×

সারাদেশ

হিলি হানাদারমুক্ত দিবস আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:০২ এএম

হিলি হানাদারমুক্ত দিবস আজ
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকহানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর তুমুল লড়াই হয়। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর আজকের দিনে (১১ ডিসেম্বর) ৭নং সেক্টরের আওতাধীন দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা তথা হিলি হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধে হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় গ্রামের গোলাম মোস্তফা, একরাম উদ্দিন, বানিয়াল গ্রামের মুজিব উদ্দিন শেখ, ইসমাইলপুর গ্রামের মনিরউদ্দিন, মমতাজ উদ্দিন, বৈগ্রামের ইয়াদ আলী ও চেংগ্রামের অছিম উদ্দিন শহীদ হন। উপজেলার মুহাড়াপাড়া এলাকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর স্মরণে সম্মুখ সমর স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে। হাকিমপুর উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী বলেন, ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে কোন মুহুর্তে পাক সেনাদের সঙ্গে আমাদের সংঘর্ষ বাধতে পারে। এমতবস্থায় সারাদেশের সঙ্গে হাকিমপুর এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের আহবানে মুক্তিযোদ্ধা মরহুম খলিলুর রহমানকে একটি স্বেচ্ছসেবক বাহিনী গঠন করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। স্কুল কলেজ এবং উৎসাহী যুবকদের সমন্বয়ে ওই স্বেচ্ছসেবক বাহিনী (২৫ মার্চ পাকহানাদার বাহিনীর বর্বর হামলায় ঢাকা আক্রমনের পর) পাকহানাদারদের আক্রমণের পূর্ব হতেই গাছ কেটে ও রাস্তা খনন করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখে এবং বিভিন্ন প্রতিরক্ষামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের নির্দেশে থানা ও ইপিআর (ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস) ক্যাম্প থেকে সেচ্ছাসেবক বাহিনীর কাছে ৩০৩ রাইফেল হস্তান্তর করা হয়। এ সময় তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন ১৭টি গাড়ি বহরসহ বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফুলবাড়িতে এসে অবস্থান গ্রহণ করে এবং ওই স্বেচ্ছাসেবক দলকে হিলি ইপিআর ক্যাম্পের সুবেদার শুকুর আলীর নেতৃত্বে কয়েকজন ইপিআরকে বিহারী অধ্যুষিত পার্বতীপুরের হাবড়ায় খান সেনাদের প্রতিরোধ করার জন্য পাঠানো হয়। এসময় সেখানে সেচ্ছাসেবক দলের সাথে পাকহানাদারদের সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। প্রচণ্ড শেলিং ও বিভিন্ন ধরনের গোলার আঘাতে সেচ্ছাসেবক ওই দলের ৯ জন যোদ্ধা শহীদ হন। এর কয়েকদিন পর ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে দলবলসহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আঃ কুদ্দুস মুন্সীর সহযোগীতায় চিকিৎসা করেন ও তার পরামর্শে অত্র এলাকার প্রতিরক্ষার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯ এপ্রিল রোজ মঙ্গলবার পাঁচবিবি, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট এ তিনদিক থেকে পাক হানাদার বাহিনীরা রাস্তার উভয় পাশে গুলি বর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করতে করতে ত্রাসের সৃষ্টি করে হাকিমপুর আক্রমণ করে। ১৯, ২০ ও ২১ এপ্রিল হাকিমপুরে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। মোকাবেলা করতে গিয়ে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের দলের দুইজন শহীদ হন এবং ক্যাপ্টেন আনোয়ার দলবলসহ ভারতের কামারপাড়ার কুড়মাইল নামক স্থানে অবস্থান নেন এবং ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর সাথে মতবিনিময় করে একটি ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপন করেন। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব ও সুরত আলী জানান, ক্যাপ্টেন আনোয়ারের সিদ্ধান্তে ভারতের পশ্চিম হিলি ডাঃ মনিন্দ্রনাথ-এর বাসভবনে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করা হয় এবং এসকল মুক্তিযোদ্ধাদের কামারপাড়ার কুড়মাইল নামক ট্রানজিট ক্যাম্পে তালিকাভুক্ত করে হায়ার ট্রেনিংয়ের জন্য শিলিগুড়ি পাঠানো হয়। এসময় ক্যাপ্টেন আনোয়ার ও তার দলের কয়েকজন সদস্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক ট্রেনিং প্রদান করেন। কামারপাড়ার কুড়মাইল ট্রানজিট ক্যাম্পটি তৎকালীন এমপির তত্বাবধানে পরিচালিত হয়। বিশেষ করে সংগঠক হিসাবে এমপি আজিজুর রহমান (পলাশবাড়ি), উল্লেখযোগ্য। ডাঃ ওয়াকিল, কুদ্দুস মুন্সী প্রমুখ পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের বালুরঘাটের কুমারপাড়ার কুড়মাইল ক্যাম্পে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, অধ্যাপক আবু সাইদ (সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী) এর নেতৃত্বে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেচ্ছাসেবক দল মুক্তিযোদ্ধাদের সুসংগঠিত করা হয়। ট্রেনিং প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন ভাবে গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পাকহানাদাররা ছাতনী গ্রামে শক্ত ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করে। বিভিন্ন দিকে ক্যাম্প গঠনের মাধ্যমে ভারী অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অবস্থান গ্রহণ করে এবং মুহাড়াপাড়ায় তারা একটি গভির খাল কেটে বেশ কয়েকটি বাংকার তৈরী করে। ৬-৭ হাজার পাক সেনা ৪০টি ট্যাংক নিয়ে সেখানে অবস্থান করতে থাকে। ৬ ডিসেম্বর ভারত সরকার বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে সমর্থনদানের পর হাকিমপুরে ভারত-বাংলাদেশ মিত্রবাহিনীর সাথে পাক সেনাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। প্রথমদিকে মুহাড়াপাড়া এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিত্রবাহিনী ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। এসময় তরুন মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা শহীদ হন। পরবর্তীতে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা সুসংঘঠিত হয়ে ১০ ডিসেম্বর মুহাড়া পাড়া এলাকাসহ পাক সেনাদের বিভিন্ন আস্তানায় আকাশ পথে এবং স্থলপথে একসঙ্গে হামলা চালায়। দুইদিন যাবৎ প্রচণ্ড যুদ্ধের পর পাক হানাদারবাহিনী পরাস্থ হলে ১১ ডিসেম্বর বেলা ১টার দিকে মুক্তিযুদ্ধের ৭ সেক্টরের আওতায় দিনাজপুরের হাকিমপুর হানদার মুক্ত হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App