×

পুরনো খবর

অজয় রায় ছিলেন আলোর মানুষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:২৬ পিএম

অজয় রায় ছিলেন আলোর মানুষ

অধ্যাপক ড. অজয় রায় ছিলেন মানবতাবাদী এবং বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।তিনি আজীবন ব্যাপৃত ছিলেন প্রগতিশীল কর্মে ও আন্দোলনে। ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। প্রসারিত ছিল তার কর্মক্ষেত্রও। এক কথায় তিনি ছিলেন আলোর মানুষ। এই আলোর মানুষটিই এখন অন্ধকার ভূবনের বাসিন্দা। আমাদের শোকের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বরেন্য এই অধ্যাপককে নিয়ে শোকসভার আয়োজন করে গণজাগরণ মঞ্চ। বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘেরর সামনে এই সভায় ড. অজয় রায়কে নিয়ে কথা বলেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। সভায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন হাসান ইমাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, ড. অজয় রায়ের ছেলে অনুজিৎ রায়, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মারুফ রসূল, ছাত্রনেতা মানবেন্দ্র দেব, প্রকাশক রবীন আহসান।

গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক আক্রামুল হকের সভাপতিত্বে এ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আলম, ছাত্রনেতা মেহেদী হাসান নোবেল, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক শিবলী হাসান, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সংগঠক ও প্রকৌশলী সম্পা বসু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেতা আল কাদেরী জয়, এ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত প্রমূখ।

হাসান ইমাম বলেন, অজয় এবং আমি সমবয়সী ছিলাম। পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার পর থেকে পূর্ব পাকিস্তান সময় পর্যন্ত আমরা একসথে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা একসাথে মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং বুদ্ধিজীবী হিসেবেও অজয়ের ভূমিকা অনন্য। মুক্তিযুদ্ধের এতো বছর পর নিজের অসুস্থ শরীর নিয়েও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সে সামিল হয়েছে। তিনি বলেন, আর অজয় রায়কে স্মরণের সাথে সাথে তার চেতনাকেও আমাদের ধারণ করতে হবে। দেশের নীতিনিষ্ঠ মানুষগুলোর মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন তিনি। অনুজিৎ রায় বলেন, ছেলে হিসেবে পরিবারের বটবৃক্ষটাকে হারালাম। আর দেশ যে মেধাসত্ব হারালো, তা জাতি এখনো উপলব্ধি করতে পেরেছে কি না জানিনা। বাবা দেশকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। বিদেশে পাড়ি জমাবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি কখনো দেশ ছেড়ে যেতে চাননি।

তিনি আরো বলেন, যুদ্ধপরাধীদের বিচার কার্যক্রমে বাবা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তার ছেলে অভিজিৎ হত্যার বিচার তিনি দেখে যেতে পারেননি। আর তাকে নিয়ে শোকসভা শুধু শোকের জন্য নয়, তা যেন হয় তার স্বপ্ন পূরণের জন্য। তার চিন্তা, কর্ম, মননশীলতা সবকিছুই আমাদের মাঝে আছে।

কাবেরী গায়েন বলেন, প্রতিবছর বুদ্ধিজীবী দিবসে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষককে স্মরণ করি। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কম শিক্ষকই আছেন বা ছিলেন যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। অজয় রায় তাদের মধ্যে একজন। তাকে খুব কমই বিচলিত হতে দেখেছি। তিনি একটি অপরূপ ও বীরের জীবন যাপন করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন সাহস কেমন হয়!

মারুফ রসূল বলেন, ড. অজয় রায় শুধু একজন পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে নয়, তিনি নিজের আত্মপরিচয় খুঁজেছেন একজন বাঙালী হিসেবে। সারাজীবন বিজ্ঞান মনস্কতা নিয়ে মানুষের কাছে বিজ্ঞানকে পৌঁছে দিতে কাজ করেছেন। তিনিই প্রথম পদার্থ বিজ্ঞানের বই বাংলায় অনুবাদ করেন। আর লেখক হিসেবে কম লিখলেও তা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি, তার কাজ ও তার স্মৃতির প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানায়।

এসময় তিনি ড. অজয় রায়ের বিভিন্ন লেখা একত্রিত করে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশের জন্য আহবান জানান। একইসাথে ঢাকার একটি সড়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল তার নামে নামকরনের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

মানবেন্দ্র দেব বলেন, ড. অজয় রায় ছিলেন ঠান্ডা, স্থির এবং শক্ত স্বভাবের মানুষ। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নে তার ভূমিকা অসামান্য। তিনি একাধারে একজন বিজ্ঞানী, মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রগতিশীলদের পক্ষের মানুষ। তার পরিচয় অজস্র। তিনি সবসময় নিজের মধ্যে দেশকে ধারণ করে রাখতেন।

রবীন আহসান বলেন, একটি সময় অভিজিৎ রায়, ব্লগার দীপন, ব্লগার নিলয়ের মতো লেখক ও প্রকাশকরা যখন হত্যার শিকার হয়েছেন, তখন তিনি আমাদের মাথার উপর থেকে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু তিনি তার ছেলে অভিজিৎ রায় হত্যার বিচার দেখে যেতে পারলেন না।

আয়োজনে গণসঙ্গীত ও শোক সঙ্গীত পরিবেশন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন খান আসাদুজ্জামান মাসুম। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অধ্যাপক অজয় রায় মৃত্যুবরণ করেন। শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা, পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়ের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। ফুসফুসের সংক্রমণের পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App