রাজনৈতিক স্বার্থেই সুচির হেগ মিশন
nakib
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৩৩ পিএম
মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি। ফাইল ছবি
নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে গতবার ইউরোপে গিয়েছিলেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি। যিনি কিনা অর্ধশতক ধরে দেশটিতে চলমান সামরিক শাসনের অবসান ঘটানোর কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। তবে এবার সুচির ইউরোপ যাত্রা একেবারেই ভিন্ন রূপে, ভিন্ন কারণে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংস গণহত্যার অভিযোগ খণ্ডন করতে। তাও আবার সেনাশাসকের পক্ষ হয়েই। যেটা সত্যিই বিস্ময়কর, অভাবনীয়।
জীবনের অধিকাংশ সময় সেনাশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এই নারীই শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন। গোটা বিশ্বেই হয়েছিলেন প্রশংসিত। তবে রোহিঙ্গা গণহত্যায় তার মদদ থাকায় তার সেই নোবেল কেড়ে নেয়ার দাবিও উঠেছিল বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষের পক্ষ থেকে।
সুচির সেই মিয়ানমার আর তার সেনাবাহিনীর চালানো রোহিঙ্গা গণহত্যা আর গণধর্ষণের অভিযোগে গেল মাসেই আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) দেশটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে আফ্রিকার ছোট মুসলিম দেশ গাম্বিয়া। ওআইসির ৫৭টি মুসলিম দেশ তাদের এ মামলা করতে সমর্থন দেয়।
তবে মিয়ানমার সব অভিযোগ অস্বীকার করে এবং সুচির অফিস থেকে জানানো হয়েছে, জাতিয় স্বার্থ রক্ষায় সুচি ১০ ডিসেম্বর হেগে শুনানিতে অংশ নিবেন। অনেকেই সুচির এমন ঘোষণায় হতবাক হয়ে গেছেন। যিনি সেনা শাসনের বিরোধিতা করায় ১৫ বছর গৃহবন্দি জীবন কাটান তিনিই আবার জনগণের স্বার্থ ভুলে সেনাবাহিনীর পাপ ঢাকতে নিজেই নেমে এলেন আন্তর্জাতিক অপরাধের পক্ষে।
২০১৬ সালে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্টে একজন তারকা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন সুচি। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়টি সামনে এলে নীরব হয়ে যান তিনি। তার সেই নীরবতায় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
গণহত্যা
২০১৭ সালে নিরাপত্তাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধদের আক্রমণে ৭ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়। এতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণীর্থী শিবিরের সৃষ্টি হয় কক্সবাজারে। জাতিসংঘ তদন্তদল যাকে গণহত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিন সেনা অভিযান বলে অভিহিত করেছে। তবে সেনাবাহিনী অভিযোগ অস্বীকার করে নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর পরিচালিত সন্ত্রাসী হামলার জবাবে এ অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে দাবি করে।
যদিও লোক দেখানো হিসেবে ১০ রোহিঙ্গা পুরুষকে হত্যার দায়ে মিয়ানমারের সাত সেনাসদস্যকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েই খালাস পাওয়ার চেষ্টা করে তারা। যদিও তারা এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যেই মুক্তি পায়। আবার এরই মধ্যে গতমাসে আরেকটি গ্রামে রোহিঙ্গা হত্যার অভিযোগে কিছুসংখ্যক সেনাসদস্যের বিচার করার জন্য কোর্ট মার্শলের আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিক মহলকে দেখানোর চেষ্টা করা হয় সেখানে বিচারের কাজ চলমান।
রাজনৈতিক স্বার্থ
গেল কয়েক সপ্তাহ ধরেই মিয়ামারে নির্বাচনের আমেজ চলছে। এরই মধ্যে বড় বড় কয়েকটি শহরে সুচির পক্ষে সমাবেশ হয় যেখানে তার সমর্থকরা পতাকা হাতে নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। শুনানির প্রথমদিন আরো কিছু সমাবেশ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এসব সমাবেশের মাধ্যমে সুচির শক্ত অবস্থানের জানান দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
২০২০ সালে আবার নির্বাচন হতে যাচ্ছে মিয়ানমারে যেখানে নিরপেক্ষ নির্বাচন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের দাবীতে সুচি জনসমর্থন আদায় করতে পেরেছিলেন সেখানে জাতিগত সংঘাত নিরসনে ব্যর্থ হওয়ায় ও সংবিধান সংশোধন করতে না পারায় সুচির ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
অন্যদিকে দেশটির কারান রাজ্যে সুচির পোস্টার দিয়ে অনেক বিলবোর্ড টানানো হয়েছে যেখানে সুচি পাশে তিনজন সেনাসদস্য দেখা যায় আর নিচে লিখা রয়েছে ‘আমরা তুমার পাশে আছি’।
সবকিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা আর নিজের অবস্থান পাকাপোক্তা করার জন্য সুচি এ অবস্থান নিয়েছেন বলে ক্রমেয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর তা করতে গিয়ে এক সময়ের শত্রু সেই জান্তা সরকারের সাথেই মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছেন সুচি।
আগের নিউজ দেখতে:
আন্তর্জাতিক মহলের চাপে পড়ছে মিয়ানমার
রোহিঙ্গা গণহত্যায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা