×

বিনোদন

চলে গেলেন চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:১১ পিএম

চলে গেলেন চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান

দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে ক্যামেরায় নিজের যাদু দেখিয়েছেন। আনন্দ অশ্রু, হাজার বছর ধরে, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেটুপুত্র কমলা, আগুনের পরশমণি’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমার চিত্রগ্রাহকের দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। বহু নন্দিত পরিচালকের সঙ্গে ছিল তার সখ্যতা। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ঘরে আর ফেরা হলো না তার। লাইট ক্যামেরা এ্যাকশন নিয়ে মেতে থাকা মানুষটি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ২৬মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত জনপ্রিয় চিত্রগাহক মাহফুজুর রহমান খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

হাসপাতাল থেকে মাহফুজুর রহমান খানের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার পুরান ঢাকার বাসায়। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর চকবাজারের শাহী মসজিদে তার প্রথম জানাজা হয়। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বিএফডিসিতে। সেখানে তাকে শ্রদ্ধা জানান চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন, শিল্পী ও তার ঘনিষ্ঠজনেরা। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে চিরশায়িত করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে। মাহফুজুর রহমান খানের মৃত্যুতে চলচ্চিত্রাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোক বার্তায় তিনি মাহফুজুর রহমান খানের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

অনেকদিন ধরে ডায়াবেটিস ও ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন মাহফুজুর রহমান খান। গত ২৫ নভেম্বর রাতের খাবার খাওয়ার সময় তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তার নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে। পরে তাকে রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। গত ৩০ নবেম্বর তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়লে চিকিৎসকদের পরামর্শে সেখান থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আর এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মাহফুজুর রহমান খান ৩ নভেম্বর শেষবার ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন। সেদিন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) যুগল পরিচালক অপূর্ব-রানার ‘উন্মাদ’ সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নেন তিনি। তার সঙ্গে এই পরিচালকদ্বয়ের প্রথম কাজ ছিল এটি। স্মৃতিচারণ করে কাবিরুল ইসলাম রানা বলেন, মাহফুজ ভাই অমায়িক একজন মানুষ ছিলেন। অনেক আগে থেকে তার সঙ্গে আমার কাজ করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সে সুযোগ প্রথমবারের মতো পেলাম ‘উন্মাদ’ সিনেমায়। কিন্তু বিধিবাম! কাজটা আর শেষ করা হলো না। তিনি আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে রানা বলেন, নি:সন্দেহে তিনি একজন বড় মাপের চিত্রগ্রাহক ছিলেন। তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অল্প কয়েকদিনে আমি অনেক কিছু শিখেছি। শুটিংয়ে কঠিন বিষয়গুলো তিনি খুব সুন্দর করে তুলে ধরতেন। তাকে হারানোর ক্ষতি অপূরণীয়। ‘উন্মাদ’ টিমের পক্ষ থেকে মাহফুজুর রহমান খানের জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে বলেও তিনি জানান।

১৯৪৯ সালের ১৯ মে পুরান ঢাকার হেকিম হাবিবুর রহমান রোডের এক বনেদি পরিবারে মাহফুজুর রহমান খান জন্মগ্রহণ করেন। পেশাদার চিত্রগ্রাহক হিসেবে তিনি ১৯৭২ সালে প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তিনি প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক আব্দুল লতিফ বাচ্চুর শিষ্য। তিনি তার অধীনে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে ১৯৭০ সালে ‘দর্প চূর্ণ’ ও ১৯৭১ সালে ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে তার প্রথম কাজ ১৯৭২ সালের আবুল বাশার চুন্নু পরিচালিত ‘কাঁচের স্বর্গ’। তিনি আলমগীর কবির, আলমগীর কুমকুম, হুমায়ূন আহমেদ, শিবলি সাদিকদের মতো চলচ্চিত্র পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করার আগে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন। ‘দাবি’ ও ‘চল ঘর বাঁধি’সহ বেশকিছু চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি স্বীকৃতি স্বরূপ দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আটবার বাচসাস এবং একবার বিশেষ বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছেন। তার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমা হচ্ছে-অভিযান (১৯৮৪), সহযাত্রী (১৯৮৭), পোকামাকড়ের ঘরবসতি (১৯৯৬), শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), দুই দুয়ারী (২০০০), হাজার বছর ধরে (২০০৫), আমার আছে জল (২০০৮), বৃত্তের বাইরে (২০০৯), ঘেটুপুত্র কমলা (২০১২) ও পদ্ম পাতার জল (২০১৫)।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App