×

পুরনো খবর

ধিক্কৃত হবে মিয়ানমার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:২২ এএম

ধিক্কৃত হবে মিয়ানমার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হয় গণহত্যা। নারীদের করা হয় ধর্ষণ। দীর্ঘদিন চলে এই অত্যাচার। দেশ ছেড়ে পালিয়ে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। কিন্তু মিয়ানমার যেন কিছুই জানে না। নেই কোনো চাপ। তবে অবশেষে ইসলামিক দেশগুলোর সংগঠন ওআইসির পক্ষে গাম্বিয়ার করা মামলার মধ্য দিয়ে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে দেশটি। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) মামলার শুনানি শুরু হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। মামলার পুরো বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক বছর লাগতে পারে। তবে শুনানি শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারকে আইসিজে বেশকিছু অন্তর্বর্তী নির্দেশনা দিতে পারে। এতে মিয়ানমার ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি আদেশ না মানলে আন্তর্জাতিকভাবে দেশটি ধিক্কৃত হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, শাস্তির বিধান দিতে না পারলেও আইসিজে যদি এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা বা সুপারিশ করে, সেটি হবে বিশ্ব জনমতের প্রতিফলন। আদালতের এসব নির্দেশনা মিয়ানমার পালন না করলে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। ১৯৫৬ সালে জাতিসংঘের গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে মিয়ানমার আইসিজের যে কোনো নির্দেশনা মানতে বাধ্য। আর না মানলে আন্তর্জাতিকভাবে ধিকৃত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অবরোধের মুখোমুখি হতে হবে মিয়ানমারকে।

গাম্বিয়ার করা মামলায় ইতিবাচক ফল আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, বিষয়টির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা আগে থেকেই আছে। বিশেষ করে ওআইসির সদস্য হিসেবে আমরা কৌশল নির্ধারণ করি, সেখানে গাম্বিয়াকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অনেক বৈঠকে অংশ নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, এটা একটি প্রক্রিয়া। যেখানে সময় নির্ধারণ করে কিছু বলাটা একটু কঠিন। আমরা (মামলার বিষয়ে) অবশ্যই আশাবাদী। আশা করছি, রোহিঙ্গারা ন্যায়বিচার পাবে।

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যে বিচারটি হচ্ছে, জেনোসাইড কনভেনশন অনুযায়ী গণহত্যার বিষয় যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি অনিবার্য। তবে এটি নির্ভর করছে আদালতের আদেশের উপর। আইসিজের আদেশ মানতে বাধ্য মিয়ানমার। যদি তারা আদেশ না মানে সেক্ষেত্রে তারা আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে যেতে পারে। তাদের উপর বিভিন্ন অবরোধ আরোপ হতে পারে। রায় অবশ্যই রোহিঙ্গাদের পক্ষে আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের সুযোগ তৈরি হবে। তবে প্রত্যাবাসনের সুযোগ তৈরি হলেও তারা যেন সেখানে গিয়ে পুনরায় অত্যাচার নির্যাতনের শিকার না হয়, সে বিষয়টিও নজরে থাকতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুনানি শেষে আইসিজে একটা অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিতে পারে। সেই আদেশে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও থাকতে পারে। এ বিচার বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিয়ানমার গণহত্যা করেছে এবং করছে, এটি ঘোষণা হলেই তো যথেষ্ট। এ ঘোষণাতে মিয়ারমারের উপর আন্তর্জাতিকভাবে একটি প্রভাব পড়বে। মিয়ানমার আইসিজের আদেশ মানতে বাধ্য কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনত তারা আদেশ মানতে বাধ্য। কারণ তারা জাতিসংঘের অংশ। সুতরাং জাতিসংঘের সব সদস্যই এ আইন মানতে বাধ্য। আর যদি তারা আদেশ না মানে, তাহলে তারা আন্তর্জাতিকভাবে খেলাপি হবে। ফলে তারা আন্তর্জাতিকভাবে ধিকৃত হবে। পাশাপাশি তারা আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন অবরোধের মুখোমুখি হতে হবে। এ জন্য আমরা মনে করি তারা চাপে আছে, এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তারা পদক্ষেপ নেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন এ বিষয়ে বলেন, সু চির বিরুদ্ধে যে সমালোচনা সেটাতে নতুন করে যুক্ত করবে যে তিনি কতটা রাজনৈতিক স্বার্থে মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন। এটা রোহিঙ্গাদের পক্ষেই যাবে। আন্তর্জাতিক আদালতে ফিফটি পার্সেন্ট প্লাস ওয়ান যদি হয়, তাহলে কিন্তু আপনি জিতে গেলেন। তার মানে আপনার যুক্তি কিন্তু আদালত গ্রহণ করল। তিনি আরো বলেন, এটা যদি সুপারিশও হয়ে থাকে তাহলেও কিন্তু বিশ্ব জনমতের একটি প্রতিফলন। এটার কিন্তু আলাদা একটা ওজন রয়েছে। ফলে এ রায় চূড়ান্ত। আইসিজের আদেশ মানতে সব পক্ষই বাধ্য। পাশাপাশি আদালতের সব আদেশের কপি পাঠানো হবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। জড়িত কোনো রাষ্ট্র যদি আদেশ পালন না করে তবে অপর পক্ষের রাষ্ট্রটি চাইলে নিরাপত্তা পরিষদের কাছে প্রতিকার চাইতে পােির। জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থাও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে মিয়ানমারকে। পাশাপাশি রায় না মানলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কেও তার প্রভাব পড়তে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App