×

সারাদেশ

নোয়াখালীতে অফিস গুটিয়ে লাপাত্তা বায়রা লাইফ কর্মকর্তারা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৪ পিএম

নোয়াখালীতে অফিস গুটিয়ে লাপাত্তা বায়রা লাইফ কর্মকর্তারা!

একক ও ক্ষুদ্র বীমার নামে প্রায় বিশ হাজারের বেশি গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা বায়রা লাইফ ইনন্সুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাইফুল ইসলাম শাহীনসহ নোয়াখালী সার্ভিসিং সেল দত্তের হাট শাখার কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা লাপাত্তা হওয়ার পর প্রতিদিন গ্রামগঞ্জ থেকে শত শত গ্রাহক ওই অফিসের সামনে এসে ভিড় করছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ দ্বিগুন লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জেলা সদরের গ্রামের মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নেওয়ার পর কোম্পানীর অফিস ছেড়ে উধাও হয়ে গেছে কর্মকর্তারা। “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বস্তির জন্য বায়রা লাইফের অগ্রযাত্রা অনন্য” স্লোগান হলেও আমানতকৃত টাকার চেক না পেয়ে বর্তমানে চরম অস্বস্তির মধ্যে রয়েছেন দরিদ্র গ্রাহকরা।

ফলে ওই এলাকার কোম্পানীর এজেন্ট মাইজদী সার্ভিসিং সেল এবং যাদের মাধ্যমে গ্রাহকরা বীমা করেছেন তাদের ওপরে নেমে এসেছে বিপদ, চলছে নির‌্যাতন। পলিসিহোল্ডারদের ভয়ে স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার-পরিজন ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মাঠ কর্মীরা, চরম চাপের মধ্যে রয়েছেন মাইজদী সার্ভিসিং সেলের কর্মকর্তারা। টাকা প্রদানের রশিদ ও পাস বই/দলিল থাকা স্বর্তেও কোম্পানীর প্রধান কার্য়ালয়ের সার্ভেয়ারে গ্রাহকদের টাকার কোন হদিস নাই।

জানা গেছে, ২০০২ সালে নোয়াখালী সার্ভিসিং সেল দত্তেরহাট শাখা চালু করে বেসরকারি জীবন বীমা খাতের কোম্পানী বায়রা লাইফ। শাখাটির প্রধান দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলাম শাহীন ওই শাখায় বিভিন্ন পদে কর্মকর্তা ও মাঠ কর্মী নিয়োগ করে কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর দ্বিগুন লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হাজার হাজার পলিসি করে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়ে আত্মস্বার্থ করে নেয়। ২০১৬ সাল থেকে ওই শাখা অফিসে তালা ঝুলিয়ে গ্রাহকদের টাকা-পয়সা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে পড়েছেন কোম্পানীর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাইফুল ইসলাম শাহীনসহ অপরাপর কর্মকর্তা।

নোয়াখালী সার্ভিসিং সেল দত্তের হাট শাখার ক্ষুদ্র বীমাকারী আমেনা অভিযোগ করে বলেন, তিনি বায়রা লাইফে বীমা করেন কবির হোসেন নামের এক মাঠ কর্মীর মাধ্যমে (পলিসি নম্বর-০৭-০০৯৬৫৩)। ১০ বছর মেয়াদী পলিসিটির কিস্তি শেষ হয়েছে ২০১৬ সালে। তার বীমায় টাকা জমা দিয়েছে ৬০ হাজার। মেয়াদ শেষে ওই অফিসে গেলে কর্মকর্তারা তাকে কিছু দিন পরে আসতে বলেন। কিছুদিন পরে দেখা যায় ওই অফিসের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। অনেক খোঁজাখুজির পরও অফিসের কর্মকর্তাদের সন্ধান পাননি তিনি। এরপর মাইজদী সার্ভিসিং সেলে গেলে তাদের সহযোগিতায় চলতি মাসে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে ৪৫ হাজার টাকার চেক তাকে দেওয়া হয়। আমেনা বলেন এ বীমার কারণে স্বামীর সাথে তার দীর্ঘেিদর বিরোধ চলছে। সংসার ভাঙ্গার অবস্থা হয়ে গেছে।

