×

জাতীয়

চাপ সৃষ্টি করতেই হট্টগোল!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:১৪ এএম

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ পেছানোকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতির এজলাস কক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার নজিরবিহীন হট্টগোল করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এ সময় আদালতে উপস্থিত আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা প্রতিবাদ করতে গেলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি ধাক্কাধাক্কিতে গড়ায়। এর রেশ ধরে পুরো আদালত পাড়ায় এক ধরনের থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। উভয়পক্ষই আদালত প্রাঙ্গণে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করে। সিনিয়র আইনজীবীরা মনে করেন, আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এমন বিশৃঙ্খলার পথ বেছে নেন বিএনপিসমর্থক আইনজীবীরা।

খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির শুরুতে গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ক রিপোর্ট এখনো তৈরি করতে পারেনি। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো বাকি আছে। এ জন্য রিপোর্ট তৈরিতে আরো কয়েকদিন সময় প্রয়োজন। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। আগে তার জামিনের ব্যবস্থা করুন। শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মেডিকেল রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য সময় বাড়িয়ে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির জন্য আগামী ১২ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করে আদেশ দেন।

প্রধান বিচারপতির মৌখিক আদেশের পরই আদালতে অবস্থানরত বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা এ আদেশ ‘মানি না’ বলে উচ্চস্বরে চেঁচামেচি এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের স্লোগানের বিরোধিতা করলে শুরু হয় দুপক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা। যা ধাক্কাধাক্কি পর্যন্ত গড়ায়। এ অবস্থায় বিব্রত হয়ে সকাল ১০টা ৫ মিনিটের সময় আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করে বিচারপতিরা এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন।

পরে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালত কক্ষের ভেতরে অবস্থান কর্মসূচিতে যান এবং বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের এ ধরনের আচরণের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সদস্যরাও একই সময় আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে পাল্টা স্লোগান দিতে থাকেন। দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান আর স্লোগানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয় গোটা আদালত এলাকায়।

বিব্রত হয়ে এজলাস কক্ষ ত্যাগের পর বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে পুনরায় দিনের অন্যান্য মামলা পরিচালনায় এজলাসে বসেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ। তখনো বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা হট্টগোল অব্যাহত রাখেন। তাদের হট্টগোল ও স্লোগানের মুখে মামলা পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে নির্বাক বসে থাকেন বিচারপতিরা। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মুহুর্মুহু উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, আমরা ন্যায়বিচার চাই, খালেদা জিয়ার জামিন চাই। খালেদা জিয়ার মামলা ছাড়া আর কোনো মামলার শুনানি চলবে না। মাঝে মাঝে আইনজীবীরা তাদের সামনে থাকা টেবিল চাপড়াতে থাকেন।

এ সময় আদালতে উপস্থিত বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, বাড়াবাড়ির একটা সীমা আছে। আমরা আপিল বিভাগে এমন অবস্থা আগে কখনো দেখিনি। এমন আচরণ নজিরবিহীন। অর্ডার দেয়া হয়ে গেছে। এজলাসে বসে আদালতের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও খন্দকার মাহবুব হোসেন দাঁড়িয়ে শুনানি এগিয়ে আনার আরজি জানালে আদালত বলেন, আমরা আদেশ দিয়েছি। আর কোনো কথা শুনব না।

পরে আদালতে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এটা ‘ফ্যাসিবাদী আচরণ’। ইতিহাসে নজিরবিহীন হট্টগোল। এটা আদালত অবমাননার শামিল। আদালতের ওপর অশুভ চাপ সৃষ্টি করতেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তাদের এ ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে আশা করি প্রধান বিচারপতি ব্যবস্থা নেবেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এ ধরনের আচরণের মাধ্যমে তারা আইনের শাসনের প্রতি, বিচার বিভাগের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করলেন। তারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করেন না। তারা আইন-আদালত মানেন না। তারা সুপ্রিম কোর্টের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করেছেন। তাদের এ আচরণের তীব্র নিন্দা জানান তিনি।

খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি পেছানোর প্রতিবাদে সারাদেশের বারগুলোতে আগামী রবিবার থেকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এদিকে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। গতকাল সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্টের প্রতিটি প্রবেশপথ, আশপাশ ও আদালত চত্বরের অভ্যন্তরের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির পর আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের আদালত চত্বরে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়। এদিকে আদালতে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের হট্টগোল চলাকালে বাইরের সড়কে দলটির কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও কিছু নেতাকর্মী সমবেত হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। সেখান থেকে পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App