×

অর্থনীতি

একযুগ পর লাভের মুখে মধ্যপাড়া পাথর খনি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৩২ এএম

একযুগ পর লাভের মুখে মধ্যপাড়া পাথর খনি
একযুগ পর লাভের মুখে মধ্যপাড়া পাথর খনি

প্রায় একযুগ পর প্রথম বারের মতো লাভের মুখ দেখেছে দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথর খনি পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল)। পেট্রোবাংলার এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা মুনাফা করেছে।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) আবু তালেব মো. ফারাজী জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খনি থেকে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৪ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। এসময়ে বিক্রি হয়েছে ৭ লাখ ৩১ হাজার ১৯৪ টন পাথর। এ থেকে মুনাফা হয়েছে ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। বিষয়টি গত ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এমজিএমসিএল’র বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) উপস্থাপন করা হয় হয়েছে।

সূত্রমতে, মধ্যপাড়া পাথর খনি ২০০৭ সালের ২৫ মে থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ছয় বছরে লোকসান দিতে হয়েছে প্রায় একশ কোটি টাকা। এ লোকসানের অন্যতম কারণ প্রতিদিন তিন শিফটে ৫ হাজার টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক শিফটে মাত্র ১ হাজার টন পাথর উৎপাদন।

বছরের পর বছর ধরে লোকসান দিতে দিতে ঋণের পাল্লা ভারী হয়ে বন্ধের মুখে ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয় বেলারুশের জেএসসি ট্রেস্ট সকটোসট্রয় ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া করপোরেশন লিমিটেড নিয়ে গঠিত জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামকে (জিটিসি)। জিটিসি ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিনিময়ে ৬ বছরের উত্তোলন করে দিবে ৯২ লাখ টন পাথর।

২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জিটিসি খনির দায়িত্ব নেয় এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি পাথর উত্তোলন শুরু করে। এ পর্যন্ত উৎপাদন করতে পেরেছে মাত্র প্রায় ৩৭ লাখ টন পাথর। যা মোট উৎপাদন লক্ষমাত্রার ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ। আগামী ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জিটিসির সাথে চুক্তি মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।

ভূ-গর্ভে নতুন স্টোপ উন্নয়ন ও উৎপাদন সহায়ক অতি প্রয়োজনীয় মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট সময়মতো বিদেশ থেকে আমদানি করার উদ্যোগ না নেয়ায় মাঝপথে প্রায় দুই বছর খনির উন্নয়ন ও পাথর উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় জিটিসি। ফলে সময়মতো লক্ষমাত্রা অর্জন করতে পারেনি জিটিসি। পরে খনি কর্তৃপক্ষ অর্থ সরবরাহ করলে অত্যাধুনিক ও বিশ্বমানের মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট খনি ভূগর্ভে বসিয়ে এবং স্টোপ উন্নয়ন করে জিটিসি পুণরায় উৎপাদনে যায়।

বর্তমানে প্রতি মাসে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টন হিসেবে মাসে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার টন পাথর উৎপাদন হচ্ছে। এর ফলে খনিটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ঠিকাদারের সময় বর্ধিত বা চুক্তি নবায়ন করা প্রয়োজন।

খনির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি’র নির্বাহী পরিচালক জাবেদ সিদ্দিকী জানান, খনির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে জিটিসি খনিটিকে লাভজনক করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। খনির নতুন স্টোপ নির্মাণ করে বিদেশি মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ স্থাপন করে খনির পাথর উত্তোলন বৃদ্ধিকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে অর্ধশতাধিক বিদেশি খনি বিশেষজ্ঞ, দেশি প্রকৌশলী এবং ৭ শতাধিক খনি শ্রমিক তিন শিফটে পাথর উত্তোলন কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। বর্তমানে সব সমস্যা কাটিয়ে খনির উৎপাদন পুরোদমে চলছে। এখন প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৫ হাজার টন পাথর উত্তোলন হচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এই উৎপাদন আরও বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এদিকে, খনিটি প্রথমবারের মতো লাভের মুখ দেখায় শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে জিটিসি এক আলোচনা সভা ও প্রীতিভোজের আয়োজন করে। খনি কম্পাউন্ডে জিটিসি ক্যাম্পাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহনাজ মিথুন মুন্নী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান, ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন, জিটিসি’র নির্বাহী পরিচালক মো. জাবেদ সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জিটিসি’র চেয়ারম্যান ড. মো. সিরাজুল ইসলাম কাজী। অনুষ্ঠান শেষে প্রায় ১০ হাজার লোককে প্রীতিভোজ করানো হয়। খনি কম্পাউন্ডে জিটিসি ক্যাম্পাস ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গুড়গুড়ি মাদরাসা মাঠ, মৌলভীডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, পাকুড়িয়া মাজার শরীফ ও এতিমখানা মাঠে প্যান্ডেল তৈান করে লোকজনকে খাওয়ানো হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App