বীমা গ্রহীতা হালিমা খাতুন (পলিসি নম্বর-০৭-০০৬১০৪), মনোয়ারা বেগম (পলিসি নম্বর-০১০০০৩১৪৬০-৭), শাহানাজ বেগম (পলিসি নম্বর-০১০০০৩১৪৫৮-৬), আলেয়া বেগম (পলিসি নম্বর-০১০০০৩১৪৬৩-৭), রোকেয়া বেগম (পলিসি নম্বর-০১০০০৪৭৩৬২-৭), নাহিদা আক্তার (পলিসি নম্বর-৬১৭-০৩১২৮), মোহছেনা খাতুন (পলিসি নম্বর-৬২১-০০০০২৩), শাহীন আক্তার (পলিসি নম্বর-৬১৭-০০০০০৬) বলেন, মাঠ কর্মী আইরিন আক্তার ও আবদুর রহিমের মাধ্যমে বায়রা লাইফে বীমা করেন তারা। নিয়মিত বীমার কিস্তির টাকা পরিশোধ করা হলেও অফিসের সার্ভেয়ারে তাদের পলিসি’তে অর্ধেক টাকাও জমা পড়েনি। গত দুই বছর ধরে দত্তেরহাট শাখা অফিসে গিয়ে ওই অফিসে তালা ঝুলানো পান গ্রাহকরা। মাঠ কর্মীদের বাড়ি গিয়ে তাদেরকেও পাওয়া যায় না। ফলে আমানতকৃত অর্থের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।

বায়রা লাইফের সদর সার্ভিসিং সেলের মাঠ কর্মী আইরিন আক্তার ও কবির হোসেন বলেন, আমাদের মাধ্যমে বীমা গ্রহীতা গ্রাহকদের টাকা নোয়াখালী সার্ভিসিং সেল দত্তেরহাট শাখা অফিসে জমা করে তাদের রশিদ বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ গত ২০১৬ সালে কোম্পানীর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাইফুল ইসলাম শাহীনসহ ওই অফিসের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। বর্তমানে গ্রাহকদের চাপের মুখে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়িতে থাকাটা মাঠ কর্মীদের জন্য ঝুঁকি হয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক নোয়াখালী সার্ভিসিং সেল দত্তেরহাট শাখা অফিসের এক কর্মচারী জানান, কোম্পানীর তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক (সোনালী ইসলামী ডিপিএস) ওমর ফারুক ভূঁইয়ার সহযোগিতায় ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাইফুল ইসলাম শাহীন বিশ হাজারেরও বেশি গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা কেন্দ্রীয় অফিসে জমা না করে আত্মস্বার্থ করে অফিসে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। শাহীনের সহযোগী হিসেবে কোম্পানীর সহকারী প্রকল্প পরিচালক দিলদাহার শাহেদ, অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার বেলাল হোসেন ভুট্টো, প্রধান হিসাব সহকারী নুর আহম্মেদ ও অফিস সহকারী বাসন্তী রায়ও কাজ করেছেন বলে জানান ওই কর্মচারী।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করেও ফোন রিসিভ না করায় বায়রা লাইফ ইনন্সুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাইফুল ইসলাম শাহীনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মাইজদী সার্ভিসিং সেলের দায়িত্বে থাকা কোম্পানীর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুর রহমান জানান, নোয়াখালী সার্ভিসিং সেল দত্তেরহাট শাখা অফিসের কর্মকর্তারা কোম্পানীর তিনটি গাড়ি ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক পলিসি সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু তারা গ্রাহকদের বীমা চাহিদা পুরন না করে লাপাত্তা হয়ে যায়। এতে আমাদের অফিসের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। গ্রাহকদের অতিরিক্ত চাপের মুখেও কোম্পানীর সুনামের কথা চিন্তা করে গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ সহ নানাভাবে সহযোগীতা করছেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App