×

পুরনো খবর

এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে

Icon

nakib

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:৪৯ পিএম

অন্যরা কীভাবে দেখবেন সেটি আমি জানি না, তবে পাকিস্তান যে সবার শেষে লাইনে দাঁড়াবে সেটি কখনো কাউকে কল্পনা বা আশঙ্কা করতে হয়নি। পাকিস্তানের বৈশিষ্ট্যই এমন যে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ধর্মান্ধতা ছাড়া বাকি সব বিষয়েই পাকিস্তান তালিকার শেষ দেশটি। আমাদের ওপর ঔপনিবেশিক শাসন কায়েমকারী ২৩ বছর শাসন-শোষণ করা ও ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভকারী দেশটি সামরিক শাসন, একনায়কত্ব, মৌলবাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কবলে এমনভাবে ধর্ষিত হয়েছে যে দেশটিকে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্র না বলে সত্য বলার উপায়ও নেই। অর্থনৈতিক সূচক তো বটেই সামাজিকভাবে পাকিস্তান এখন ধ্বংস হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এরই মাঝে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের মানুষ নিজেদের সিন্ধু দেশের অধিবাসী বলে গণ্য করতে শুরু করেছে এবং একটি স্বাধীনতাকামী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। সেই দেশটি বাংলাদেশের ১১ বছর পরে ডিজিটালাইজেশনের কথা বলবে তাতে অবাক হওয়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। কাশ্মির বা আফগানিস্তানে জঙ্গি রপ্তানি করা পাকিস্তানের জন্য যতটা সহজ ডিজিটাল কর্মসূচি গ্রহণ করা ততটা সহজ নয়। বাস্তবে সেটাই ঘটল। তবুও ডিজিটাল পাকিস্তানকে স্বাগত জানাই। তবে বলতে হচ্ছে; পাকিস্তান নামক একটি গন্ডারের অবশেষে কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙল বা এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে। তাতেই অন্তত পাকিস্তানিদের প্রশান্তি। পাকিস্তানের ডন পত্রিকাসহ সব গণমাধ্যমের ৬ ডিসেম্বরের শীর্ষ শিরোনাম ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ডিজিটাল পাকিস্তান কর্মসূচি ঘোষণা। সেই সূত্র ধরে বাংলাদেশের মিডিয়াও বসে নেই। আমি টেকশহর নামক একটি বাংলাদেশি অনলাইন গণমাধ্যমের খবর এখানে উদ্ধৃত করছি। এটি এক ধরনের আলসেমি। খবরটার ইংরেজি সংস্করণ করাচির ডন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। আমি ওখান থেকে না নিয়ে কষ্ট করে বাংলায় উপস্থাপন করা টেকশহরের খবরটি উদ্ধৃত করছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন করছে বংলাদেশ। দেশ-বিদেশে ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার কথা যখন মুখে মুখে ঠিক সেই সময় এসে পাকিস্তান তাদের ডিজিটাল হওয়ার কথা ঘোষণা করল। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রধান ইমরান খান গত ৫ ডিসেম্বর দেশটিতে ডিজিটাল পাকিস্তান ক্যাম্পেইনের ঘোষণা দিয়েছেন। পাকিস্তান ডিজিটাল ক্যাম্পেইন ঘোষণার প্রায় এক যুগ আগে বাংলাদেশ ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করে। বাংলাদেশ সরকার যখন তার প্রায় সব ধরনের সেবা দেশের জনগণের জন্য হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে তখন পাকিস্তান সবে শুরু করতে যাচ্ছে। ইমরান খান বলেন, যে বিষয়গুলোতে সরকার এখন নজর দেবে এর মধ্যে প্রধান হবে ডিজিটাল পাকিস্তান। এটি তরুণদের জন্য অপরিহার্য। পাকিস্তান তরুণ জনগোষ্ঠীর দিক দিয়ে দ্বিতীয় প্রধান দেশ। তাই তরুণদের কাজে লাগাতে হবে ডিজিটাল কাজে। নারীরাও এ খাতে অনেক কাজের সুযোগ পাবেন বলেও জানান তিনি। দেশটির সাবেক এই ক্রিকেটার বলেন, ই-কমার্স এবং ই-গভর্ন্যান্স যে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেহারাই বদলে দিতে পারে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত আমি ডিজিটালাইজেশনের পথে এগোতে অনেক বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। কিন্তু তারপরও আমাদের একসঙ্গে কাজ করে দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে। অনুষ্ঠানে দেশটির তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আগামী তিন মাসের মধ্যে ডিজিটাল পাকিস্তানের রূপরেখা সবার সামনে তুলে ধরবেন বলে জানান। