×

জাতীয়

আজও তাকে ঘিরে নারী বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৪১ এএম

আজও তাকে ঘিরে নারী বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে

বেগম রোকেয়া নারীমুক্তির যে পথ দেখিয়েছেন এবং ‘জাগো গো ভগিনী’ বলে নারীদের জেগে ওঠা ও জেগে থাকার তাগিদ দিয়ে গেছেন, সে কারণেই আজকের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে মাথা তুলে। রোকেয়া নারীমুক্তির প্রতীক। তাকে ঘিরে আজও নারী বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে বলে মনে করেন নারী ও মানবাধিকার কর্মীরা।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, বেগম রোকেয়ার ভ‚মিকা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে নানা বিশেষণে তাকে ভূষিত করা হয়। বলা হয় নারী জাগরণের অগ্রদূত, নারী শিক্ষার আলোকবাহক, সমাজ-সংস্কারক ও সাহিত্যিক। তবে এসব পরিচয়ই খণ্ডিত ও আংশিক। তাকে দেখতে হবে সমগ্রতায়। মানবিকতার দৃষ্টিভঙ্গির সামগ্রিকতা ও মৌলিকত্ব ছিল তার সব কর্মকাণ্ড ও রচনায়। তিনি ছিলেন একজন নারীবাদী সমাজচিন্তক। তার লেখনী ও কর্মকাণ্ড দিয়ে তিনি প্রতি মুহূর্তে সমাজের বিধিবদ্ধ প্রথার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন এবং তা ভেঙেছেন। তিনি হচ্ছেন একজন প্রথাভঙ্গা নারী। সমাজের গতানুগতিক বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন রোকেয়া। আর তাই আজ শতবর্ষ পরেও নারীর মানব হওয়ার আন্দোলনে ও সংগ্রামে রোকেয়ার কাছে বারবার ফিরে আসতে হয় প্রেরণা ও শক্তি অর্জনের জন্য।

বেগম রোকেয়াই প্রথম অনগ্রসর বাঙালি নারীকে আলোর পথে, শিক্ষার পথে নিয়ে আসার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তিনি নারীমুক্তির যে কথা বলে গেছেন, তা আজও সমান প্রাসঙ্গিক। তার বাণী ও কর্ম আজও আমাদের পথ দেখায় বলে মনে করেন নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক।

আজ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। ১৯৩২ সালের একই তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বেগম রোকেয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নতুনভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে সারাদেশে পালিত হচ্ছে বেগম রোকেয়া দিবস। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রোকেয়া পদক পাচ্ছেন পাঁচ গুণী নারী : ৫ গুণী নারীকে আজ সোমবার দেয়া হবে রোকেয়া পদক-২০১৯। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই ৫ নারী বা তাদের পরিবারের সদস্যের হাতে পদক তুলে দেবেন। এ বছর নারী শিক্ষা, নারী অধিকার, নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে সেলিনা খালেক, নারী শিক্ষায় অধ্যক্ষ শামসুন্ন নাহার, নারী শিক্ষা, নারীর অধিকার, নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য ড. নুরুন্নাহার ফয়জুননেসা (মরণোত্তর), নারীর অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে পাপড়ি বসু এবং নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য আখতার জাহানকে এই পদক দেয়া হচ্ছে।

রোকেয়ার জন্মভিটায় তৈরি স্মৃতিকেন্দ্র দেড় যুগেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি : ১৯৯৭ সালে রংপুরের পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়ার জন্মভিটায় স্মৃতিকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কেন্দ্রের ভেতর নির্মিত হয় রোকেয়ার একটি ভাস্কর্য। এ ছাড়া নির্মাণ করা হয় একটি অফিস ভবন, সর্বাধুনিক গেস্ট হাউস, মিলনায়তন, ডরমিটরি, গবেষণা কক্ষ, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, আবাসিক সুবিধাসহ বিশাল অবকাঠামো। ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। কিন্তু এতদিনেও স্মৃতিকেন্দ্রটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। গ্রন্থাগার থাকলেও সেখানে যুগোপযোগী বই ও সাময়িকী নেই। দৈন্যদশা মিলনায়তনের। নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যন্ত্রপাতি থাকলেও কার্যক্রম নেই।

বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও রোকেয়া গবেষক রফিকুল ইসলাম দুলাল জানান, যে স্বপ্ন নিয়ে এই স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন করা হয় এতদিনেও তার পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। আর কেন্দ্রের সার্বিক সংস্কার করতে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ইতোমধ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানান স্মৃতিকেন্দ্রের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল ফারুক।

কর্মসূচি : দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী রোকেয়া পদক-২০১৯ বিতরণ করবেন। এ ছাড়া আজ থেকে পায়রাবন্দে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, স্বেচ্ছায় রক্তদান, রোকেয়া বইমেলা উদ্বোধন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App