×

শিক্ষা

সান্ধ্যকোর্স বন্ধের নির্দেশনা নিয়ে নানা প্রশ্ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:০১ এএম

সান্ধ্যকোর্স বন্ধের নির্দেশনা নিয়ে নানা প্রশ্ন

হঠাৎ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশনা নিয়ে নানা বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে। বন্ধের সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য না পেয়ে অনেকেই বলেছেন, কবে থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে? যারা এখন সান্ধ্যকালীন কোর্সে পড়াশোনা করছেন তাদের কী হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে চটজলদি পাওয়া যায়নি। বরং ঘুরিয়ে কমিশন সান্ধ্যকোর্স বন্ধের দায়টি উপাচার্যদের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে গতকাল জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্সে নতুনভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি না করার জন্য আদিষ্ট হয়ে অনুরোধ করা হলো। তবে সান্ধ্যকালীন কোর্সে যারা এখন পড়াশোনা করছেন তাদের কোর্স শেষ করার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না।

গত ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও আচার্য মো. আবদুল হামিদের দেয়া বক্তব্যের দুদিনের মাথায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত বুধবার সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাছে চিঠিতে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধসহ ১৩ দফা নির্দেশনা পাঠানো হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ নিয়ে ইউজিসি যে নির্দেশনা দিয়েছে তাতে কিছুটা ‘শুভংকরের ফাঁকি’ রয়েছে। সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের নির্দেশনা দিলেও ইউজিসি সেই নির্দেশনায় বলেনি যে কবে থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এর ফলে যারা বর্তমানে সান্ধ্যকালীন কোর্সে পড়াশোনা করছেন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত রয়েছেন। এরপর থেকেই নানা প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়। তবে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেছেন, এটা ঠিক যে, কবে থেকে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ হবে তার সুস্পষ্ট দিন-তারিখ নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়নি।

ইউজিসি ওই নির্দেশনায় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যদের শুধু স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ে প্রবলেম আছে। এগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তাহলে এখন যারা সান্ধ্যকালীন কোর্সে পড়াশুনা করছেন তাদের কি হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, এখন যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স চলছে সেগুলোকে তো বাদ দিতে বলছি না। সামনে যাতে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স না চলে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে ওই নির্দেশনার মাধ্যমে। তিনি বলেন, সান্ধ্যকালীন কোর্স চালাতে বহু উপাচার্যের অনীহা রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে এই কোর্স চালানোর অনুমতি দিতে হয় উপাচার্যদের। এখন ইউজিসির এই নির্দেশনা পাওয়ায় আইন অনুযায়ী উপাচার্যরা সান্ধ্যকালীন কোর্সের অনুমতি দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারবেন। তিনি বলেন, সান্ধ্যকালীন কোর্স যাতে না চলে সে বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, আমরা বলেছি। এখন উপাচার্যরা ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করছি। সবকিছু তো ‘আল্লাহর ওয়াস্তে ’ চলতে পারে না। আর সবকিছু তো নিয়ম করে বাস্তবায়নও করা যায় না। সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি এগিয়ে এসেছেন, আমরা এগিয়ে এসেছি, এখন আমরা চাই তারাও (উপাচার্যরা) এগিয়ে আসুক। কারণ এটা জাতির ডিমান্ড।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ৮০টি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু আছে। সর্বোচ্চ ১৮টি পর্যন্ত কোর্স চালু আছে আইবিএতে, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ৯টি বিভাগে আছে ১৬টি। সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে আছে ৬টি। বর্তমানে এসব কোর্সে অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছেন। এসব কোর্সের জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কোর্স চালু আছে। নতুন বিশ^বিদ্যালয়ের মধ্যে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও সান্ধ্য কোর্স চালু রয়েছে।

গত বুধবার ইউজিসি এই নির্দেশনা জারির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এতে কেউ বলেছেন, সান্ধ্যকোর্স অবশ্যই বন্ধ করা উচিত। দিনে শিক্ষকদের ক্লাসে পাওয়া না গেলেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে এসব শিক্ষকই নিয়মিত ক্লাশ নেন। টাকার কাছে শিক্ষক নামধারীরা এভাবেই বিক্রি হয়ে যায়। এটা শিক্ষকদের জন্য কলঙ্কজনক। ইউজিসির পরামর্শ কেউ শুনবে না প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির আদেশ দেবার মুরোদ নেই, দিচ্ছে পরামর্শ। তবে অনেকেই বলেছেন, সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ করলে লাভবান হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু কী সান্ধ্যকালীন কোর্সের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিচে নেমেছে?

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আক্তারুজ্জামান বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকোর্স বন্ধের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি ২০১৮ সালে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশকে কঠিন অনুশাসন মেনে নতুন করে দুটি বিভাগে সান্ধ্যকোর্স চালানোর অনুমতি দেইনি। চলমান কোর্সগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দেয়ার পর একাডেমিক কাউন্সিলে বসে বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হবে। কোনোভাবেই সান্ধ্যকোর্স আর থাকবে না বলে জানান তিনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. এম এ বারী বলেছেন, ইউজিসির ১৩ দফা নির্দেশনা পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার ডিনস কমিটিতে সান্ধ্যকোর্স নিয়ে বৈঠক করেছে। কীভাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশ এবং ইউজিসির নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে সক্রিয়ভাবে ভাবার কথা আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App