×

জাতীয়

স্বাধীনতাবিরোধীদের কবর সংসদ থেকে সরবে কবে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:০৪ এএম

স্বাধীনতাবিরোধীদের কবর সংসদ থেকে সরবে কবে?

কথা ছিল মূল নকশা এলেই শুরু হবে বাস্তবায়ন কাজ। সরিয়ে ফেলা হবে নকশাবহির্ভূত সব স্থাপনা। সরে যাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের কবর। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কাইভ থেকে সংগ্রহ করা হলো জাতীয় সংসদের ‘মূল নকশা’। নকশা আনার তিন বছর পরও অনুসন্ধান আর পর্যালোচনায় বাক্সবন্দি হয়ে আছে সব ‘পরিকল্পনা’। ফলে সংসদ ভবন চত্বর থেকে রাজাকারদের কবর সরানোসহ পুরো নকশা বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে সংশয়। যদিও সরকারপক্ষের দাবি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আগেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হবে।

বিখ্যাত স্থপতি লুই কানের নকশার বাইরেও সংসদ ভবন এলাকায় কিছু স্থাপনা গড়ে উঠে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার দুদিন পর তার কবর সেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়। ক্রিসেন্ট লেকে ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। চন্দ্রিমা উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জিয়া উদ্যান। একইভাবে ওই এলাকায় এরই মধ্যে ১০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত আটজনকে সংসদ ভবন এলাকায় কবর দেয়া হয়। মানিক মিয়া এভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে পাঁচ বিঘা জমিতে ‘জাতীয় কবরস্থান’ নাম দিয়ে তাদের সমাহিত করা হয়।

এদের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজুর রহমান, খান-এ-সবুর এবং মশিউর রহমান জাদু মিয়ার কবরও রয়েছে। এ ছাড়া নকশা লঙ্ঘন করে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনসহ আরও সাতটি স্থাপনা ও বাসভবন নির্মাণ করা হয়েছে সংসদ ভবন এলাকায়। শিগগিরই লুই আই কানের মূল নকশা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের পূর্ণাঙ্গ নকশা বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করছি।

জাতীয় সংসদের মূল নকশা বাস্তবায়ন এবং রাজাকারদের কবর সরানোর জন্য দীর্ঘ আড়াই যুগ ধরে আন্দোলন করে আসছে একাত্তরের ঘাতক-দালাল-নির্মূল কমিটিসহ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বেশ কয়েকটি সংগঠন। লুই আই কানের প্রণীত নকশায় জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে কোনো কবরের চিহ্ন ছিল না। অথচ বন্দুকের নল দিয়ে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের কবরসহ রাজাকারদের কবরও এখানে নির্মাণ করা হয়েছে।

এতে জাতীয় সংসদ ভবনের নান্দনিকতাই নষ্ট হয়নি, বরং গণতন্ত্র চর্চার সূতিকাগার সংসদ ভবনটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পরিকল্পিতভাবে লুই কানের মূল নকশার বাইরে গিয়ে সংসদ ভবন সীমানার মধ্যে সম্মেলন কেন্দ্র, মাজার, সমাধি, উচ্চ পদস্থদের বাসভবন ইত্যাদি নির্মাণ করে পৃথিবীর অন্যতম একটি নান্দনিক স্থাপত্য নিদর্শনকে দফায় দফায় ক্ষতবিক্ষত করেছে কিন্তু দাবি উপেক্ষিত হচ্ছে বারবার।

এদিকে ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর মূল নকশার কপি সচিবালয়ে এসে পৌঁছায়। কিন্তু তিন বছরেও সিকিভাগ কাজ না এগোনোর কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষকরা। এ ব্যাপারে একাত্তরের ঘাতক-দালাল-নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ভোরের কাগজকে বলেন, সংসদ ভবন চত্বরে খান-এ-সবুর, শাহ আজিজুর রহমান, মশিউর রহমান জাদু মিয়ার কবর থাকে কি করে? মৃতের প্রতি কোনো বিদ্বেষ নেই। থাকতে পারে না। কিন্তু তাদের মর্যাদা দিয়ে সংসদ ভবনে কবর দেয়া কেন? তাহলে তো আমাদের জাতীয় বীররাও সংসদ ভবনে তাদের কবর দাবি করতে পারেন।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন আমাদের জাতীয় চার নেতার কবর সংসদ ভবনে নেই? কেন বঙ্গবন্ধুর সমাধি টুঙ্গিপাড়ায়। সংসদ ভবন তো কোনো কবরস্থান নয়। পৃথিবীর কোথাও এর কোনো নজির নেই। এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা। রাজাকারদের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য করা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার জন্য খুব সচেতনভাবেই এই কাজগুলো করা হয়েছে। এসব সরানোর কথা বলছি। দীর্ঘদিন আড়াই যুগ ধরে আমরা আন্দোলন করছি।

সংসদ ভবন চত্বরে রাজাকারদের কবর থাকা সাংঘর্ষিকই শুধু নয় অন্যায়ও, অনৈতিক এবং অপরাধও বটে মন্তব্য করে ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিংয়ের প্রধান ডা. এম এ হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, সময় নষ্ট না করে সংসদ ভবন চত্বর রাজাকারের কবর মুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে এটি সবার প্রত্যাশা। কুখ্যাত রাজাকারদের কবরগুলো সরিয়ে আমাদের মহান জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরকে রাজাকারমুক্ত করা হোক।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আগেই সংসদ ভবন চত্বর থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের কবর সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, সংসদ ভবন চত্বরে রাজাকারদের কবর আমাদের জন্য জাতীয় লজ্জা। এত দিনেও আমরা পারিনি এই দায় আমাদের। আশা করছি, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উৎসব শুরুর আগেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App