×

আন্তর্জাতিক

হেগের আদালতের দিকে তাকিয়ে রোহিঙ্গারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৫:৫৫ পিএম

হেগের আদালতের দিকে তাকিয়ে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানির তিনদিন ধরেই কক্সবাজারের উখিয়া- টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের মধ্যে কৌতুহল ও উদ্বেগের শেষ ছিল না। ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার উদ্দেশ্যে গত মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সকাল থেকে প্রায় মসজিদ মক্তবেই দোয়া মাহফিল ও মোনাজাত করেছে রোহিঙ্গারা।

পাশাপাশি তারা টেলিভিশন, অনলাইন পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৃষ্টি রেখেছিল। কী হচ্ছে আদালতে তা দেখার জন্য ভিড়ও করতে দেখা যায়। অনেকে একত্রে বসে গল্পে মেতে উঠতে দেখা গেছে। সবারই একটি কথা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি দেশের সচেতন মহলও গাম্বিয়ার করা মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে, মিয়ানমারের রাখাইনে ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা, ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে আগুন ইত্যাদি মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দীর্ঘ দুই বছর পরে হলেও আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১০ ডিসেম্বর নেদাল্যান্ডের রাজধানী হেগে আদালতের শুনানি কার্যক্রম শুরু হয়। এতে অভিযুক্ত পক্ষ মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অংসান সূচির নেতৃত্বে একটি দল অংশ নেন।

অপরদিকে ১০ ডিসেম্বর থেকে রোহিঙ্গাদের অনেকে তাদের নিত্যদিনের কার্যক্রম বাদ দিয়ে চোখ কান খুলে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে থাকে। তারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার জন্য দেশের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে থেকে অনুমতি প্রার্থনা করে বিফল হয়। ফলে কোনো ধরণের কর্মসূচি গ্রহণ না করলেও মসজিদ মক্তবে রায় পক্ষে আসার জন্য দোয়া মাহফিল মোনাজাত অব্যাহত রাখে। অনেক নারী-পুরুষ রোজা রেখে দোয়া করছেন।

রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের গণহত্যা মামলার শুনানিতে হেগের বিশ্ব আদালতে মিয়ানমারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। এ নিয়ে কক্সবাজারের ৩৪ টি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণীর্থীর মাঝে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে কী হচ্ছে, তা নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিয়ানমারের গণহত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে আশা করেন আশ্রয় নেয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় সচেতন মহলও মিয়ানমারের দৃষ্টিমূলক শাস্তির দাবির পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে দিয়ে এতদাঞ্চলের দুর্ভোগ লাঘবের দাবি জানানো হয়।

এদিকে, আইসিজের শুনানিতে সরাসরি কোনো পক্ষ না হলেও গাম্বিয়াকে লজিস্টিক সহায়তা দেবে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয় বিভাগ) মাসুদ বিন মোমেন এক প্রতিনিধি দল নিয়ে দ্য হেগে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) পৌঁছেছেন। ২০ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া ৫ রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছেন। যাঁরা গাম্বিয়ার হয়ে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। দলে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিকেও রাখা হয়েছে। তারা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে হেগে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানিতে উপস্থিত থাকবেন।

মামলার শুনানি শুরুর আগেই মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে প্রচার শুরু হয়েছে। দেশটির রোহিঙ্গা মুসলিমদের সমর্থনকারী মানবাধিকার কর্মীরা বিশ্বব্যাপী এ প্রচার চালাচ্ছেন। ১০টি দেশের শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী সংগঠন ও ৩০ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা একযোগে এ প্রচার শুরু করেছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২৬ এর এক নেতা মো. জাকারিয়া বলেন, মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছি সুষ্ঠু বিচার পাব। হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগসহ সরাসরি গুলি করেও রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা করেছে রাখানই সেনারা। ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় হেগের আদালতের দিকে চেয়ে আছি।

রোহিঙ্গা মাঝি সামশুল আলম বলেন, মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে এদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। এতগুলো মানুষ অন্যদেশে এভাবে থাকা সম্ভব নয়। যদি সুষ্ঠু বিচার পাই স্ব-ইচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যাব। প্রত্যাশা রাখছি আল্লাহর অশেষ কৃপায় আদালতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাব।

রোহিঙ্গা নেতা বদরুল বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে ৭৫ হাজার ঘরবড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ১০ হাজার ৫৬৫ জন নারী পুরুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। এছাড়া ১৮শ ৩৩ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ৯০৬টি মসজিদ, ১২০০ মক্তব, মাদ্রাসা পুড়িয়ে দেয় হয়েছে। ২৫০০ লোককে বিনাদোষে জেলে পাঠানো হয়। রাখাইনে ৮৮টি গণকবর রয়েছে। এর মধ্যে ২টি ১০ জন করে মৃতদেহ পাওয়া যায়। একটি মংডুর আংডং গ্রামে অপরটি বুচিডংয়ের গুদামপাড়ায়। এসব তথ্যের ভিত্তিতে গাম্বিয়া মামলা দায়ের করে বলেও জানান।

টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে যে বিচার শুরু হয়েছে তার জন্য সাধুবাদ জানাই। রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যার তৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বিচার নিশ্চিত হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে আগ্রহী হবে এবং স্থানীয়সহ দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App