×

জাতীয়

কোন্দলে বিপর্যস্ত তৃণমূল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:২১ পিএম

কোন্দলে বিপর্যস্ত তৃণমূল

দেশব্যাপী দল পুনর্গঠন নিয়ে বিভক্তি বাড়ছে বিএনপির তৃণমূলে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তৃণমূল নেতাদের মত না নেয়া, নেতৃত্ব ও আধিপত্যের কোন্দল, সুযোগ সন্ধানীদের তৎপরতাসহ নানামুখী বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। রাগ-ক্ষোভ ও অভিমানে দলের কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ দলও ছেড়েছেন। কমিটি গঠনে কেন্দ্রের একচেটিয়া সিদ্ধান্তের কারণে দলের ভেতরে সমস্যা আরো তীব্র হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, দল পুনর্গঠনে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটির মধ্যে অধিকাংশ কমিটি ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে। সেখানে দ্রুতই নতুন কমিটি করা হবে। তিনি বলেন, কমিটি গঠনের সময় দুএকটি অভিযোগ থাকতেই পারে। তবে যেসব জেলার কমিটি হয়েছে, সেখানে দলের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছেন। কোন্দল নেই। দলীয় কর্মসূচিতে যখনই ডাকছি, তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে পাশে পাচ্ছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোনো কোনো জেলায় গঠিত আহবায়ক কমিটির নেতারা থানা, পৌর ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে ত্যাগী ও যোগ্যদের দূরে সরিয়ে নিজেদের কোটারি সৃষ্টি করছেন। ফলে এরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা কর্মসূচি ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পালন করা হয়। জেলা নেতারা জানান, কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা সিনিয়র-জুনিয়র না মেনে নিজেদের মতো করে কমিটি দিচ্ছেন। যাদের নেতা বানানো হচ্ছে- দুঃসময়ে মাঠের নেতারা তাদের চেনেন না।

এ নিয়ে জেলা নেতাদের অনেকেই দূষছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। তারা বলছেন, কমিটি পুনর্গঠনে তারেক রহমান সরাসরি এতটা হস্তক্ষেপ না করে নেতাদের হাতে ছেড়ে দিলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কমে আসত। অনেকে আন্দোলনে রাজপথে থাকেন না, কর্মসূচিতে অংশ নেন না। অথচ তারেক রহমানকে ম্যানেজ করে কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে নিচ্ছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, যাদের নামে মামলা, যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের সমর্থন না দিয়ে টাকাওয়ালাদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যার ফলে দলের দুঃসময়ে যারা পাশে ছিলেন, তারা ক্ষোভে ফুঁসছেন। এ ক্ষোভ থেকেই বাড়ছে অভ্যন্তরীণ সংঘাত। দলে প্রভাবশালীদের রোষাণল থেকে বাঁচতে কেউ কেউ সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলছেন। কেউ বা কেন্দ্রে গোপনে অভিযোগ দিয়ে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

দাপুটে নেতা প্রয়াত তরিকুল ইসলামের এলাকা যশোর বিএনপিতে বিভক্তি এখন চরমে। গত ২১ এপ্রিল দীর্ঘদিনের কমিটি বাতিল করে যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ৫৩ সদস্যের আহবায়ক কমিটিতে আহবায়ক করা হয় তরিকুল পত্নী নার্গিস ইসলামকে। আর সদস্যসচিব হন সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুকে। তরিকুল ইসলামের পুত্র অমিত নিজ উদ্যোগে কেন্দ্র থেকে কমিটি অনুমোদন করে এনেছেন- এমন অভিযোগ করে সেই কমিটিতে নিজেকে সদস্য সচিব হিসেবে মেনে নেননি সাবু।

কিশোরগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা রয়েছেন চরম বিভ্রান্তিতে। নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জের ধরে অনেকেই রাজনীতি ছেড়ে ব্যবসায় মন দিয়েছেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, কোনো দল যখন চতুর্মুখী চাপে থাকে, তখন নেতাকর্মীরা হতাশায় ভুগবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিএনপির কেন্দ্র থেকে সঠিক দিক-নির্দেশনা না পাওয়ার কারণে এখানে সবাই নিজেকে নেতা মনে করেন। কোনো শৃঙ্খলা নেই। মাঠের রাজনীতি নেই। কেউ কাউকে মানে না। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় থেকে পরবর্তী সময়ের প্রতিটি ঘটনার বিষয়ে বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তহীনতা মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের হতাশ ও ব্যথিত করেছে।

খালেদা জিয়ার আসন বগুড়ার নেতাকর্মীরা অনেকটাই ছন্নছাড়া। তাদের ক্ষোভ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের ওপর। তৃণমূলের একাধিক নেতা বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বগুড়া থেকে বিপুল ভোটে জিতলেন, অথচ শপথ নিলেন না। তার শপথ না নেয়ার খেসারত এখন এই এলাকার মানুষকে দিতে হবে। পরবর্তীতে যিনি নির্বাচিত হয়েছেন তাকে ভরসা করা যায় না।

ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের গুরুত্বটা ভুলতেই বসেছে বরিশাল বিএনপির নেতাকর্মীরা। নিজেরাই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন। বিলকিস আক্তার জাহান শিরিণকে শোকজ করার মধ্যে বিএনপির কোন্দল আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ারের একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাই এই কোন্দলের অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করেন কেউ কেউ।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দুগ্রুপের কোন্দল এখন প্রকাশ্যে। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হাসানসহ উপজেলার পর্যায়ের সিনিয়র নেতারা। অন্য গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান বেল্টু ও সাবেক ছাত্রনেতা জেলা বিএনপির সদস্য হামিদুল ইসলাম হামিদসহ কিছু নেতাকর্মী। নির্বাচনের পর থেকেই দুগ্রুপ পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। একটি গ্রুপ অন্য গ্রুপের নেতাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানও আলাদাভাবে পালন করে দুগ্রুপ।

নেতৃত্বের বিভক্তি ও দলীয় কোন্দলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না রাজনীতির মাঠে। বিশেষ করে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নামমাত্র সংগঠনে পরিণত হয়েছে। কমিটি গঠন হলেও কোনো সাংগঠনিক চর্চা না থাকায় সাবেক কমিটির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকারের সমর্থক নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। ফলে বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে ও সাবেক সভাপতি তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করেন।

গোপালগঞ্জ জেলা কমিটি ঘোষণার পরই নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ চলছে। ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ এনে যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান পিনু পদত্যাগ করেন। বিতর্কিতদের দিয়ে সিলেট জেলা আহ্বায়ক কমিটি করায় তৃণমূলে ক্ষোভ-সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। জেলার ১৭টি ইউনিটের ১৬ সভাপতি ১৫ সাধারণ সম্পাদককে অবমূল্যায়ন করে বিতর্কিতদের আহ্বায়ক কমিটিতে রাখা হয়েছে। এমনকি নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া বিশ্বনাথ উপজেলার কোনো নেতার ঠাঁই হয়নি আহ্বায়ক কমিটিতে। এমন পরিস্থিতিতে সিলেট সিটির মেয়র আরিফসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা পদত্যাগও করেন। মহসচিব মির্জা ফখরুল বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেও এখনো এর কোনো সুরাহা হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App