×

জাতীয়

পরিবার থেকেই নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিতের কাজ শুরুর আহ্বান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৪১ এএম

পরিবার থেকেই নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিতের কাজ শুরুর আহ্বান

দৈনিক ভোরের কাগজের কনফারেন্স রুমে ১০ ডিসেম্বর ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা ও পিছিয়ে পড়া নারী জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরাসহ অতিথিরা -ভোরের কাগজ।

নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করার কাজটি পরিবার থেকে শুরু করতে হবে। যা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৫ অর্জনে সহায়ক হবে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী পুরুষের সমতা অর্জন এবং পিছিয়ে পড়া নারীগোষ্ঠীকে এগিয়ে আনার ক্ষেত্রে আইন ও নীতিমালার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। তবে এ ক্ষেত্রে বেশি প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। আর সেই কাজটি শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে দৈনিক ভোরের কাগজের কনফারেন্স রুমে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা ও পিছিয়ে পড়া নারী জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা সিমাভীর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর অলক কুমার মজুমদার। বক্তব্য রাখেন সাংসদ ওয়াসিকা আয়শা খান ও উম্মে কুলসুম স্মৃতি, স্থানীয় সরকার বিভাগ অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ অনুবিভাগ) মো. জহিরুল ইসলাম, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি হাসিনা নেওয়াজ, ইপিআরসির নির্বাহী সভাপতি ড. বিলকিস আমিন হক, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, ওয়াটার এইডের হেড অব পলিসি এডভোকেসি আবদুল মুয়িদ ও প্রোগ্রাম অফিসার (এডভোকেসি) রঞ্জন কুমার ঘোষ, ভিইআরসির নির্বাহী পরিচালক মো. ইয়াকুব হোসেন, ইউএসটির নির্বাহী পরিচালক শাহ মো. আনোয়ার কামাল, বি-স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহমুদ, এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক নাদিরা কিরণ প্রমুখ।

মূলপ্রবন্ধে বলা হয়, জেন্ডার সমতা ও সমাজের সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারলে এসডিজি অর্জন সম্ভব হবে না। তবে আশার কথা হলো, ২০১৭ সালের বিশ্বের জেন্ডার গ্যাপ এনালাইসিস প্রতিবেদনে ২০০৬ সালের রিপোর্ট থেকে বাংলাদেশে জেন্ডার সমতা ও নারীর উন্নয়ন সূচকে উন্নতি হয়েছে। ২০০৬ সালে জেন্ডার গ্যাপ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১ এবং ২০১৭ সালে ১৪৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম। বাংলাদেশের নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষার প্রবেশগম্যতা বেশ কিছুটা বেড়েছে। নারীর স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের অবস্থা বেড়েছে।

তবে এখনো কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে আছে। নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করে সমতা এনে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, সরকারের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ড যেমন দৃশ্যমান তেমনি নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনাও বাড়ছে। তবে শিশু নির্যাতনের ৯০ শতাংশই ঘটছে পরিবারে। বাবা-মার কোলে এবং পরিবার-পরিজনের কাছেও শিশুরা নিরাপদ নয়। কেবল আইন দিয়ে সরকারের পক্ষে এসব সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সমষ্টিগত প্রচেষ্টা এবং জনজাগরণ। প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা ও মানসিকতার পরিবর্তন। আর এই কাজটি শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই।

ওয়াসিকা আয়শা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ১০ উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকার রাখবে। শ্রমবাজারে নারীর প্রবেশগম্যতা বাড়ছে। তবে গৃহকর্মে নারীর মজুরিবিহীন শ্রমের স্বীকৃতি দরকার। সরকারের অনেক উদ্যোগ রয়েছে তা না জানার কারণে নারীরা সেই উদ্যোগের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য রয়েছে। নারী বিবাহ বিচ্ছেদ চাইলে তাকে কাবিননামা দেখাতে হয়। কিন্তু পুরুষের বেলায় তা লাগে না। এমন সূ² বিষয়গুলোও আমাদের চিহ্নিত করতে হবে।

মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে নারীর পছন্দের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। হাসিনা নেওয়াজ বলেন, যুগ যুগ ধরে নারীকে অবদমিত করে রাখার মানসিকতার কারণে গৃহকর্মে নারীর শ্রমের কোনো স্বীকৃতি নেই। এর জন্য মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। নারী উদ্যোক্তারা অনেক আগ্রহ নিয়ে কাজে নামলেও অনেকে ঝড়ে পড়ছে। নারীদেরও সচেতন হতে হবে।

ড. বিলকিস আমিন হক বলেন, আমাদের দেশে মায়ের মাধ্যমে সন্তানের নাগরিকত্ব নির্ধারিত হয়। যা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেও নাই। সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে মানসিকতা পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালাকে যুগোপযোগী করার তাগিদ দেন তিনি। আব্দুল মুয়িদ বলেন, রাজধানীতে পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট না থাকা নারীর জন্য বিড়ম্বনার। মৌলিক স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আরো বেশি সমন্বয় দরকার।

নারী ও শিশু নির্যাতনের ভয়াবহতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নাসিমুন আরা হক বলেন, এসডিজি অর্জন করতে হলে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। এই বিষয়টিকে আমাদের প্রথমেই প্রাধান্য দিতে হবে। সমাজের অবক্ষয় রোধে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। সেই সঙ্গে প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা।

শাহ মো. আনোয়ার কামাল বলেন, শতভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি। স্কুল পর্যায়ে মিনস্ট্রুয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট পৌছে দিতে হবে। যারা সেবার আওতার বাইরে থাকছেন তাদের চিহ্নিত করে সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সালমা মাহবুব বলেন, দেশের আইনে ১৩ ধরণের প্রতিবন্ধীতার কথা উল্লেখ আছে। এসব প্রতিবন্ধীদের কী ধরণের চাহিদা রয়েছে সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

ইয়াকুব হোসেন বলেন, সমতার জন্য নয়, যার যেটুকু চাহিদা সেই দিকটি বিবেচনা করে আমাদের সেবা দিতে হবে। শিশুদের চাহিদার বিষয়েও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। গণমাধ্যমগুলোতেও এখনো নারীবন্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হয়নি উল্লেখ করে নাদিরা কিরণ বলেন, নারী ইস্যুতে শুধু নারীরা নয়, পুরুষদেরও কথা বলতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App