×

জাতীয়

আমরা তোমাদের ভুলবো না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৪৩ পিএম

আমরা তোমাদের ভুলবো না

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যার নীলনকশার ছক ছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’ পরিকল্পনারই অংশ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের গোটা সময় জুড়েই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। বেছে বেছে জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা করেছে। ২৫ মার্চ রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছিল।

বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য, পঙ্গু করার সেই ঘৃণ্য পরিকল্পনা সুচারুরূপে বাস্তবায়নে জঘণ্য ভূমিকা পালন করেছিল পাকিস্তানিদের এ দেশীয় দোসররা। রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সহায়তায় জাতির সহস্রাধিক শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করেছিল।

তবে সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ পরিচালিত হয় নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসানের ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে। একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসরদের সহায়তায় অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সহিত্যিকদের চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ক্ষতবিক্ষত লাশ ফেলে রেখে গিয়েছিল।

একাত্তরের বিজয়ের সূর্যোদয়ের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ১৪ ডিসেম্বরের সেই হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যতম বর্বর ঘটনা। যা সেদিন বিশ্বের শান্তিকামী মানুষকে হতবাক করে দিয়েছিল।

তবে পাকিস্তানি হানাদার আর এদেশীয় দোসররা ঠিক কতজন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল তার সঠিক সংখ্যা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। ১৯৭২ সালে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সঙ্কলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’ এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায় শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ৭০ জন। এর মধ্যে ৯৯০ জন প্রখ্যাত শিক্ষক, ১৩ জন সাংবাদিক, ৫০ জন চিকিৎসক, ৫০ জন আইনজীবী ও ১৮ জন লেখক, প্রকৌশলীসহ অন্যান্য বুদ্ধিজীবী।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় রয়েছেন অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিনসহ সহস্রাধিক।

প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর এলেই আমরা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন শহীদবুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করবে মানুষ। এবারও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনে দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে আছে সকালে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। ৮টা ৪৫ মিনিটে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।

দিবসটি উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলতনায়তনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App