×

শিক্ষা

ক্যাম্পাসে ২৬৯ প্রাণের উৎসব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:০৩ পিএম

ক্যাম্পাসে ২৬৯ প্রাণের উৎসব
ক্যাম্পাসে ২৬৯ প্রাণের উৎসব

প্রতিটি সকালের মত সাধারণ সকাল বলা যাচ্ছে না আজকের সকালকে।না কোনভাবেই অন্য দিনের সাদামাটা সকাল নয় এইটা। অগ্রহায়ণ এর কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল যতই প্রকৃতিতে রবির আলো ছড়াচ্ছে ততই যেন সাদা আর হলুদ রঙের ঘনঘটা ভীর জমাতে শুরু করলো সারা ক্যাম্পাস জুড়ে।সূর্যের আলো যতই দৃশ্যমান হচ্ছে ততই যেন পুরনো মানুষগুলো নতুন সাজে নতুন রূপে একটি জায়গায় এসে জড়ো হতে শুরু করলো।কুয়াশার সাথে ছেলেদের সাদা টি-শার্ট এবং প্রভাতে সূর্যের সোনালি রোদের সাথে মেয়েদের হলুদ রঙের উর্না যেন এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে।সাদা আর হলুদে পুরো ক্যাম্পাস যেন রঙিন হয়ে উঠেছে।

এভাবেই সবাই নানান সাজে সেজে জড়ো হতে শুরু করলো সেন্ট্রাল মাঠে।বেলা গড়াতেই কুয়াশা কাটতে শুরু করলো।কালো পিচের রাস্তায় কেমন যেন ঠক ঠক আওয়াজ শুনা যায়।ঘুরে তাকাতেই চোখে পড়লো ঘোঁড়ার গাড়ির আগমন।দোঁড়ে কে আগে উঠবে সেই গাড়িতে,শুরু হলো প্রতিযোগিতা। এভাবেই চলতে থাকলো কিছু সময়।অন্যপাশ থেকে গগন বিদারক ঢোলের আওয়াজ এবং বিভিন্ন রকম সুরের মেলা নিয়ে আগমন ব্যান্ড-পার্টির।শুরু হলো অতি পরিচিত মানুষগুলোর সাথে নাচ-গানে মেতে উঠার পালা।এর মধ্যেই দশ-পনের জন ছেলের হাত ভর্তি রঙ নিয়ে আগমন।শুরু হলো রঙের ছড়াছড়ি। কেউবা রঙ থেকে বাঁচার জন্য ছুটে পালাচ্ছে।চাইলেই কি বাঁচা যায়?দৌড়ে তাকে দুই-তিনজন মিলে রঙের আলপনা একে দিচ্ছে তার সারা শরীরে।এভাবেই কেউ ব্যস্ত ঘোঁড়ার গাড়ি চড়া নিয়ে কেউ বা আবার রঙ মাখামাখিতে।কেউবা আবার ঢোলের তালে নাচতে ব্যস্ত।কেউ আবার প্রিয় মানুষের হাত ধরে ফাঁকা বারান্দায় ব্যস্ত একান্ত আলাপচারিতায়।এভাবেই যেন ২৬৯ টা প্রান আজ নতুন উদ্দীপনা পেয়েছে নিজেদের মাঝে।

বেলা গড়াতে গড়তে সুর্য যখন পূর্ব আকাশ থেকে পশ্চিম আকাশে ঝুঁকে গেছে হঠাৎ করে স্বর্গের রূপ ধারণ করা এই ক্যাম্পাস কেমন যেন তার রূপ বদলাতে শুরু করলো।কেমন যেন সে একটি জায়গায় এসে সব থামিয়ে দিতে চাচ্ছে।হঠাৎ একটি ছেলে তার প্রিয় বন্ধুটির গলা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগল "তুই আমার বন্ধু নয় ভাই হয়ে গেছিস,ভাই"। সবাই কেমন যেন চমকে গিয়ে থমকে দাঁড়াল।কিছু বুঝে উঠার আগেই পুরো জায়গায় কান্নার রুল পড়ে গেল।প্রিয় বন্ধুদের সেই পরিচিত মুখগুলো ছেড়ে যেতে হবে এইটা ভেবেই হয়ত আর সহ্য হচ্ছিলো না তাদের।হয়ত আজ তাদের শেষ মিলন মেলা এইটা ভেবেই তারা এখন বেশি কষ্ট পেতে শুরু করলো।একটু আগেও যেটা ছিল স্বপ্নপুরী মুহুর্তের মধ্য তা যেন মৃত্যুপুরীর রূপ ধারণ করল।ঢোলের সেই গগন বিদারক আওয়াজ কেমন যেন আর শব্দ করতে চাইছে না,ঘোঁড়াগুলোও কেমন যেন পথচলা বন্ধ করে দিয়েছে।হয়ত তাদেরও এই বন্ধন ছিন্ন হওয়া ব্যথিত করছে খুব করে।ক্লাসের বারান্দায় খুব যতনে হাত ধরে থাকা প্রিয় মানুষ দুটিও কেমন যেন চুপ হয়ে গেছে। শুধু তাকিয়ে আছে নিজেদের দিকে।হয়ত তাদের মুখের ভাষা ফুরিয়ে গেছে কিন্তু তাদের চোখের ভাষা কেমন যেন ফুরাতে চাচ্ছে না।ছেঁড়ে যেতে চাচ্ছে না একে অপরকে।

এভাবেই শেষ হলো শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-২০১৫ সেশন ভর্তি হওয়া কৃষি অনুষদের ৭৪ তম ব্যাচ "অনিকেত-৭৪" এর র‌্যাগ ডে।সেই প্রথম যেদিন ক্যাম্পাসে এসেছিল-কেউ কাউকে চিনে না,জানে না।নেই কোন মায়া,ভালোবাসা,স্মৃতি।কিন্তু কয়েকটি বছরের ব্যবধানেই কেমন যেন সবাই একটি মায়ায় আবদ্ধ হয়ে গেছে।একটুও অপরিচিত লাগছে না কাউকে।বরং মনে হচ্ছে অতি আপন প্রত্যেকেই।মনে হচ্ছে শত স্মৃতি জড়িয়ে আছে প্রতিটি মানুষের সাথে,ক্যাম্পাসের প্রতি ইঞ্চি মাটির সাথে।

"অনিকেত-৭৪" ব্যাচের প্রত্যেকেই স্নাতক শেষ করে এখন ব্যস্ত দেশমার্তৃকার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে।দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিজেকে আসিন করে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে। তাই এখন তাদের বিদায় মুহুর্ত চলছে এই প্রিয় ক্যাম্পাসে।তাই আপন মানুষগুলোকে শেষবারের মত একসাথে করার প্রয়াসেই,২৬৯ টি আত্নাকে একটি আত্নায় রূপান্তর করার প্রয়াসেই আয়োজন করা হয়েছে এই "অনিকেত-৭৪" ব্যাচের র‌্যাগ ডের। দিন শেষে ক্যাম্পাস জিবনের এত হাসি-কান্না এবং এতদিনের সকল স্মৃতি আর শেষ দিনের এই হাসি-কান্না কে সম্বল করে মৃত্যুর যন্ত্রণা বুকে চাপা দিয়ে প্রত্যেকে তার নিজ ঠিকানায় ফিরে গেল নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার পণ নিয়ে।দেশমার্তৃকার কল্যানে নিজেকে নিয়োজিত করার পণ নিয়ে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর সুখ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার পণ নিয়ে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App