ঠশিল্পীরা উল্লেখযোগ্য। তাদের কেউ কেউ বেতার কেন্দ্রের পাশাপাশি সরাসরি রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ছিলেন। কখনোবা গান গেয়ে যুদ্ধের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহে এগিয়ে এসেছেন কলকাতার সলিল চৌধুরী, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, আরতি মুখার্জি প্রমুখ কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পীরাও।

একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে অস্ত্র হাতে বেরিয়ে পড়েছিলেন রক সম্রাট আজম খান। যুদ্ধের দিনগুলো নিয়ে তিনি বলেন, গণসঙ্গীত গাইতে গাইতে ’৭১ সালে যুদ্ধে গেলাম, সেখানে ক্যাম্পে সবাই মিলে গান গাইতাম- রাতের বেলায় শালবনে পাহাড়ি এলাকায়। আগরতলায় মেলাঘর ক্যাম্পে আমরা বিরাট একটা গণসঙ্গীতের আয়োজন করেছিলাম। তারপর ফ্রন্টে চলে যাই। পরে ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধের জন্য চলে আসি। হাতে রাইফেল, কণ্ঠে মুক্তির গান গেয়ে ১৯৭১-এর অস্থির সময়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল এ দেশের লাখো সূর্য সন্তান। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ভিনদেশী রকস্টাররাও।

১৯৭১-এর ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে যুদ্ধরত বাংলাদেশকে অর্থ সহযোগিতা ও বিশ্ব দরবারে যুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরতে আয়োজন করা হয়েছিল ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। সেই কনসার্টে পারফর্ম করেছিল জর্জ হ্যারিসন, রবিশঙ্কর, রিঙ্গো স্টার, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিস্টন, বব ডিলান, জোয়ান বায়েজ, লিও রাসেল, ওস্তাদ আলী আকবর খান, আল্লারাখখার মতো বিশ^বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীরা। গানে গানে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরেছিলেন সেদিন। ১৯৭১-এর দিনগুলোতে গান ছিল বিজয় মন্ত্র। যে গানের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল হাজার হাজার যুবক। রাব্বানী রাব্বি

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App