×

সারাদেশ

নদীকে পুকুর বানালেন পাউবো কর্মকর্তা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৩:১১ পিএম

নদীকে পুকুর বানালেন পাউবো কর্মকর্তা!
নদীকে পুকুর বানালেন পাউবো কর্মকর্তা!

ঐতিহ্যবাহী নদ-নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকার কোটি কোটি টাকার খনন কাজ করলেও কালীগঞ্জের বুড়ি ভৈরব নদীতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এলাকার এক প্রভাবশালী নদীর প্রায় দুই একর ৩৫ শতক দখল করে নদী খননের উদ্যোগকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে তৈরি করেছেন বড় পুকুর। এতে পাল্টে গেছে নদী খননের পুরো নকশা।

অভিযোগ উঠেছে, নদী দখলকারী হাজি সিদ্দিকুর রহমান পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা। তিনি খনন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারের ম্যানেজারকে টাকা দিয়ে অবৈধ এ কাজটি করছেন। তবে সিদ্দিকুর রহমানের দাবি, পুকুর তার নিজস্ব জমিতেই তৈরি করেছেন। নদী দখল করেননি।

স্থানীয় দুই গ্রাম মাসলিয়া ও হাসিলবাগের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিদ্দিকুর ‍নিজেই পাউবো কর্মকর্তা হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে পুকুর এলাকা থেকে অন্যদিকে নদী খনন কাজ করিয়েছেন। এ ঘটনায় মাসলিয়া গ্রামবাসীর পক্ষে জনৈক আব্দুল জান্নাত পাউবোসহ ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা ভুমি অফিসে অভিযোগ দিয়েছেন। নদীর মধ্যে থেকে পুকুর উচ্ছেদের দাবিতে তারা মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন।

গ্রামবাসীর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কালীগঞ্জের কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন ও বারবাজার ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়ি ভৈরব নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকার প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন কাজ শুরু করেছে। তবে নদীর মাঝে মাসলিয়া মৌজায় প্রায় ২ দশমিক ৩৫ শতক জমি দখল করে পুকুর তৈরি করেছেন জনৈক সিদ্দিকুর রহমান। তার পুকুর এলাকায় পাউবো অল্প কিছু খনন করে নদীর পথকে বা ম্যাপকেই পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পাউবো গাছ লাগিয়েও দিয়েছে।

মাসলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নদীর জায়গা দখল করে সিদ্দিকুর পুকুর তৈরি করেছেন। বিষয়টি অভিযোগ আকারে পাউবোকে জানানো হলেও সিদ্দিকুর পাউবোর কর্মকর্তা হওয়ার তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

লিখিত অভিযোগকারী আব্দুল জান্নান জানান, তাদের ব্যক্তিগত জমির মধ্যে দিয়ে পাউবোর ঠিকাদার নদী খনন করলেও সিদ্দিকুর রহমানের পুকুরে পাড় তারা বেঁধে দিয়েছে। আমরা গ্রামবাসী বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। হাসিলবাগ গ্রামের আবু বক্কার জানান, তাদের প্রায় ৩৫ শতক ফসলি জমি নদীর মধ্যে খনন করে নিয়েছে। কিন্তু পাশের হাজী সিদ্দিকের প্রায় ২ দশমিক ৩৫ একর জমি পাউবো হাত না দিয়ে বরং খনন করে দিয়েছে।

মাসলিয়া গ্রামের লাভলু রহমান জানান, বুড়ি ভৈরব নদীর মধ্যেই এই পুকুর নির্মাণ করেছেন হাজী সিদ্দিক। এই পুকুরের জন্য নদীর স্রোত ও গতি বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা চাই পুরো নদী খনন করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হোক। তিনি অভিযোগ করেন, পাউবোর ঠিকাদারের ম্যানেজার ও কিছু কর্মকর্তার যোগসাজসে নদী দখল করে পুকুর করা হয়েছে।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমার নিজের জমিতেই পুকুর করেছি। পাউবোকে জানানোর পর তারা পুকুরের পাশ থেকে কিছু অংশ খনন করে মাটি পাড়ে দিয়েছে। আমি পরে শ্রমিক নিয়ে পুকুর পাড় বেঁধে নিয়েছি। তিনি বলেন, কেউ পারলে এই পুকুর উচ্ছেদ করে দেখাক।

পাউবোর ঠিকাদারের ম্যানেজার ইউনুস আলী জানান, আমরা নদীর ম্যাপ অনুযায়ী খনন করেছি। খনন কাজ এখনও চলছে। কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি। যে পুকুরের কথা বলা হচ্ছে ওই পুকুরের মালিক আমাদের কাগজপত্র দেখিছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা জানান, আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পাউবো কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App