×

বিনোদন

ভাঙা গড়ার ইতিহাসের কথা বলল ‘কৈবর্ত গাথা’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:৪২ পিএম

ভাঙা গড়ার ইতিহাসের কথা বলল ‘কৈবর্ত গাথা’

একদিকে ধর্মের আচ্ছাদন, অন্য দিকে ক্ষমতার বলয়। ক্ষমতার বলয়ে আচ্ছাদিত হয়ে পরে ধর্মের মর্মকথা। ধর্মনীতির নিচে চাপা পরে রাজনীতি। বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসনির্ভর এই কাহিনি নাট্যে লিপিবদ্ধ করেছেন নাট্যকার আব্দুল্লাহেল মাহমুদ আর নির্দেশনা দিয়েছেন ফয়েজ জহির। ইতিহাসনির্ভর এই নাটকটির নাম কৈবর্ত গাথা। নাটকটি যশোর বিবর্তনের ১১তম প্রযোজনা।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালায় প্রাঙ্গনেমোর আয়োজিত ‘আমি বাংলায় ভালোবাসি, আমি বাংলাকে ভালোবাসি’ শিরোনামে আয়োজিত দুই বাংলার নাট্য মেলায় মঞ্চায়ন হলো ‘কৈবর্ত গাথা’। নাটকটি নির্দেশনার পাশাপাশি মঞ্চ ও আলোকসজ্জা করেছেন ফয়েজ জহির নিজেই।

সুন্দর সাবলীল গল্পটি নির্মিত হচ্ছিল একটু থেমে থেমে। প্রতিটি দৃশ্যান্তরেই মনে হয়েছে দর্শক মনোযোগ নড়ে যাচ্ছে, সরে যাচ্ছে। ইতিহাসের মালা এমনভাবে গাঁথা, যে সেখানে একটুখানি ছেদ পড়লেই বিপত্তি ঘটার সম্ভাবনা থাকে। দৃশ্যান্তর ভাবনা ভিন্নতা পেলে নিবিড় আনন্দ দিতে পারে দর্শককে। নির্দেশকের আলো ও মঞ্চ ভাবনা যথোপযুক্ত মনে হলেও দৃশ্যান্তরে সেটি বিড়ম্বনাপূর্ণ মনে হয়। তবে নায়লা আজাদ নূপূরের পোশাক আর পরিমল মজুমদারের সংগীতের ব্যবহার ছিল অসাধারণ।

অভিনয়ের ক্ষেত্রে কানাই চরিত্রে মৃন্ময় চক্রবর্তী বেশ স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন। কানাইয়ের সঙ্গে মঞ্চ ভাগাভাগিতে সাবলীল ছিলেন কঙ্কাবতী মানে মাধবীলতা। এছাড়া রামপাল চরিত্রে মনিরুল ইসলাম, ভীম চরিত্রে সজীব বিশ্বাস আর চ-ক চরিত্রে শেখর ব্যানার্জী বেশ অনবদ্য অভিনয় করেছেন। সন্ধ্যাকর নন্দী চরিত্রে রূপদানকারী দেবাশীষ ভট্টাচার্য পলাশ ভালো চরিত্র চিত্রায়ণ করেছেন, কিন্তু যখন তিনি বারাঙ্গনা পল্লীতে এলেন, মনে হলো আগে থেকেই তার নেশা হয়েছিল। কঙ্কাবতীর হাতে মদ পান না করেও তিনি মাতাল হয়ে গেলেন।

ইতিহাসের কিছু বাঁক থাকে যেখান থেকে জন্ম নেয় ভিন্নতা। কৈবর্তদের মধ্যমণি রাজা ভীম আর বৌদ্ধ ধর্মজাত রাজা রামপাল ছিলেন তেমনি শাসক, যাদের কারণে পু-রবাসী দেখেছিল এক ভয়াবহ বর্বরতা। তাদের চোখের সামনে পাল্টে গিয়েছিল ধর্ম আর রাজনীতি। তারা দেখেছিল রক্তবন্যা আর সাধারণের আহাজারি। পেয়েছিল এক রাজার স্নেহ-ভালোবাসা আর আরেক রাজার রক্তচক্ষু। সময়ের পরিক্রমায় রাজাদের আমলের পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু স্নেহ-ভালোবাসা আর রক্তচক্ষু যেন সেই আগের মতোই বিরাজমান ধরিত্রী ধারায়। যে কারণে ‘কৈবর্ত গাথা’ হয়ে ওঠে ভাঙা গড়ার ইতিহাস, যা দেখে বর্তমান বুঝে নেয় তাদের যা প্রয়োজন। অভিনয় আর দৃশ্যান্তরের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে যশোর বিবর্তনের ‘কৈবর্ত গাথা’ হয়ে উঠেছে সত্যিকার অর্থে শিল্পিত প্রযোজনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App