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে ডিজিটাল পাকিস্তান ধারণা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমেরিকায় পড়াশোনাকারী গুগলের সাবেক সিনিয়র নির্বাহী তানিয়া আড্রুসকে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যেদিন ডিজিটাল পাকিস্তান কর্মসূচি ঘোষণা করেন সেদিনই তানিয়া তার দেশের নীতি-নির্ধারকদের সামনে ডিজিটাল পাকিস্তান কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। ২০১৯ সালে দাঁড়িয়ে তানিয়াকে বলতে হয়েছে যে, সেই দেশটির বড় সম্পদের নাম মানুষ- নতুন প্রজন্মের মানুষ। তার দেয়া তথ্যানুসারে পাকিস্তানে ২৫ বছরের কম বয়সের ১০ কোটি (মোট জনসংখ্যা ২০ কোটি) মানুষ আছে এবং তারাই পাকিস্তানের সম্পদ। তানিয়া পাকিস্তানের ৭ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কথাও উল্লেখ করেন। তানিয়ার লক্ষ্য অনুসারে আমি চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পেলাম। তানিয়া মনে করেন, সংযুক্তি হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার মতে একইভাবে তথ্যে প্রবেশাধিকার অতি প্রয়োজনীয়। তিনি দ্বিতীয় অগ্রাধিকার প্রদান করেন ডিজিটাল অবকাঠামোর ওপর। তিনি যদি সংযুক্তি ও অবকাঠামোকে একই এজেন্ডা হিসেবে দেখতেন তবে সম্ভবত সঠিক কাজটি হতো। তানিয়ার তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে মানবসম্পদ। চতুর্থটি হলো উদ্ভাবন ও উদ্যোগ। একেবারে নিরপেক্ষভাবে বললে তানিয়ার ভাবনা দুনিয়াছাড়া নয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশই তার ডিজিটালাইজেশনে এসব বিষয়কে গুরুত্ব প্রদান করে। আমরা বাংলাদেশ অর্থনীতি-ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার কর্মসূচি হাতে নিয়েছি এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সংকল্প গ্রহণ করেছি। তাদের বঙ্গবন্ধু নেই, স্বপ্নের পাকিস্তান গড়ারও তেমন কিছু নেই। বরং মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বজুড়ে নিন্দিত হওয়ার সুযোগই তাদের বেশি। তানিয়ার ইতিহাস পড়তে গিয়েই আমি বিস্মিত হয়ে পড়েছি যে, ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বরে ডিজিটাল পাকিস্তান ঘোষণা করা হলেও বস্তুত ডিজিটাল পাকিস্তান নিয়ে পাকিস্তানে আলোচনা হচ্ছে আরো আগে থেকে। আমি করাচির বিখ্যাত ডন পত্রিকায় ১৫ মার্চ ২০১৭ সালে নাদিম হোসেন নামক একজনের একটি নিবন্ধ পেয়েছি, যাতে তিনি পাকিস্তানিদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে আসছিলেন যে বিশ্বটা ডিজিটাল বিপ্লব করছে এবং পাকিস্তান সেই বিপ্লব থেকে দূরে থাকতে পারে না। তিনি ডিজিটাল প্রযুক্তির আবশ্যকতাকে নতুন একটি মহাসড়ক বা একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের ১৯১৬ সালের একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে লিখেন, The Huawei Global Connectivity Index 2016 assessed 50 countries. Combined, these accounted for 78pc of the global population and 90pc of global GDP. Unsurprisingly, Pakistan occupied the 50th slot in a list of 50. We were also ranked last in competitiveness, innovation and productivity. May be comparing Pakistan on a global basis is unfair. However, even if we were to compare key ICT indicators such as total mobile penetration, unique mobile subscribers, 3G/4G and smartphone penetration with South Asian countries like Bangladesh and Srilanka, we still lag behind. This is to be expected as we not only lack a national digital policy, we have