×

সারাদেশ

সব পদই শূন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০২:০৮ পিএম

সব পদই শূন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের!
সব পদই শূন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের!
সব পদই শূন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের!
শ্রীনগর উপজেলার কুকুটিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির সব পদই শূন্য। প্রায় দেড় দুই বছর যাবত বসেন না কোনও ডাক্তার। নেই কোনও চিকিৎসা সেবাও! স্থানীয়রা পাচ্ছেন না কোন প্রকার চিকিৎসা সেবা। এখনও টিকা দিতে আসেন অনেকে। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে নামে মাত্র সরকারী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এটি। চোখে পড়েনি প্রতিষ্ঠানের নামে কোনও সাইনবোর্ড। চিকিৎসা কেন্দ্রটির আঙ্গিনায় ঝোপজঙ্গলে ভরপুর ও কেন্দ্রর ভিতরে ফাঁকা রুমগুলোতে ময়লা-আবর্জনা, ধুলবালি, ভাঁঙাচুরা চেয়ার-টেবিল পড়ে রয়েছে। মূলফটকে থাকে তালা ঝুলানো। জনবলের অভাবে এভাবেই বহুদিন পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শীতের সকাল তখন সাড়ে দশটা। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা কয়েকজন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র চত্ত্বরে দাড়িয়ে আছেন। তখনও কেন্দ্রের কেচি গেইটটিতে তালা ঝুলছে। তারা জানান ডাক্তার এখনো আসেনি। আস্তে আস্তে সেবা নিতে আসা মানুষের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ২০-২৫ জনে দাড়ায়। তখন বেলা প্রায় সোয় ১১ টা, উপস্থিত একজন বলেন ঐযে ডাক্তার আসছেন। ততক্ষনে ক্যামেরা দেখে সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে আগত ব্যক্তি মোবাইল ফোনে কোনও একজনের সাথে কথা বলছেন। কথা বলা শেষে তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তার নাম মো. সিদ্দিক জানান। এখানে তার কোনও কাজ নেই। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছুনা বলে দাবি করেন। এখানের চাবি তার কাছে রয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন আমার কাছে চাবি আছে। চাবি রেখেছি আমার চেয়ার টেবিল রয়েছে ভিতরে। তা বেড় করবো। আমি শুধু প্রতিষ্ঠান চত্ত্বরে বসে টিকা দেই। তার সাথে কথা বলে জানাযায়, প্রমোশন পেয়ে তিনি সহকারী স্বাস্থ্য পরির্দশক হিসেবে কাজ করছেন। একই পদে তার স্ত্রী শিউলীও রয়েছেন। তারা বিভিন্নস্থানে টিকা প্রদান করেন। তিনি আরো বলেন আমার জানামতে এখানের ৪টি পদে সবকটি পদই শূন্য। খোঁজখবর নিয়ে জানাযায়, মো. সিদ্দিকের কুকুটিয়া বাজারে তার একটি ফার্মেসী রয়েছে। তিনি সেখানে নিয়মিত বসেন। স্থানীয়রা তাকে ডাক্তার হিসেবেই চিনেন। অনুসন্ধানে আরো জানাযায়, গত দুই বছর পূর্বে ডাক্তার তোফাজ্জল হোসেন এখানে থাকাকালীন তিনিও ঠিকমত এখানে বসতেন না। তার বিরুদ্ধে ছিলো নানা অভিযোগ। তিনি পেশাগত দায়িত্বে থাকাকালীন সংশ্লিষ্ট অফিসকে না জানিয়ে কাজের জন্য কয়েক বছর জাপানে অবস্থান করেন। দেশে ফিরেও দায়িত্বে ঠিরেন তিনি। ডাক্তার তোফাজ্জল হোসেন দুই-তিন দফায় এখানে প্রায় ২০-২৫ বছর দায়িত্ব পালন করে গেছেন তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অভিযোগ উঠার পরেও। তার অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে কয়েকদিন পরে তার বদলি হয়। অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে বিভিন্নস্থানে যোগদানকৃত ডাক্তাদের তালিকা থেকে জানাযায়, কুকুটিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সহকারী সার্জন হিসেবে ডা. ইসমেহান আশরাফের নাম উল্লেখ আছে (যোগদান, ২৯-০৩-২০১৯)। তার মোবাইল ফেনে যোগাযোগ করে যানা যায় তিনি গত দুই-তিন মাস পূর্বে বদলি হয়ে এখন ঢাকায় আছেন। স্থানীয়রা জানায়, ডাক্তার তোফাজ্জল হোসেন যাওয়ার পরে এখানে ঠিকমত কখনো ডাক্তার বসতে দেখেননি তারা। তবে মাঝে মধ্যে সিদ্দিকই এখানে আসেন টিকা দিতে। বাকি সর্বক্ষণই গেইট তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখেন তারা। ওই প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন বসতবাড়ির বাসিন্দা মো. এনামুল হক (৫৫) বলেন, আমি এখানে নিয়মিত বসবাস করে আসছি। আমার চোখে গত দুই বছর যাবত এখানে কোনও ডাক্তার বসতে দেখিনি। মাঝে মধ্যে যদিও কেউ এসেছেন অপরিচিত, তারা কয়েক মিনিট পরেই চলে গেছেন। এ সময় চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মো. রবিউল শেখ (২৭), তানহা আক্তার (২১), সাদিয়া আক্তার (১৪) সহ অনেকেই বলেন, তারা এখানে বাচ্চদের টিকা দিতে এসেছেন। মাসে এক-দুই বার এখানে ডাক্তার সিদ্দিক এসে টিকা প্রদান করেন। স্থানীয় বাজারে তার ফার্মেসী আছে। তারা বলেন আমরা তাকে ডাক্তার হিসেবেই জানি। কুকুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. বাবুল হোসেন বাবুর সাথে এ বিষয়ে আলাপ করে জানাযায়, এখানে কোনও ডাক্তার বসেন না। কোনও প্রকার ঔষুধপাতি আসেনা এখানে। জণগন এই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকে কোনও প্রকার চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা! একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষ মিটিংয়ে এ বিষয়ে উল্লেখ করেছি। কোনও কাজে আসেনি। উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা অফিসার কাজী মমতাজ বেগমের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐখানে এখন কেউ নেই। সব পদই শূন্য। তবে দেলোয়ারা বেগম নামে একজন (এফডব্লিও) পরির্দশিকা সপ্তাহে ভিজিট করেন। সিদ্দিকের কাছে ওই কেন্দ্রের চাবি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার কাছে প্রতিষ্ঠানের চাবি থাকার কোনও কারণ দেখছিনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App