×

সম্পাদকীয়

হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও আওতায় আনতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:১১ পিএম

বাংলাদেশ সচিবালয়ের চারপাশকে নীরব জোন ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত ‘নীরব এলাকা’য় যানবাহনের হর্ন বাজালে সরকারের প্রণীত বিধিমালা অনুযায়ী জেল-জরিমানা করা হবে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর এই আইন কার্যকর হবে। শব্দ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগটি বাস্তবায়ন জরুরি। পাশাপাশি হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও পর্যায়ক্রমে নীরব এলাকার আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিতে হবে। গত রবিবার সচিবালয়ে পবিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে সচিবালয়কে নীরব জোন এলাকা কার্যকর করতে এ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আওতাধীন এলাকা হচ্ছে- সচিবালয়ের সন্নিকটের জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড় ও সচিবালয় লিংক রোড। ওই এলাকায় চলাচলরত কোনো যানবাহন হর্ন বাজালেই জেল-জরিমানার শিকার হবে। বিধিমালা অনুযায়ী নীরব জোন এলাকায় হর্ন বাজালে প্রথমবার সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। একই অপরাধ পরবর্তী সময় করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দন্ডিত হবেন।

সহনীয় মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ তীব্রতার শব্দে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রাজধানী ঢাকার অর্ধকোটির বেশি মানুষ। শব্দদূষণের বর্তমান যে চিত্র, তা বিপজ্জনক মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নানামুখী আইন আর উচ্চ আদালতের দুদফায় নির্দেশনা জারির পরও প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না নীরব এই ঘাতককে। চিকিৎসকরা বলছেন, শব্দদূষণের কারণে মেজাজ খিটখিটে, উৎকণ্ঠা, মানসিক অস্থিরতা, উচ্চ রক্তচাপ, ঘুম না হওয়াও এক ধরনের শব্দভীতি তৈরি হয়। দীর্ঘদিনের শব্দদূষণের ফলে কেউ কেউ পুরোপুরি বধিরও হয়ে যেতে পারেন। এমনকি উচ্চ মাত্রার শব্দের কারণে হৃদরোগীর রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বেড়ে গিয়ে মৃত্যুঝুঁকিও হতে পারে। আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকাকে নীরব এলাকা চিহ্নিত করা হয়। এসব জায়গায় মোটর গাড়ির হর্ন বাজানো বা মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু রাজধানীতে কোথাও শব্দের মাত্রা স্বাভাবিক নেই। ভয়াবহ শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী এসব হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে ২০১৭ সালে রিট করা হলে হাইকোর্ট রাজধানীতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা বন্ধের নির্দেশনা দেন। আদেশে হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়।

এসব নির্দেশনা কি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ৬০ ডেসিবল শব্দে সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে। আর ১০০ ডেসিবলে চিরতরে তা হারাতে হতে পারে। অথচ রাজধানী ঢাকার অনেক জায়গাতেই শব্দ ১০৭ ডেসিবল পর্যন্ত ওঠে। শব্দদূষণের গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে ১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে শহরকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে- নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, শিল্প এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা। এসব এলাকায় দিন ও রাত ভেদে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শব্দদূষণের ব্যাপকতা রোধে প্রয়োজনীয় জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত সময়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ভবিষ্যতে আরো ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে নগরবাসীকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App