×

পুরনো খবর

মানবাধিকার পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা ইস্যু

Icon

nakib

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:৫৯ পিএম

মানবাধিকার পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা ইস্যু

বর্তমান সময়ে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পৃথিবীর কোথাও সঠিক পন্থায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত নয়। মানবাধিকার এখন শুধু শব্দের মধ্যে বন্দি একটি শব্দ। বাস্তবে মানবাধিকার পৃথিবীর কোথাও জনগণের মধ্যে বিরাজমান নেই বলা যায়। জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব মানবাধিকার দিবস প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর দুনিয়াব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালন হতে দেখছি। নানা নামে বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ায় অসংখ্য মানবাধিকার সংগঠনের তৎপরতা অব্যাহত আছে। রাষ্ট্রে জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই হলো এসব সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য। জনগণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভোটাধিকার ও কথা বলার অধিকারের নাম মানবাধিকার। স্বাধীনভাবে জনগণের মত প্রকাশ করার অধিকারই হলো মানবাধিকার। ব্যাপক অর্থে মানবাধিকার হলো যাবতীয় গণতান্ত্রিক রীতিনীতি প্রতিষ্ঠা করার নাম। সব দল, মত, গোত্র, গোষ্ঠীর অধিকারপ্রাপ্তি ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য মানবাধিকার। প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ক্ষমতাসীন সরকার কর্তৃক জনগণের মৌলিক অধিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তার নাম মানবাধিকার। রাষ্ট্রের শাসকের কাছ থেকে সব ধরনের মৌলিক সুশাসন প্রাপ্তিই মানবাধিকার সংগঠনের দাবি। ৬টি অক্ষরবিশিষ্ট এ সংগঠনের ব্যাপক অর্থ ও কার্যকারিতা সমাজে থাকা চাই এবং নাগরিকদের তা পাওয়ার অধিকার আছে।আজকের দুনিয়ার ক্ষমতাধর গোষ্ঠী সঠিকভাবে নিজ নিজ দেশে তার নাগরিকদের মৌলিক অধিকার দিচ্ছে কিনা সেখানে ব্যাপক প্রশ্ন। দুর্বলের ওপর সবলের জুলুম আর নির্যাতন অহরহ হচ্ছে দুনিয়াব্যাপী। আমাদের পার্শ¦বর্তী দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম নরনারীর ওপর যেভাবে নির্যাতনের স্টিম রোলার সে দেশের সরকার চালাচ্ছে, সেটা গোটা পৃথিবী শুধু পর্যবেক্ষণ করছে। মিয়ানমার সরকারকে পৃথিবীর কোনো নেতাই সুশাসনে ফিরাতে পারছে না। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের দেশের পরিবেশ আকাশ বাতাস আজ ভারী হয়ে উঠেছে। নিজ মাতৃভ‚মি হারিয়ে মারাত্মক নির্যাতনের শিকার হয়ে আজ প্রায় ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।বাংলাদেশ সরকার তাদের গ্রহণ না করলে ওই মানুষগুলোর কী অবস্থা হতো সেটা বলার মতো ভাষা নেই। বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এ সমস্যা ব্যাপকভাবে উপস্থাপন ও পৌঁছাতে পারলেও এ সংকটের সমাধান এখনো অন্ধকারে। বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নেতারা এ ইস্যুটি জিইয়ে রেখেছে। ফলে বাংলাদেশের একার পক্ষে বিষয়টির সমাধান করা একটি চ্যালেঞ্জ। এভাবে পৃথিবীর বহু দেশের আজ কোটি কোটি মানুষ মানবাধিকার হারা। তাদের বুকভরা কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। তবুও যাদের সামর্থ্য আছে এখনো তারা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে সেসব দৃশ্য অবলোকন করছে। তবে স¤প্রতি আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। মিয়ানমারের বিচার শুরু হয়েছে। দেখা যাক কী রায় হয়। গোত্রে গোত্রে, ধর্মে ধর্মে হানাহানি-বিভাজন আর বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে কেউই মানবাধিকার পাচ্ছে না। কথা হচ্ছে যে দেশে যারাই ক্ষমতায় আছে তাদের কাছে তার দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষগুলো শান্তিশৃঙ্খলা অধিকার পাচ্ছে কিনা। সেসব বিষয় নিয়ে কথা বলাও দরকার।পৃথিবীর বহু দেশে এখন মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত। লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু। কোটি কোটি মানুষ গৃহ ও বাড়িভিটেহারা। নারী-শিশু আশ্রয়হীন ও নির্যাতিত। ধর্মীয় গোত্র গোষ্ঠীগত নির্যাতনে নির্যাতিত হচ্ছে পৃথিবীর বিপুলসংখ্যক নিরীহ মানুষ। গোটা দুনিয়ায় গণতন্ত্র নামক শব্দ অস্ত্র ও সন্ত্রাসের হাতে জিম্মি। ক্ষমতার অধিকারী রাষ্ট্রপ্রধানরা তার অধীন নিরীহ মানুষগুলোর ওপর জোর-জুলুম চালাচ্ছে। ভোট ও কথা বলার অধিকার পাচ্ছে না। সে স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে শাসকগোষ্ঠী। শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ মৌলিক অধিকার পাচ্ছে না। সব ক্ষমতা আর সুযোগ-সুবিধা একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ও দেশের কাছে জিম্মি হয়ে বিশ্বমানবতা তাদের হাতে বন্দি। সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর বহু দেশে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। কোনো দেশেই জাতিসংঘ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে ব্যবস্থা নিতে দেখছি না। জাতিসংঘের বাইরে ক্ষমতার দাপট আছে কতিপয় দেশের। তাই জাতিসংঘ তাদের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করতে পারছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশসহ তেলসমৃদ্ধ দেশ পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণ বহু দেশে মানবাধিকারের করুণ পরিস্থিতি। সেখানে বিশ্ব নেতারা ও জাতিসংঘ কিছুই করতে পারছে না। কথা আর বিবৃতি ছাড়া জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনের কোনো ভ‚মিকা নেই। আর জুলুমবাজ শাসকের অত্যাচার থেকে মুক্তির জন্য জীবন বাঁচাতে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পালিয়ে জীবন বাঁচাচ্ছে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী। পাচ্ছে না তাদের জীবনের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, বাঁচার অধিকার। যদি জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিশ্বে মজলুম মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারত তাহলে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস সফল ও সার্থক হতো।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App