×

জাতীয়

স্বাধীনতা স্তম্ভে শেকড় সন্ধান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:২৩ এএম

প্রস্থ ১৬ ফুট এবং উচ্চতা ১৫০ ফুট। উপরিভাগে রয়েছে স্বচ্ছ কাঁচ, যা সূর্যের আলো প্রতিসরিত ও প্রতিফলিত করে। রাতে আলোকচ্ছটা তৈরির জন্য রয়েছে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা। কৃত্রিম আলোর প্রজেকশনে টাওয়ার ও নিচের জলাধার সৃষ্টি করে এক নয়নাভিরাম পরিবেশের। ইস্পাতের কাঠামোর উপর নির্মিত এই গ্লাভস টাওয়ার ছাড়াও এই কমপ্লেক্সে রয়েছে পাতাল জাদুঘর, ম্যুরাল এবং শিখা চিরন্তন। রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের লিখিত অনুলিপি।

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এখানেই ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই উদ্যানেই নির্মিত হয়েছে এ গ্লাভস টাওয়ার। এ টাওয়ারের নিচেই রয়েছে ভূগর্ভস্থ মিউজিয়াম। এ মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত নানা ঐতিহাসিক ঘটনাবলির ছবি। আর ভূগর্ভস্থ জাদুঘরের প্রবেশমুখে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রায় সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে টেরাকোটা ম্যুরালের মধ্য দিয়ে। ম্যুরালের প্রথম অংশে দৃশ্যমান বাঙালির চিরচেনা সেই বাক্য ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা। পর্যায়ক্রমে এ ম্যুরালে স্থান পেয়েছে তেভাগা আন্দোলনের চিত্র। টাওয়ারের পাশেই রয়েছে শিখা চিরন্তন।

তবে দীর্ঘ দুই যুগ আগে নেয়া প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ কাজ বাস্তবায়িত হয়নি আজও। এ লক্ষ্যে ‘ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ’ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায় সম্প্রসারণ কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজের শতকরা ৩০ শতাংশ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এর আওতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দেয়ার স্থানটিতে এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে দুটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রদানের স্থানটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দানরত

১৮ ফুট দীর্ঘ একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ও মুক্তিকামী জনগণের আত্মত্যাগের মহিমা তুলে ধরার জন্য ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ’ প্রকল্পটি ১৯৯৮ সালের ২৯ অক্টোবর একনেকে অনুমোদিত হয়। কিন্তু প্রকল্পটি অসমাপ্ত অবস্থায় ২০০৫ সালের জুনে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে অসম্পূর্ণ থাকা ১৫০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট স্বাধীনতা স্তম্ভসহ অন্যান্য কিছু কাজ ২০১২ সালের জুনে শেষ করা হয়। তবে দ্বিতীয় পর্যায়েও প্রকল্পে উদ্যানটির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেমন- ৭ মার্চের ভাষণ, ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানগুলো এখনো সংরক্ষণ করা হয়নি।

এই ঐতিহাসিক স্থাপনার অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমি চাই এই প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত সম্পন্ন হোক। তিনি প্রকল্পগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ভোরের কাগজকে বলেন, কাজের ৩০ শতাংশ আগেই বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি কাজের টেন্ডার হয়েছে। মুজিববর্ষে কাজের অগ্রগতি হবে। তবে আমাদের টার্গেট স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের আগেই আমরা পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প বাস্তবায়ন করব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App