×

জাতীয়

অসঙ্গতি নিয়েই চলছিল প্লাস্টিক কারখানাটি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০১:২৪ পিএম

অসঙ্গতি নিয়েই চলছিল প্লাস্টিক কারখানাটি

নিয়ম না মেনে স্থাপন ও মামলাসহ নানা অসঙ্গতির পরও কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ায় পুড়ে যাওয়া প্লাস্টিক কারখানাটি কীভাবে চলছিল তা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দগ্ধ হয়ে আহত ও নিহত হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন তারা। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাত পর্যন্ত দগ্ধ ১৩ জন বিভিন্ন সময়ে মারা গেছেন। এরমধ্যে ১০ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন দগ্ধ আরো ১৮ জন। তাদের সবারই শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং কেরানীগঞ্জের সাংসদ নসরুল হামিদ ঘটনার পরই দগ্ধ লোকজনকে দেখতে হাসপাতালে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান, কারখানাটির অনুমোদন ছিল না। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে থাকা কারখানাগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলা হলেও কারখানাগুলো সরানো যায়নি। এদিকে ঘটনাস্থলের আশপাশের

বাসিন্দা ও দগ্ধদের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, আগেও এ কারখানায় ছোট-বড় মিলিয়ে চারবার আগুন লেগেছিল। এ কারণে কেউ বাড়ি ভাড়া নিতেন না। যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত না করে কারখানা পরিচালনার অভিযোগ এনে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর প্রাইম প্লেট এন্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে গত ৫ নভেম্বর মামলা করেছে। মামলার ফয়সালা হওয়ার আগেই এ ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহজামান ভোরের কাগজকে জানান, ঘটনার পর থেকে কারখানার মালিক নজরুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় মালিকসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ার হিজলতলা আবাসিক এলাকার প্রাইম প্লেট এন্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর আবুল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটি আইন মেনে স্থাপন করা হয়নি। কারখানা পরিচালনায় মালিকের গাফিলতি রয়েছে। প্লাস্টিকের মতো দাহ্য পদার্থের এই কারখানাটির যেসব নিয়ম মেনে স্থাপন করার কথা, তার বেশির ভাগই নেই। এ ছাড়াও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোল্লা জালাল উদ্দিন জানান, বিষয়টি তারা তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করবেন না বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান ও দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশ দিতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়। এ ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দগ্ধদের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোল্লা জালাল উদ্দিনকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- যুগ্ম সচিব (শ্রম) এ টি এম সাইফুল ইসলাম, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ঢাকার উপমহাপরিদর্শক আহমেদ বেলাল ও একই অধিদপ্তরের উপমহাপরিচালক (সেইফটি) মো. কামরুল হাসান। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শকের মাধ্যমে ওই এলাকায় বিগত বছরে কতগুলো প্লাস্টিক কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে, তার প্রতিবেদনও দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। পরিদর্শন প্রতিবেদনসমূহের সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়েছে কিনা, না হয়ে থাকলে তার কারণ এবং ওই এলাকার প্লাস্টিক কারখানাগুলোর ঝুঁকি নির্ধারণ, ঝুঁকি নিরসনের সুপারিশও দিতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে ঢামেক হাসপাতালে দগ্ধদের দেখতে যান। গতকাল সকালে প্লাস্টিক কারখানায় গিয়ে কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া মালিক ও শ্রমিকদের কাউকে দেখা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কারখানার ভেতর বয়লারের পেছনে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হতো। ঘটনার দিন বুধবার বিকেলে প্রথমে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। তবে নিরাপত্তা কর্মীরা প্রথমে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App