×

পুরনো খবর

অরক্ষিত শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৩৪ এএম

অরক্ষিত শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি

‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে।’ এ কবিতার স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর কবিতার সঙ্গে স্মৃতিবিজড়িত স্থানটি হলো সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামানুসারে তার নিজস্ব জায়গায় উপজেলার বুড়ি পোতাজিয়া মৌজায় স্থাপিত হয় ৩৫তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ’। ২০১৮ সাল থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ’-এর যাত্রা শুরু হয়েছে।

‘ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো, তোমার মনেরও মন্দিরে। আমারও পরানে যে গান বাজিছে তাহার তালটি শিখো, তোমার চরণ মঞ্জিরে।’ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বিচ্ছেদ স্মরণ করে কবি রবিঠাকুর লিখেছিলেন তার বিখ্যাত ‘যাচনা’ কবিতাটি। বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রবাদ প্রতিম পুরুষ নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অফুরান অভিজ্ঞতার উৎস বাংলাদেশ। তিনি এসেছিলেন জমিদারি করতে। কিন্তু কান পেতে শুনেছেন বাংলার মাটি-জল-হাওয়ার গল্প। শিলাইদহে পেয়ে বসেছিল বাউলের সুরে মানুষ খোঁজার অন্বেষা। শাহজাদপুর তাকে দিয়েছে অন্য স্বাদ। যদিও বিশ্বকবি শিলাইদহ ও পতিসরের চেয়ে শাহজাদপুর কম সময় অবস্থান করেছেন তবুও শাহজাদপুরের যমুনা, বড়াল, করতোয়া, হুরাসাগর নদী রবীন্দ্র সাহিত্যের বিশাল স্থান দখল করে আছে।

এই শাহজাদপুর ঘেঁষে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। করতোয়ার একটা শাখা যুক্ত হয়েছিল বড়াল নদীর সঙ্গে। এই শাখা নদী খোনকারের জোলা কুঠি বাড়ির সামনে দিয়েই বহমান ছিল। কবিগুরু এই নদী দিয়ে তার বোট ‘চিত্রা’ ও ‘পদ্মা’ দিয়ে যাতায়াত করতেন। সেটি এখন ভরাট। এ নদী দেখেই রবীন্দ্রনাথ লিখে ছিলেন, ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।’

শাহজাদপুরের কাছারি বাড়িটি ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ৩১ দরজা বিশিষ্ট একটি দোতলা ভবন। প্রায় দশ বিঘা জমির উপরে নির্মিত ভবনটির দৈর্ঘ্য ২৬ দশমিক ৮৫ মিটার এবং প্রস্থ্য ১০ দশমিক ২০ মিটার এবং উচ্চতা ৮ দশমিক ৭৪ মিটার।

ভবনটির প্রতি তলায় সিঁড়িঘর বাদে বিভিন্ন আকারের সাতটি ঘর রয়েছে। ভবনটির উত্তর-দক্ষিণে একই মাপের বারান্দা। বারান্দায় গোলাকৃতি থামের উপরাংশের অলঙ্করণ, বড় মাপের দরজা, জানালা ও ছাদের উপরের দেয়ালে পোড়ামাটির কাজ বিশেষভাবে লক্ষণীয় ভবনটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ভিত্তিক জাদুঘরে ১৩০৭ বঙ্গাব্দের ২৮ ভাদ্রে লেখা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এই চিঠি জাদুঘরটিকে সমৃদ্ধ করেছে। ভবনটির পশ্চিমে বকুল গাছের গোড়ায় বৃত্তাকার বাঁধানো একটি মঞ্চ আছে। এটি ‘রবীন্দ্র মঞ্চ’ বলে পরিচিত। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে এসেছেন অনেকবার।

এখানে অবস্থানকালে কবিতা, প্রবন্ধ, ছোট গল্পসহ অনেক অমর রচনাবলি লিখেছেন কবি। তিনি নেই কিন্তু তার পায়ের চিহ্ন রয়ে গেছে কাছারি বাড়িসহ শাহজাদপুরের বিভিন্ন স্থানে। সঙ্গে রয়েছে তার জীবনের নানা স্মৃতি। কাছারি বাড়িতে রক্ষিত অর্ডার বুক থেকে জানা যায়, জমিদারি দেখা শোনার কাজে কবিগুরু ১৮৯০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম শাহজাদপুর আসেন। ১৮৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তিনি এখানে এসেছেন। শাহজাদপুর কাছারি বাড়ি অষ্টাদশ শতাব্দীতে ছিল নীলকরদের কুঠি। যে কারণে এখনো এটা ‘কুঠিবাড়ি’ বলে পরিচিত। পরে কবিগুরু রবীর ঠাকুর দা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৪০ সালে শাহজাদপুরের জমিদারি নিলামে উঠলে মাত্র ১৩ টাকা ১০ আনায় কিনে নেন। এই এলাকা নাটোরের জমিদারির অংশ ছিল। জমিদারি কিনে নিলে প্রায় ১০ বিঘা জমিসহ এই কুঠি বাড়িটিও কবি পরিবারের হাতে আসে। বর্তমানে কবির পরশধন্য এই বাড়িটি রক্ষণা-বেক্ষণে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দায়িত্ব নিয়েছে। রেস্ট হাউস না থাকায় পর্যটকরা বেশি সময় এখানে অবস্থান করেন না। তাদের দাবি রেস্ট হাউস নির্মাণের। শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির সহকারী কাস্টোডিয়ান মো. জায়েদ জানান, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ দেশি-বিদেশি দর্শণার্থী কাছারি বাড়ি পরিদর্শনে আসেন।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামসুজ্জোহা জানান, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শাহজাদপুরের গৌরব। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ৩ দিনব্যাপী প্রতিবছর ২৫ বৈশাখ কবি গুরুর জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়।

তিনি আরো জানান, এখানে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক আসেন। অনেকেই এখানে ভালোমানের রেস্ট হাউস এবং নিরাপত্তা না থাকায় বেশিক্ষণ অবস্থান না করেই চলে যান। তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই কাছারি বাড়িতেই যেন পর্যটকদের জন্য আবাসিক ভবন স্থাপন করা যায় সেজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App