×

পুরনো খবর

ভুটান না ভারত কার স্বীকৃতি আগে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৩৪ পিএম

ভুটান না ভারত কার স্বীকৃতি আগে
ভুটান না ভারত কার স্বীকৃতি আগে

মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে এসে ‘ভুটান না ভারত’- কে আগে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল তা ৪৮ বছরেও মীমাংসা করা যায়নি। দেশ দুটি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু রাষ্ট্র হলেও ইতিহাসের স্বার্থে বিষয়টির সঠিক সমাধান চেয়েছেন বিশ্লেষকরা।  শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) ভুটান ও ভারতের স্বীকৃতির ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীতে আয়োজিত পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে বক্তারা আলাদা তথ্য জানিয়ে বক্তব্য রাখায় বিষয়টি ফের সামনে এসেছে। এর সমাধান না হলে তরুণ প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হবেন- এমনটি মনে করছেন গবেষকরা।

জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ও বাংলাদেশ-ভারতবিষয়ক আলোচনা সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনকালে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল ভুটান। কিন্তু বিভিন্ন তথ্যে থেকে জানা গেছে ভারত ৬ ডিসেম্বর এবং ভুটান ৭ ডিসেম্বর স্বীকৃতি দিয়েছিল। মঞ্চে উপবিষ্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এটি সংশোধন করার আহ্বান জানান তিনি।

তবে তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন নীরব থাকেন। পরে তিনি বলেন, এদিনে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে। ভারতের অবদান ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অকল্পনীয়। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তা তুলনাহীন। ভারতের প্রায় ১ হাজার ৭০০ সৈন্য মুক্তিযুদ্ধের সময় আত্মত্যাগ করেছে।

অন্যদিকে, গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর আলোচনা সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে অধিকাংশ বক্তাই বলেছেন, ৬ ডিসেম্বর ভুটান প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ভুটানের স্বীকৃতি দেয়ার কয়েকঘণ্টা পরেই ভারতও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। কাজেই ৬ ডিসেম্বর দিনটি আনন্দের।

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রথমে ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর ভারতও স্বীকৃতি দেয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে এসে এই স্বীকৃতি মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৬ ডিসেম্বর ভুটানের স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহসভাপতি ম. হামিদ বলেন, ৬ ডিসেম্বর আনন্দের দিন। এদিন প্রথমে ভুটান ও পরে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

অনেকের প্রশ্ন, বাংলাদেশকে কোন দেশ প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল? কেউ বলছে ভারত, কেউ বলছে ভুটান। গবেষক শাহরিয়ার কবিরের কথায়, সব দলিলই বলছে, ৬ ডিসেম্বর ভারতই প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। তবে ভারত কিংবা ভুটান যে দেশই হোক, অফিসিয়ালি সেই স্বীকৃতির চিঠি পাঠানো হয়েছে তাজউদ্দীন আহমদের বরাবরেই এবং ১৯৭২ সালে এক সাক্ষাৎকারে তাজউদ্দীন আহমদ তা বলেও গেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মতো খুঁতখুতে এবং ডিটেল নিয়ে কাজ করা মানুষ এত বড় ভুল করবেন যে, ভুটানের আগে ভারতের নাম বলে দেবেন!

১৯৭২ সালের ৬ ডিসেম্বর দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত তাজউদ্দীন আহমদ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের অনুরোধ জানিয়ে ১৯৭১ সালের ১৫ অক্টোবর প্রথম শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে চিঠি লিখি। এরপর ২৩ নভেম্বর আরো একখানা চিঠি দেই। ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ঘোষিত যুদ্ধের আগের দিন ২ ডিসেম্বর এবং পরের দিন ৪ ডিসেম্বর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। ৬ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় ভারতীয় পার্লামেন্ট বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের কথা ঘোষণা করার পর শ্রীমতি ইন্দিরা আমাকে একখানা আনুষ্ঠানিক চিঠি দেন। ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৩টায় মুজিবনগরে সেই চিঠি আমার হাতে এসে পৌঁছেছে।

এ বিষয়ে আরো একটি প্রমাণ হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ’ নামে সে সময় মুজিবনগর সরকারের একটি আন্তর্জাতিক প্রকাশনা ছিল। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত ওই প্রকাশনার প্রথম বর্ষ ২৪তম সংখ্যায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছবিসহকারে তার প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে।’ ‘ভারতের পর ভুটান দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে।’

বার্তা সংস্থা ‘রয়টার্স’ এবং ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’-এর (এপি) সৌজন্যে সেই সংবাদ বিশ্বব্যাপী প্রচারও হয়েছে। দৈনিক বাংলার সেই সাক্ষাৎকারে তাজউদ্দীন আহমদ আরো বলেছিলেন, ১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট সম্পাদিত ঐতিহাসিক ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তিই ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাকে স্বীকৃতিদানের প্রথম ভিত্তি। এটি ছিল বর্তমান বিশ্বের কূটনীতির ক্ষেত্রে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর অসাধারণ সাফল্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App