also not invested in the bare minimum required to lay the foundations of ICT. In order to create the road map for Digital Pakistan, we must first identify the backbone of digitalisation, the digital enablers, and finally create the required digital ecosystem. পঞ্চাশটি দেশের মাঝে ৫০তম দেশ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে খুব স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ পাকিস্তানি নাদিম হোসেন তার নিবন্ধে এই বিষয়ে দুঃখ ও বেদনা প্রকাশ করার পাশাপাশি অবিলম্বে ইন্টারনেটের প্রসার তথা ব্রডব্যান্ডের সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে নাদিম হোসেনের ক্ষোভের যথাযথ কারণও রয়েছে। পাকিস্তানের আইটি ও টেলিকম মন্ত্রণালয় সুদীর্ঘ সময়জুড়ে ডিজিটাল পাকিস্তান নীতিমালা প্রণয়ন করলেও দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সেটি অনুমোদন করেননি। অবশেষে গাধার পানি ঘোলা করে খাবার মতো চারপাশে প্রচন্ড চাপ অনুভব করে ২০১৮ সালের ২২ মে ইমরান খান ডিজিটাল পাকিস্তান নীতিমালা মন্ত্রিপরিষদে পাস করেন। তানিয়া নিজে বলেছেন যে, তাকে মেইল দিয়ে ইমরান খানকে সচেতন করতে হয়েছে। একদিকে ধন্যবাদ দিই পাকিস্তানকে যে তারা অন্তত তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালার বদলে ডিজিটাল পাকিস্তান নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। আমি সেই আদিকাল থেকে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালাকে ডিজিটাল বাংলাদেশ নীতিমালা হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেও সফল হইনি। বিশেষ করে ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমাদের পন্ডিত ব্যক্তিরা যখন তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালার নতুন সংস্করণ তৈরি করেন তখন তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দটিই গ্রহণ করতে সম্মত হননি। এখন টের পাচ্ছি আমাদের মাঝেও তখনো পাকিস্তানি ভ‚ত বিরাজ করছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যদি ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা না করতেন তবে এখনো আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ও ই-এর জগতে বাস করতাম। এ কথা সত্য যে, সারা দুনিয়াতেই ডিজিটাল শব্দটি প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে খুব সম্প্রতি। আমি নিশ্চিতভাবেই এ কথা বলতে পারি যে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না থাকলে আমরা কেবল যে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা থেকে বঞ্চিত হতাম তাই নয় বরং গত ১১ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে অভাবনীয় কর্মকান্ড অব্যাহত আছে তাও মোটেই হতো না। আমি এখনো প্রতিটি ক্ষেত্রেই লক্ষ করি যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতটা সামনে যেতে বলেন আমরা সরকারের লোকজন তার গতিতে চলতে পারি না। আমি এটাও নিশ্চিত যে, শেখ হাসিনার গতিতে আমরা কাজ করতে পারলে আমাদের আজকের অগ্রগতি আরো বহুদূর যেতে পারত। যা হোক তবুও বাংলাদেশ ডিজিটাল রূপান্তরের অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। বিদ্যমান অবস্থাতে আমাদের নতুন প্রজন্মকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই যে বাংলাদেশের চেয়ে ২৩ বছর আগে স্বাধীন হওয়া পাকিস্তান বাংলাদেশের ১১ বছর পরে তার দেখানো পথে হাঁটতে শুরু করল। বাঙালি ও বাংলাদেশের পথ অনুসরণ করার জন্য স্বাগত জানাই হে পাকিস্তান। তোমরা আমাদের জাতির পিতার পথ ধর ও আমাদের সোনার বাংলার রূপরেখা অনুসরণ কর। মনে রেখ ২০৪১ সালে আমরা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করছি যখন আমাদের দেশটি উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে।

মোস্তাফা জব্বার : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App