×

পুরনো খবর

দূষণ রোধে আমাদেরও দায় রয়েছে

Icon

nakib

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:৫৫ পিএম

রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কমবেশি সবাই বায়ুদূষণের শিকার। শীত তথা শুষ্ক মৌসুমে বায়ুদূষণ যেন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ঢাকাকে ব্যবহার করে সবাই যেন নিজেদের আখের গোছাতে চায়, কিন্তু শহরটার বাসযোগ্যতার কথা কেউ ভাবে না। শিল্পকারখানার বর্জ্য, পলিথিন ও মানববর্জ্যরে দূষণে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার আশপাশের অন্যান্য নদ-নদীর পানি কালো কুচকুচে হয়ে গেছে। তাই নদী-খাল রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার ‘নিষিদ্ধ’ করা হলেও এর জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি। অবশ্য পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট ও কাগজের ব্যাগ সহজলভ্য না করার কারণে পলিথিন দূষণ থামছে না।বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক তথ্য মতে, বাংলাদেশে বায়ু, পানি ও পরিবেশদূষণের কারণে বছরে ক্ষতি হয় প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা। আর দূষণের কারণে ২০১৫ সালেই শহরাঞ্চলে মারা গেছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। ২০১৫ সালে রাজধানী ঢাকায় শুধু বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শহরের শিশুদের একটা বড় অংশ বায়ুদূষণের শিকার। বায়ুদূষণে শিশুর বিকাশ ও মেধা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘বিধিমালা-২০০৬’ যেন থেকেও নেই। বাস্তবে এই আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। সাধারণভাবে শব্দদূষণকে যেন দূষণ বলেই মনে হয় না। ঢাকা শহরে স্থানভেদে সহনীয় মাত্রার চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি শব্দ উৎপন্ন হচ্ছে। শব্দদূষণ ঠেকাতে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে হবে। মাটি ও পানিদূষণেও শহরবাসীকে ভুগতে হচ্ছে। পানিতেও ভেজাল। নিরাপদ পানি পাওয়া এ শহরবাসীর জন্য এক চ্যালেঞ্জ! বর্জ্য তথা ময়লা-আবর্জনার দূষণ এ শহরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আধুনিক ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে না তোলার ফলে ময়লা-আবর্জনা রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। সব ধরনের বর্জ্য একসঙ্গে সংগ্রহ না করে আলাদা আলাদা করে সংগ্রহ করা হলে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, আঠা, সার ও অন্যান্য বিকল্প অনেক কিছু তৈরি করা সম্ভব। এ শহরটাকে পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত করে গড়ে তোলার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সবার।ইপিএর প্রতিবেদন অনুসারে, পরিবেশদূষণ রোধে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৯তম। তথ্য মতে, প্রতি বছর কালো ধোঁয়ায় সৃষ্ট শ্বাসকষ্টসহ অসংক্রামক রোগে প্রায় ৮৫ হাজার লোক মারা যাচ্ছে। কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) বিবেচনা করা হচ্ছে না! এক কথায়, পরিবেশ বিপর্যয়ে সার্বিক অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দূষণের কারণে শিশুসহ সব বয়সীদের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দূষণ বন্ধে পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। পরিবেশ আইনের প্রয়োগ হলে জনসাধারণের মধ্যে যেমন সচেতনতা তৈরি হবে তেমনি পরিবেশও রক্ষা পাবে।প্রতি বছর ঘটা করে পরিবেশ দিবস পালন করা হয়, পরিবেশ নিয়ে কত শত আলোচনা ও উদ্যোগের কথা শোনা যায়। প্রশ্ন হলো, আসলে কি পরিবেশ দূষণ কমছে, পরিবেশ রক্ষা হচ্ছে? এভাবে দিনের পর দিন পরিবেশ দূষণ করতে করতে আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদেরই খুন করছি না তো? পরিবেশ ধ্বংস করতে করতে এমন একটা সময় আসবে যখন থাকবে শুধু অপরিকল্পিত উন্নয়ন, দূষণ, রোগগ্রস্ত জীবন আর কাড়ি কাড়ি টাকা! তখন কোনো কিছুর বিনিময়ে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ও সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব হবে না!

সূত্রাপুর, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App