×

জাতীয়

গড়াইয়ে ডুবতে বসেছিল কবিগুরুর বোট ‘পদ্মা’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৯ এএম

গড়াইয়ে ডুবতে বসেছিল কবিগুরুর বোট ‘পদ্মা’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বয়স তখন তিরিশের কোটায়। গায়ক এবং কবি হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়েছে। পিতৃদেব জমিদারি দেখভালের জন্য গুরুদায়িত্ব চাপিয়েছেন। জমিদারি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। চলে গেলেন কালিগ্রাম, সেখান থেকে নদীপথে শাহজাদপুর। প্রিয় বোট ‘পদ্মা’ কাছারি পেরিয়ে দূরে নিরিবিলিতে বাধা। একলা বসে বসে এই নৈঃশব্দ, অপার শান্তি আর সৌন্দর্য দেখেই দিন কেটে যায়। জমিদারির কাজ আর কাব্যচর্চার মাঝে ফাঁক পেলেই কাগজ-কলম নিয়ে বসে যান লিখতে। এই কাহিনী ১৮৯১ সালের। সেদিনও সকাল সকাল লিখতে বসেছেন। ভরা বর্ষার কাল। কবি পদ্মা বোটে সেদিন গড়াই নদীবক্ষে। ভরা নদীর সৌন্দর্যে মোহিত। পাল তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে শিলাইদহ যাচ্ছেন। হু হু করে বোট দুলে দুলে চলেছে। হঠাৎই ৭বিপদ ঘনিয়ে এল। চলতে চলতেই গড়াই নদীর ব্রিজ দেখা গেল। বোটের মাস্তুল ব্রিজে আটকে যাবে কিনা, তাই নিয়ে মাঝিরা নিজেদের মধ্যে তর্ক শুরু করে দিল। তর্কের মধ্যে তাদের খেয়াল নেই যে ব্রিজ একেবারে ঘাড়ের কাছে এসে গেছে। বিপদ তো বলে কয়ে আসে না, দৈবাৎ হাজির হয়। দেখা গেল ব্রিজে মাস্তুল বেঁধে যাচ্ছে এবং সেখানে জলের একটা ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিও আছে। কবি লিখেছেন, ‘দেখতে দেখতে বোটটা ব্রিজের উপর গিয়ে পড়ল। মাস্তুল মড় মড় করে ক্রমেই কাত হতে লাগল। আমি হতবুদ্ধি মাঝিদের ক্রমাগত বলছি, তোরা ওখান থেকে সর। মাস্তুল ভেঙে তোদের মাথায় পড়বে। এমন সময়ে আর একটা নৌকো তাড়াতাড়ি দাঁড় বেয়ে এসে আমাকে তুলে নিলে। যদি সময় মতো নৌকো না আসত তাহলে আর বেশিক্ষণ টিকত না। সেদিন সকলে ডাঙায় এসে বলছিল, আল্লা বাঁচিয়ে দিয়েছেন, নইলে বাঁচার কোনো কথা ছিল না।’ পরে বোটে বসেই স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে এই ঘটনার কথা লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ‘আজ আর একটু হলেই আমার দফা নিকেশ হয়েছিল। তরীর সঙ্গে দেহতরী আর একটু হলেই ডুবে ছিল। ব্রিজের নিচে জলের তোড় খুব ভয়ানক। জানিনে, আমি সাঁতরে উঠতে পারতুম কি না। পরদিন লিখেছিলেন, কাল যমরাজের সঙ্গে এক রকম হাউ-ডু-ডু করে আসা গিয়েছে। মৃত্যু যে ঠিক আমাদের নেক্সট-ডোর-নেবার, এ রকম ঘটনা না হলে সহজে মনে হয় না। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেও কবির রসবোধে এতটুকু খামতি পড়েনি!

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App