×

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণ প্রকল্পের অগ্রগতি নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:৫৩ এএম

‘জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এই অর্থে সমাজতন্ত্র এ চারটি আমাদের রাষ্ট্রের মূলস্তম্ভ। রাষ্ট্রীয় এই নীতিগুলো অর্জনের জন্যই বাংলার সবুজ শ্যামল প্রান্তর হয়েছিল লালে লাল। চার লাখ মা-বোন হারিয়েছেন জীবনের মহামূল্যবান সম্পদ। ত্রিশ লাখ কঙ্কালের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের সংবিধানের এই চার মূলনীতিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলক। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ২০১৭ সালে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে প্রথম সরকারিভাবে প্রকল্প নেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প নিয়েই দায়িত্ব শেষ সংশ্লিষ্টদের। আড়াই বছরে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। কাজের অগ্রগতি নেই অসন্তোষ বিরাজ করছে খোদ মন্ত্রণালয়েই। নির্দিষ্ট মেয়াদে কাজের কতটুকু বাস্তবায়ন হবে এ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন তারা। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে এ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১ জুলাই। পাঁচ বছরব্যাপী এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০২২ সালের ৩০ জুন। এর প্রাক্কালিত ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ৪৯ কোটি ২০ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরের বাসের মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে আড়াই বছরে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ভোরের কাগজকে বলেন, সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে কাজ হচ্ছে। মন্ত্রণালয় বছরব্যাপী কাজ করছে। হয়তো বিভিন্ন কারণে এই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে ধীরগতি রয়েছে। আগামী মুজিববর্ষ, পরের বছর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আমাদের প্রকল্পের কাজ অনেক বেশি এগিয়ে যাবে। এদিকে বেসরকারিভাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ২০০৪ সালে ‘শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং মানবাধিকার ও শান্তি-সম্প্রীতির ভাবধারায় উদ্বুদ্ধকরণ’ কর্মসূচির যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে প্রকল্পের নাম সংক্ষেপ করে ‘নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণ’ রাখা হয়েছে। প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬২ জন শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্ট্রি মফিদুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে এই কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি। সেই সঙ্গে ইতিহাসবিকৃতিরোধ করাও আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। গবেষকদের মতে, স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও প্রশ্ন ওঠেছে কতজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি? তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণলাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত রাষ্ট্র কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলছে? এ ব্যাপারে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ভোরের কাগজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিমূর্ত কিছু নয়। দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামের মাঝে এটি মূর্তমান হয়েছিল। সেই আলোকে ’৭২-এর সংবিধান রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ধারণ করেছিল। এসব মূলনীতিকে মোটা দাগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলক বলা যায়। কিন্তু ’৭৫ এর পটপরির্তনের পর মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে ইতিহাস বিকৃতি চরমে পৌঁছে। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জামায়াত ঢুকে পড়ে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে কাজ করছি। গবেষকরা বলছেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত সামাল দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ৪১টি মামলায় সাজা হয়েছে ৯৫ জনের। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে ৬৮ জনের। এরপরও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের পথ মসৃণ হয়নি। এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছার। এ ব্যাপারে ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিংয়ের প্রধান ডা. এম এ হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলগতভাবে জামায়াত ইসলামির বিচার এখনো সম্ভব হয়নি। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হলেও ভোটের মাঠে দলটি গুরুত্বপূর্ণ শরিক হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে দীর্ঘদিন দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়িয়েছে একাত্তরে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এ দলটি। অন্যদিকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে কট্টর ইসলামি অনেক সংগঠনও। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে স্বাধীনতাবিরোধী এসব সংগঠনের বিচার করা অত্যন্ত জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App